Advertisement
E-Paper

মনোনয়ন জমায় বাহন অ্যাম্বুল্যান্স

দক্ষিণের ‘রোগ’ ক্রমেই সংক্রামিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ নতুন ঘটনা নয়। বৃহস্পতিবার ছাত্র-সংঘর্ষের সেই সংক্রমণ ছড়াল বাগডোগরা থেকে মালদহ, শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে কোথাও চালাতে হল লাঠি। কোথাও বা ছুড়তে হল কাঁদানে গ্যাস। এবং সর্বত্রই অভিযোগের আঙুল উঠল শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০১
গায়ে ইট লেগে পড়ে গিয়েছেন এক এবিভিপি সমর্থক। ইটবৃষ্টি থেকে বাঁচতে পালাচ্ছে পুলিশও। বাগডোগরা কলেজে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

গায়ে ইট লেগে পড়ে গিয়েছেন এক এবিভিপি সমর্থক। ইটবৃষ্টি থেকে বাঁচতে পালাচ্ছে পুলিশও। বাগডোগরা কলেজে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

দক্ষিণের ‘রোগ’ ক্রমেই সংক্রামিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গে।

কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ নতুন ঘটনা নয়। বৃহস্পতিবার ছাত্র-সংঘর্ষের সেই সংক্রমণ ছড়াল বাগডোগরা থেকে মালদহ, শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে কোথাও চালাতে হল লাঠি। কোথাও বা ছুড়তে হল কাঁদানে গ্যাস। এবং সর্বত্রই অভিযোগের আঙুল উঠল শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে।

দিন কয়েক আগে টিএমসিপি সমর্থকদের হাতে প্রহৃত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এসএফআইয়ের তিন সমর্থক। শিলিগুড়ি মহিলা কলেজের ওই তিন সমর্থক এ দিনও কলেজে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে এসেছিলেন। তবে তাঁদের হেঁটে আসার ক্ষমতা ছিল না। স্থানীয় একটি নার্সিংহোম থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে এ দিন দুপুরে মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ওই কলেজের ছাত্র সংসদের বিদায়ী সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা রায়। অ্যাম্বুল্যান্সেই চলছিল তাঁর স্যালাইন এবং অক্সিজেন। এ দিন অবশ্য তাঁদের উপরে চড়াও হননি টিএমসিপি। কলেজের ২৪ আসনের মধ্যে ওই তিনটিতেই সাকুল্যে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে এসএফআই। তবে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া নিয়ে এ দিন উত্তাল হয়ে ওঠে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠ বাগডোগরা। ইট-লাঠি-বাঁশ নিয়ে গড়ে তোলা শাসক দলের ব্যারিকেড ভেঙে ছাত্র পরিষদ এবং এবিভিপি-র সমর্থকেরা এগোনর চেষ্টা করতেই তাঁদের উপরে চড়াও হয় টিএমসিপি সমর্থকেরা। মনোনয়ন পত্র জমা দিতে আসা এসএফআই সমর্থকদের দিকে পেট্রল বোমা ছোঁড়া হয়। তাতে এসএফআইয়ের সমর্থকেরা পিছিয়ে গেলেও এবিভিপি-ক কয়েকশো সমর্থক কলেজের দিকে হাঁটতে থাকলে তাঁদের দিকে শুরু হয় ইট-বৃষ্টি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ এর পরেই লাঠি চালাতে শুরু করে। এই সময়ে দু’রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের সেলও ফাটানো হয়েছে।

দমদম মতিঝিল কলেজে আহত এবিভিপির সমর্থক। শৌভিক দের তোলা ছবি।

বিরোধী সংগঠনের সমর্থকদের অভিযোগ, শাসক দলের সমর্থকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুলিশও তাঁদের কলেজ গেটের কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। প্রতিবাদে দুপুরে এবিভিপির সমর্থকেরা কলেজের কাছে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন। অবরোধকারীরা একটি ট্রেকারে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে পুলিশের অভিযোগ। টিএমসিপি-র তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সন্ধ্যায় পুলিশ কমিশনারেটে অবস্থান বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদ। শিলিগুড়ির অদূরে নকশালবাড়ি কলেজেও এ দিন মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে গোলমাল হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

মালদহের গৌড় কলেজেও এ দিন ছবিটা ছিল অনুরূপ। এবিভিপি সমর্থকেরা মনোনয়ন পত্র তুলতে যাওয়ার সময়ে কলেজের রাস্তাতেই তাঁদের আটকে দেয় টিএমসিপি-র সমর্থকেরা। বাধা পেয়ে এবিভিপি সমর্থকরা এগোতে গেলে শুরু হয় হাতাহাতি। কিছুক্ষণের মধ্যেই যুদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে ওঠে মঙ্গলবাড়ির চৌরঙ্গি মোড়। ওই ঘটনায় দু’পক্ষের অন্তত ৫ জন জখম হয়েছেন।

টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে ইসলামপুর ও ডালখোলা অগ্রসেন কলেজে ভোট বাতিলের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টে নাগাদ উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে জেলাশাসকের দফতরের সামনে ‘আমরণ অনশনে’ বসেছিলেন বিজেপির কিছু নেতা কর্মী। তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বিজেপি-র জেলার সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী। রাত এগারোটার কাছাকাছি পুলিশ গিয়ে শঙ্করবাবু সহ প্রায় ১০০ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে। পরে সকলেই ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি পান। শঙ্করবাবু বলেন, “আবার অনশনে বসব।”

বুধবার হরিরামপুর এবং গঙ্গারামপুর কলেজে সমর্থকদের মারধর, বোমা ছোড়ার অভিযোগে এবিভিপি এবং বিজেপি যৌথ ভাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডাকে এ দিন। সেই বন্ধ ঘিরেও ঘটেছে রক্তপাতের ঘটনা। অভিযোগ, হামলায় বিজেপি-র বংশীহারি ব্লক সভাপতি ফণিভূষণ মাহাতোর মাথা ফেঁটে গিয়েছে। তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরে একই কারণে বন্ধের ডাক দেয় বিজেপি।

কলেজ ভোট ঘিরে অশান্তি ছড়ায় দমদমের মতিঝিল সায়েন্স কলেজেও। অভিযোগ, মনোনয়নপত্র তুলে ফেরার পথে এবিভিপি-র দুই সমর্থকের ইট মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় টিএমসিপি। ঘটনায় পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ যার পরিপ্রেক্ষিতে বলছেন, “উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা, তৃণমূল হামলা করেছে। আর পুলিশ কর্মীরা তৃণমূলের আক্রমণে সহায়তা করছে। এই সব পুলিশ কর্মীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।”

ambulance siliguri abvp tmcp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy