Advertisement
১১ মে ২০২৪

মেট্রোকে জমি দেওয়ার অপেক্ষায় বারাসত, শুরুই হল না প্রক্রিয়া

রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেছেন, জমি-জটের কারণে বারাসতে, ব্যারাকপুরে মেট্রো রেল হবে না। অনিশ্চিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোও। একই মত রেল মন্ত্রকেরও। তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ভোটের জন্যই এ সব কথা বলেছেন অধীরবাবু। কিন্তু যে প্রকল্পগুলি এক সময়ে আশার আলো জ্বেলেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে, তাঁরা কী বলছেন? দমদম-বারাসত মেট্রো প্রকল্পের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তা শুনলেন অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য।

এটাই মেট্রোর প্রস্তাবিত পথ, দেখাচ্ছেন নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দারা।  ছবি: সুদীপ ঘোষ।

এটাই মেট্রোর প্রস্তাবিত পথ, দেখাচ্ছেন নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দারা। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:৩১
Share: Save:

ঠিক এক বছর কেটে গেল। ক্ষতিপূরণের ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করতে এলেন না কেউ।

অথচ, এই প্যাকেজ ঘোষণার জন্য সময় চাওয়া হয়েছিল মাত্র সাত দিন। বারাসতের জীবিকা-বাসস্থান রক্ষা কমিটির সজল দে ও ভানু গুণ-রা বুঝে গিয়েছেন, এই প্যাকেজ নিয়ে আপাতত তাঁদের সঙ্গে কেউ কথা বলবেন না।

বারাসতের মেট্রো নিয়ে অধীর চৌধুরীর বক্তব্যের পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। শুক্রবার সকালে এই খবর পড়ার পরে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনাও করেছেন কমিটির লোকেরা। এ দিন দুপুরে কমিটির আহ্বায়ক সজল দে বলেন, “গত বছর ৩ এপ্রিল জেলাশাসকের দফতরে রেল দফতর-সহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছিল। সেখানে আমরা বলেছিলাম, বনগাঁ শাখার ট্রেনে চড়া যায় না। রোজই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। এই অবস্থায় বারাসত পর্যন্ত মেট্রো হলে আমরা বেঁচে যাব। এর জন্য বাড়ি, জমি ছেড়ে দিতে আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের শুধু জানানো হোক, ক্ষতিপূরণের প্যাকেজটা কী হবে?” কমিটির আর এক আহ্বায়ক ভানু গুণ বলেন, “জেলাশাসক বলেছিলেন, সাত দিনের মধ্যেই প্যাকেজ জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বছর ঘুরে গেল। কেউ তো কোনও কথাই আমাদের জানালেন না।”

শুধু এই কমিটির লোকেরাই নন, একই কথা বলছেন নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম, হৃদয়পুরের প্রকল্প এলাকার মানুষও। সবাই চাইছেন, মেট্রোর কাজ দ্রুত শেষ হোক। কেউ বলছেন, ক্ষতিপূরণ দিলেই সরে যাব। এ সব যে নিছক কথার কথা নয়, তা বোঝাতে এ দিন একরাশ কাগজও দেখালেন তাঁরা। রেল এবং রাজ্যের কাছে দেওয়া সেই সব স্মারকলিপির মোদ্দা কথা, ‘‘আমরা চাই মেট্রো হোক। আমাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও হোক।’’

নোয়াপাড়া থেকে বারাসত পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রো প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল দু’হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। রেল সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। এ দিন দমদম থেকে বারাসত পর্যন্ত ওই প্রস্তাবিত পথে ঘুরে জানা গেল, মেট্রো রেলের জন্য মোট ৫০০টির মতো বৈধ (দলিল, পরচা রয়েছে এমন) স্থায়ী বাড়ি, ৫০টির মতো স্থায়ী দোকান, হাজার দু’য়েক বস্তির ঘর এবং ৫৫০টির মতো জবরদখল দোকান ভাঙা পড়বে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি দোকান ও বস্তি ভাঙা পড়বে বারাসত-মধ্যমগ্রামের মধ্যে। নিউ ব্যারাকপুরে নোয়াই খালের পাশ বরাবর ভাঙা পড়বে ১৮০টির মতো বাড়ি। নিউ ব্যারাকপুর ‘ভিটে রক্ষা কমিটি’-র সুভাষ হালদার এ দিন বলেন, “২০১৩ সালের ১৯ মে আমরা জমি অধিগ্রহণের নোটিস পাই। আমরা বলি, নোয়াই খালের পাশ দিয়ে না গিয়ে মেট্রো যদি গড়িয়ার মতো নোয়াই খালের উপর দিয়ে যায়, তা হলেই কোনও বাড়ি ভাঙা পড়বে না।”

ওই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা বীরেন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, “আমাদের নিজেদের স্বার্থেই আমরা মেট্রো চাই। কিন্তু এই বয়সে আমাদের উদ্বাস্তু না করে দিয়ে সহজ পথে সেটা করা যায়।” শিশির নন্দী নামের এক বৃদ্ধ বলেন, “নোয়াইয়ের উপর দিয়ে মাত্র দেড় কিলোমিটার পথে মেট্রো হওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় দরবারও করেছি। ওরা সেটা বুঝেছেনও। কিন্তু কাজ হল কই?”

বস্তুত এ রকম জমি সমস্যা যতটা পারা যায় এড়ানোর জন্যই ভূগর্ভের বদলে মাটির উপর দিয়েই মেট্রোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই মতো রেলের প্রস্তাবিত মেট্রোপথের নকশায় দেখা যাচ্ছে, কিছুটা পথ মাটির তলা দিয়ে গেলেও বেশির ভাগটাই যাচ্ছিল মাটির উপর দিয়ে। নকশা অনুযায়ী, দমদম স্টেশন থেকে নোয়াপাড়া হয়ে দমদম ক্যান্টনমেন্ট হয়ে জেসপের সামনে দিয়ে চক্ররেলের পথেই মাটির উপর দিয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাওয়ার কথা। বিমানবন্দরের জন্য সেখান থেকে যশোহর রোড ধরে বিটি কলেজ মোড় পর্যন্ত যাচ্ছিল মাটির নীচ দিয়ে। তার পরে ফের মাটির উপর দিয়ে নোয়াই খালের পাশ দিয়ে মধ্যমগ্রাম, হৃদয়পুর হয়ে শেষ গন্তব্য হওয়ার কথা বারাসত। বারাসত থেকে বামনগাছির দিকে তৈরি হচ্ছিল কারশেড। এর মধ্যে অনেকটাই কাজ এগিয়েছে। যেমন, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, বারাসতের কিছু এলাকায় মেট্রোর কাজ চলছে পুরোদমে। কোথাও কাজ থমকে বহু দিন ধরে। কোথাও আবার বিশাল গর্ত, কোথাও আবার যে স্তম্ভের উপর দিয়ে মেট্রো যাবে, তার কাজ হয়ে গিয়েছে অনেকটাই। বারাসত স্টেশন লাগোয়া এলাকায় চার দিক ঘিরে পেল্লায় যন্ত্র এনে কাজ চলছিল। সেই সব যন্ত্র ফিরে গিয়েছে। ঘেরা জায়গা ভেঙে, পড়ে থাকা কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে চলছে যাতায়াত। মাটিতে পোঁতা লোহার রড বেঁকিয়েও রাস্তা করার চেষ্টা হয়েছে। বারাসতের বাসিন্দা তপন বসু বলেন, “এত দিন কাজ চলল, কোটি কোটি টাকা খরচ হলসব নষ্ট হবে! মেট্রো না হলে কী কাজে লাগবে এ সব!”

ভোটের আগে ফেস টু ফেস

শহুরে এলাকায় প্রচারে এই কায়দা শুরু হয়েছে আগেই। সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিতিকে এ বার গ্রামীণ কেন্দ্রগুলিতেও ছড়িয়ে দিতে চাইছে সিপিএম। ভোটের আগে ফেসবুক-বন্ধুদের সঙ্গে ‘ফেস টু ফেস’ বসতে চাইছেন সিপিএম প্রার্থীরা। উদ্দেশ্য, ওয়েব জগতের পরিচিতদের সঙ্গে মুখোমুখি মত বিনিময় করা। তাঁদের কাছ থেকে প্রস্তাব শোনা। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই আগামী ১৩ এপ্রিল দিঘায় ফেসবুক-বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসছেন কাঁথির সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহ। একই ভাবে বাঁকুড়ার সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়া বাঁকুড়াতেই ওই আসরে বসবেন কাল, রবিবার। সঙ্গে থাকবেন বাঁকুড়ার সিপিএম জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রও। একই দিনে শহুরে কেন্দ্র ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি ফেসবুক-বন্ধুদের কথা শুনবেন নৈহাটির একটি প্রেক্ষাগৃহে। এই ধরনের আসরের জন্য সচরাচর ছুটির দিনকেই বেছে নিচ্ছেন প্রার্থীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “মুখোমুখি বসার এই প্রস্তাব এসেছিল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের দিক থেকে। আমাদেরও মনে হয়েছে, যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছনোই যখন আমাদের লক্ষ্য, ওয়েব-বান্ধবদের সঙ্গে সরাসরি কথা বললে তো ভালই! সমালোচনা এবং প্রস্তাব, দুই-ই শোনা যাবে।”

প্রচার করেন, চুলও বাঁধেন। সবিস্তার...

চারমূর্তি। সবিস্তার...

পথে প্রচারে। সবিস্তার...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arunakkha metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE