বুধবার বালিগঞ্জের বাড়িতে মুনমুন সেন। ছবি: সুদীপ আচার্য।
মায়ের মৃত্যুর পরে একাকীত্ব গ্রাস করেছিল তাঁকে। লোকসভা নির্বাচনের ব্যস্ততাই তা থেকে বেরিয়ে আসার দরজা খুলে দিল।
বলছেন মুনমুন সেন।
অসুস্থতার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে সুচিত্রা সেনের চলে যাওয়ার স্মৃতি বাঙালির মনে এখনও টাটকা। তার পরে মুনমুন এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে মায়ের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন রাইমাও। তৃণমূল নেত্রী তাঁকে বাঁকুড়া কেন্দ্রে দাঁড় করানোয় শোকের আবহ থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পারবেন আশা সুচিত্রা-তনয়ার।
“মায়ের মৃত্যুর পরে যে একাকীত্ব আমাকে প্রচণ্ড ভাবে গ্রাস করেছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পেলাম। মানুষকে সেবা করারও একটা বিরাট সুযোগ পেলাম। এ জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই” বুধবার সন্ধ্যায় ফোনে বললেন মুনমুন।
দুপুরে কালীঘাট থেকে খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই বাঁকুড়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে জোর চর্চা। মুনমুনকে নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবে আমজনতার কৌতূহল তো রয়েছেই। হেভিওয়েট সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়ার সঙ্গে তিনি এঁটে উঠতে পারবেন কি না, সেই তরজাও রয়েছে। লোকসভায় সিপিএমের দলনেতা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাসুদেববাবু এই বাঁকুড়া কেন্দ্রেই ১৯৮০ সাল থেকে টানা ন’বার জিতে এসেছেন। হারের রেকর্ড নেই। গত বার কংগ্রেস-তৃণমূল জোটপ্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হেরেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
যদিও রাজ্যে ক্ষমতাবদলের পরে বাঁকুড়ায় বামেদের যা দশা, প্রবীণ সিপিএম নেতা রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবেন কি না তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
আপাতত মুনমুন কবে প্রচারে আসবেন তা নিয়েই জল্পনা চলছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “মুনমুন যখন বাঁকুড়ার রাস্তায় প্রচারে বেরোবেন তখন তাঁকে দেখতে ভিড় উপচে পড়বে।” তৃণমূল ভবন থেকে এখনও কোনও খবর আসেনি। আর কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার এই ‘দূরত্ব’টাই তৃণমূলের একটা মহলকে ভাবাচ্ছে। এঁরা চেয়েছিলেন, জেলা থেকেই কাউকে প্রার্থী করা হোক, যাতে সাংসদকে আপদে-বিপদে হাতের কাছে পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, “উনি জিতলেও তো বেশির ভাগ সময়ে কলকাতাতেই থাকবেন। আমরা কি দাবি-দাওয়া নিয়ে কাছে ঘেঁষতে পারব?” আবার অন্য পক্ষের দাবি, বাসুদেববাবুর মতো প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এমন ‘স্টার’ প্রার্থীই দরকার ছিল।
বাসুদেববাবু নিজে কী বলছেন?
প্রবীণ সিপিএম নেতার মাপা মন্তব্য, “আমার কাছে সব প্রার্থীই সমান। লড়াইটা নীতির ও রাজনীতির। তবে এটা আমার সৌভাগ্য বা দুভার্গ্য যাই হোক, প্রতি বারই নতুন-নতুন প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হয়েছে। এক বার যাঁর সঙ্গে লড়াই হয়েছে, পরের বার তাঁকে আর প্রার্থী হিসেবে পাইনি।” দলের জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “মুনমুন আমাদের সম্মানীয় অতিথি হতে পারেন, কিন্তু জনপ্রতিনিধি কখনওই নয়।”
মুনমুন নিজে কিন্তু যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাঁর কথায়, “যাত্রা করে আগেই গ্রামবাংলার মানুষের কাছে পৌঁছেছি। নতুন করে ব্যাগ গোছাতে আমি তৈরি।... আমি আসছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy