Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মঙ্গলকোটে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করছিল ইউসুফ

ধু-ধু মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে নির্মীয়মাণ একটা বাড়ি। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইট-পাথর থেকে স্পষ্ট, কাজ চলেছে দিন কয়েক আগেও। বাড়ির পাশে পুকুর কাটা, এক দিকে নানা রকম সব্জি বাগান দেখে মনে হতেই পারে, বাড়িটাতে যারা থাকবে ভেবেছিল, তারা এলাকাটা চট করে ছাড়তে চায়নি। বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানা এলাকার নিগন গ্রামে এই পরিকল্পনা যারা কষেছিল, তাদের অন্যতম (খাগড়াগড়-কাণ্ডেরও অন্যতম চাঁই) ইউসুফ শেখকে খুঁজছে পুলিশ।

খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে এনআইএ অফিসারেরা। ছবি: দেবাশিস রায়

খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে এনআইএ অফিসারেরা। ছবি: দেবাশিস রায়

সৌমেন দত্ত
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০২
Share: Save:

ধু-ধু মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে নির্মীয়মাণ একটা বাড়ি। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইট-পাথর থেকে স্পষ্ট, কাজ চলেছে দিন কয়েক আগেও। বাড়ির পাশে পুকুর কাটা, এক দিকে নানা রকম সব্জি বাগান দেখে মনে হতেই পারে, বাড়িটাতে যারা থাকবে ভেবেছিল, তারা এলাকাটা চট করে ছাড়তে চায়নি।

বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানা এলাকার নিগন গ্রামে এই পরিকল্পনা যারা কষেছিল, তাদের অন্যতম (খাগড়াগড়-কাণ্ডেরও অন্যতম চাঁই) ইউসুফ শেখকে খুঁজছে পুলিশ। শিমুলিয়ার যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রবিবার এনআইএ-র দল তদন্তে যায়, সেখান থেকে কিলোমিটার দু’য়েক দূরেই এই নিগন গ্রাম। শিমুলিয়ার ওই প্রতিষ্ঠানে জেহাদি কার্যকলাপের প্রশিক্ষণ চলত বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। নিগনে ২৫ কাঠা জমির উপরে বড় আকারে তেমনই কোনও প্রতিষ্ঠান গড়ার ছক ইউসুফদের ছিল বলে অনুমান তাঁদের।

শিমুলিয়ার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছিল সেখানকার বাসিন্দা বোরহান শেখের জমিতে। এই বোরহান ইউসুফের সঙ্গী ছিল বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, শিমুলিয়ায় ইউসুফ জঙ্গি হওয়ার নানা পাঠ দিত। খাগড়গড় বিস্ফোরণে ধৃত আলিমা বিবি ও রাজিয়া বিবিও সেখানে প্রশিক্ষণ দিতে যেত।

নিগনে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হচ্ছিল জনবসতি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫ কাঠা জমিটির মালিক ছিল শিমুলিয়ার পাশের গ্রাম কৃষ্ণবাটির একটি পরিবার। তার এক সদস্য বলেন, “আমরা তিন ভাই। বড় দাদা মারা যাওয়ার পরে আমরা দু’জন বাড়ি থেকে দূরের ওই জমিটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই। ফেব্রুয়ারিতে বোরহান ও ইউসুফ এসে জমিটি কিনতে চায়।” তিনি জানান, আট লক্ষ টাকা দাম স্থির হয়। মঙ্গলকোটের নতুনহাটে রেজিস্ট্রি হয়। দাম নগদে দিয়েছিল ইউসুফেরা।

এই গাড়ি করেই ইউসুফ ঘোরাফেরা করত বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

স্থানীয় সূত্রের খবর, ঈদ-উল-ফিতরের পরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে সব রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন, তাঁরা বাইরে থেকে এসেছিলেন। ইউসুফ এসে কাজের তদারকি করত। তার সঙ্গে মাঝে-মধ্যে হিন্দিভাষী কিছু লোকও আসত। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরেই উধাও সেই রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকেরা। বোরহান ও ইউসুফও তার পর থেকে পলাতক।

নির্মীয়মাণ বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম দিকে প্রায় ১২ ফুট বাই ১৫ ফুট মাপের চারটি ঘর তৈরি হয়েছে। পূর্ব দিকে ফুট দশেক উঁচু পঞ্চাশ মিটারের টানা দেওয়াল। দক্ষিণ দিকে লম্বা রান্নাঘর। এখনও ছাদ ঢালাই হয়নি। গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান, বাড়ি তৈরির পিছনে এখনও পর্যন্ত দশ-বারো লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পুরো তৈরি হতে অন্তত ৩০-৪০ লক্ষ টাকা খরচ হতো। খাগড়াগড়ের ঘটনার পর থেকে আবার শিমুলিয়ার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির সামনে একটি ঢাকা দেওয়া গাড়ি পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই গাড়িতে চড়েই ইউসুফ ও বোরহান ঘোরাফেরা করত। তাতে চড়ে তারা বেলডাঙা, করিমপুরেও যাতায়াত করত বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা গাড়িটির নম্বর প্লেট থেকে সেটির মালিকের নাম জানার চেষ্টা করছেন। বোরহানের স্ত্রী শিমুলিয়ার এই মাদ্রাসাতেই থাকত। তার সঙ্গে এলাকার কারও পরিচয় ছিল না বলে গ্রামবাসীরা জানান। নিগনে নির্মীয়মাণ বাড়ি ও শিমুলিয়ায় পাওয়া গাড়ি সম্পর্কে সব তথ্য এনআইএ-র কর্তাদের দেওয়া হয়েছে বলে বর্ধমান পুলিশের কর্তারা জানান।

বর্ধমানের হাটুদেওয়ানের যে বাড়ি থেকে ভাড়াটেরা খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরেই উধাও হয়ে গিয়েছেন, এ দিন সেই বাড়িতেও যায় পুলিশ। নীচের তলায় যেখানে দুই পুরুষ ও দুই মহিলা থাকত, সেখানে তল্লাশি চালানো হয়। সামান্য কিছু জিনিসপত্র মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE