বাবা ভিন্ রাজ্যে একটি কারখানার সামান্য কর্মী। তাঁর আয়েই গোটা সংসার চলে। সেই পরিবারের ছেলে আজহারউদ্দিন শেখই জয়েন্টে মেডিক্যালে প্রথম দু’শোয় স্থান পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে!
একা আজহারউদ্দিনই নয়, তারই মতো বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের পিছিয়ে পড়া এলাকার ২৫ পড়ুয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যালে প্রথম হাজার জনের মধ্যে ‘র্যাঙ্ক’ করেছে। সৌজন্যে লিভার ফাউন্ডেশন এবং বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ‘লক্ষ্যভেদ’। অন্যতম উদ্যোক্তা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, “ওই দুই জেলার পিছিয়ে পড়া এলাকায় বহু মেধাবী পড়ুয়া আছে, খরচবহুল কোচিং নেওয়া যাদের পক্ষে অসম্ভব। তাদের জন্য বিনা খরচে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি।”
সিউড়ি ২ ব্লকের দেঘরিয়া গ্রামে বাড়ি আজহারউদ্দিনের। প্রতিদিন প্রায় ৩৫ কিলোমিটার যাতায়াত করে পড়াশোনা চালাতে হয়েছে। বীরভূম জিলা স্কুলের ছাত্রটির উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ৮৫%। মেডিক্যালে ১৮২ নম্বরে স্থান করে নিয়েছে। আবার, মেডিক্যালে ৮৬৬ র্যাঙ্ক করা শুভদীপ ঘোষের বাবা সার্কাসের কর্মী। এই পেশায় তেমন একটা রোজগার হয় না। মেধাবী ছাত্র শুভদীপ মাধ্যমিকে ৮৭ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে বাবার পরিশ্রমকে সার্থক করেছিল। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার পাতডাঙা গ্রামের বাসিন্দা হলেও পড়াশোনার জন্য বছর দশেক ধরে শুভদীপ সিউড়িতেই থাকে। সেখানেই ‘লক্ষ্যভেদ’-এ প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ পেরিয়েছে।
প্রচণ্ড খিদে পেলেও পকেটে টাকা না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেটে কিছু পড়েনি। তবুও ক্লাসে বসে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছে মনীষা মণ্ডল। তারাপীঠের কাছে একটি প্রত্যন্ত গ্রাম জয়সিংহপুরের মেয়ে মনীষাই গ্রামের প্রথম ডাক্তার হতে চলেছে। এ বারের মেডিক্যালে তার র্যাঙ্ক ১০০০।
‘লক্ষ্যভেদ’-এর ঘরে আর একটি নাম অর্কপ্রভ পাল। মুর্শিদাবাদের লালবাগের ছেলে অর্কপ্রভ নবাব বাহাদুর ইনস্টিটিশনের ছাত্র। এ বছর মেডিক্যালে তার র্যাঙ্ক ২৩। অর্কপ্রভর ইচ্ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার। বাবা সুদীপ্ত পাল জিয়াগঞ্জ ব্লক হাসপাতালের চিকিৎসক। মা কাকলি পাল লালবাগের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু ছেলের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ও জয়েন্টের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে ওই চাকরি ছেড়ে দেন।
২০১১ থেকে ‘লক্ষ্যভেদ’-এর বহরমপুর শাখার পথ চলা শুরু। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলে শনি-রবি ক্লাস চলে। শাখার সম্পাদক কল্যাণাক্ষ ঘোষ জানান, তাঁদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুর্শিদাবাদের ৬ জন পড়ুয়া মেডিক্যালে র্যাঙ্ক করেছে। মেডিক্যাল-ইঞ্জিনিয়ারিং মিলিয়ে প্রথম হাজার জনে রয়েছে ‘লক্ষ্যভেদ’-এর সিউড়ি শাখার ১৯ জন ছাত্রছাত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy