Advertisement
E-Paper

মানবাধিকার মঞ্চে তেতো বড়ি গিললেন নপরাজিত

দিনটা ছিল জাতীয় মানবাধিকার দিবস। আর সেই দিনে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠল। বুধবার এক সভায় প্রশ্নটা তুললেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের পূর্বতন চেয়ারম্যান। অন্য দিকে সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির রাজ্যপালও বুঝিয়ে দিলেন, রাজ্য কমিশন বর্তমানে যে ভাবে চলছে, তা তাঁর মনঃপুত নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
জাতীয় মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। শিশির মঞ্চে। —নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। শিশির মঞ্চে। —নিজস্ব চিত্র।

দিনটা ছিল জাতীয় মানবাধিকার দিবস। আর সেই দিনে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠল। বুধবার এক সভায় প্রশ্নটা তুললেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের পূর্বতন চেয়ারম্যান। অন্য দিকে সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির রাজ্যপালও বুঝিয়ে দিলেন, রাজ্য কমিশন বর্তমানে যে ভাবে চলছে, তা তাঁর মনঃপুত নয়। রাজ্যপালের সঙ্গে একই মঞ্চে বসা কমিশনের অস্থায়ী চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অবশ্য এই সব ‘অস্বস্তিকর’ মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় গত জানুয়ারিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দেওয়া ইস্তক কমিশন কার্যত অকর্মণ্য হয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। বহু ভুক্তভোগীর আক্ষেপ, যে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ, তারই প্রাক্তন কর্তাকে কমিশনের মাথায় বসানোয় আসল উদ্দেশ্য পণ্ড হতে বসেছে। এমনকী, রাজ্য কমিশনের কাছে সাহায্য না-পেয়ে বিভিন্ন নির্যাতিতের ৫২ জন আত্মীয়-পরিজন সোমবার দিল্লি গিয়ে খোদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে নালিশ জানিয়ে এসেছেন।

এবং ওঁদের অভিযোগ যে নিতান্ত অসাড় নয়, এ দিন রাজ্যপালের কথায় তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। জাতীয় মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর মন্তব্য, “দেখতে হবে, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের উপরে মানুষের আস্থা যেন কমে না যায়।” আস্থা ফেরানোর উপায়ও বাতলেছেন কেশরী। দীর্ঘ দিন কমিশনের স্থায়ী চেয়ারম্যান না-থাকার প্রসঙ্গটি তুলে বলেছেন, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চেয়ারম্যান হন সুপ্রিম কোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। রাজ্য কমিশনের ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি যেমন চেয়ারম্যান হতে পারেন, তেমন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিও পারেন। কামনা করি, রাজ্য সরকার মানবাধিকার কমিশনে দ্রুত এক জন স্থায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন।”

প্রায় ফাঁকা প্রেক্ষাগৃহে রাজ্যপালের বক্তৃতার সময়ে মঞ্চে ভাবলেশহীন মুখেই বসেছিলেন নপরাজিতবাবু। পরে বলতে উঠে তিনি প্রসঙ্গটির ধার-কাছ দিয়েও যাননি। বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি প্রিয় ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পে রাজ্য কত ভাল কাজ করেছে, তার খতিয়ান দেন। কেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের উপরে মানুষের আস্থা কমছে, কেনই বা মানুষ বিচার চাইতে দিল্লিতে ছুটছেন, তার ব্যাখ্যা মেলেনি অস্থায়ী চেয়ারম্যানের বক্তৃতায়। অনুষ্ঠানের পরে রাজ্যপালের মন্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নপরাজিতবাবুর জবাব, “রাজ্যপাল যা বলেছেন, তা নিয়ে কী বলব!” এনআরএসে হবু ডাক্তারদের হস্টেলে গণপিটুনিতে মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু নিয়ে কমিশনের ‘নীরবতা’র কারণ জানতে চাইলে নপরাজিতবাবু বলেন, “আমাদের ওয়েবসাইটে দেখুন।”

যদিও এনআরএস-কাণ্ডে ওঁদের পদক্ষেপের কোনও প্রমাণ ওয়েবসাইট ঘেঁটে মেলেনি। বস্তুত নপরাজিতবাবু কমিশনকে ‘ভাল কাজের’ জন্য ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেও প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোকবাবু কিন্তু উল্টো কথা বলেছেন। রাজ্যে বিচার না-পেয়ে দিল্লির দরবারে ধর্নার প্রসঙ্গ টেনে এ দিন অন্য এক সভায় তিনি বলেন, “রাজ্যে মানবাধিকার কমিশনের অস্তিত্বই তো দেখতে পাচ্ছি না! এর কী প্রয়োজন, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না!”

কেন এ হেন মন্তব্য?

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, এখন রাজ্যে অপরাধ ঘটলে কোনও কোনও পদাধিকারী অপরাধীদের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। নাম না-করে পৌনে তিন বছরের পুরনো পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ড থেকে শুরু করে ভাঙড়ে শাসকদলের নেতা (বর্তমানে বহিষ্কৃত) আরাবুল ইসলামের দাপটকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি তুলে ধরেন। “কখনও পুলিশ তদন্ত করার আগেই প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা ‘সাজানো ঘটনা’র তকমা দিচ্ছেন! কখনও স্বামীকে খুনের অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়ে স্ত্রী দেখছেন, খুনের পিছনে যাঁর হাত, শাসকদলের সেই নেতাই ওখানে বসে পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন, কী অভিযোগ লিখতে হবে!” আক্ষেপ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, “আইন, পুলিশ, মানবাধিকার--- এ রাজ্যে সব গেল কোথায়?”

এমতাবস্থায় অন্যায়ের প্রতিকার পেতে হলে রাস্তায় নেমে আন্দোলনই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর কথায়, “মানবাধিকার মানুষ অর্জন করেছে। তা কোনও সরকার বা কমিশন সৃষ্টি করেনি। অনেক সময়ে আদালতেও দেরি হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তাই পথে নামাটা স্বাভাবিক।” বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, বর্তমান রাজ্য সরকারের হাতে নিপীড়িতেরা বাধ্য হয়েই জোট বেঁধে পথে নেমেছেন।

নির্যাতিতদের সংশ্লিষ্ট সংগঠন ‘আমরা আক্রান্ত’র আহ্বায়ক অম্বিকেশ মহাপাত্র প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে দিল্লি গিয়েছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কার্টুন-কাণ্ডে আমাকে গ্রেফতারের পরে তদানীন্তন রাজ্য মানবাধিকার কমিশন নিজে থেকে তদন্ত করে পুলিশকে শাস্তিদানের সুপারিশ করে। কিন্তু এখন যাঁরা নির্যাতিত হচ্ছেন, তাঁদের কোথাও যাওয়ার নেই! রাজ্যে মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশনের কার্যত অস্তিত্ব নেই!”

তাই বাধ্য হয়েই ওঁদের দিল্লির দরজায় কড়া নাড়তে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অম্বিকেশবাবু।

human right commission westbengal naparajit mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy