Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তা, ট্রেন আটকে ভোগাল শাসক দল

দলের মন্ত্রী তথা নেতা গ্রেফতার হয়েছেন প্রতারণার অভিযোগে। প্রতিবাদে পথে নামা শাসক দলের নেতা-কর্মীরা সটান বসে পড়লেন পথে, আটকে দিলেন ট্রেন। শনিবার রাজনৈতিক পেশিশক্তির এই আস্ফালনের মাসুল দিলেন রাজ্যবাসী। কলকাতা থেকে দক্ষিণ, এমনকী, উত্তরবঙ্গেও ভুগলেন সাধারণ মানুষ। তৃণমূলনেত্রী যেখানে বার-বার বন্ধ, অবরোধের রাজনীতির বিরুদ্ধে বলেছেন সেখানে শাসক দলের এ ধরনের কর্মসূচি কেন? সরাসরি জবাব না দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাতে বলেন, “কর্মীদের উদ্দেশে বলছি, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিবাদ করুন, বিক্ষোভ-মিছিল করুন কিন্তু আবেগতাড়িত হয়ে রেল-রাস্তা অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা মাথায় রাখুন।”

কদম্বগাছিতে ট্রেন অবরোধ করে শনিবার বিক্ষোভ তৃণমূল সমর্থকদের।  ছবি: সুদীপ ঘোষ

কদম্বগাছিতে ট্রেন অবরোধ করে শনিবার বিক্ষোভ তৃণমূল সমর্থকদের। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

দলের মন্ত্রী তথা নেতা গ্রেফতার হয়েছেন প্রতারণার অভিযোগে। প্রতিবাদে পথে নামা শাসক দলের নেতা-কর্মীরা সটান বসে পড়লেন পথে, আটকে দিলেন ট্রেন। শনিবার রাজনৈতিক পেশিশক্তির এই আস্ফালনের মাসুল দিলেন রাজ্যবাসী। কলকাতা থেকে দক্ষিণ, এমনকী, উত্তরবঙ্গেও ভুগলেন সাধারণ মানুষ।

তৃণমূলনেত্রী যেখানে বার-বার বন্ধ, অবরোধের রাজনীতির বিরুদ্ধে বলেছেন সেখানে শাসক দলের এ ধরনের কর্মসূচি কেন? সরাসরি জবাব না দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাতে বলেন, “কর্মীদের উদ্দেশে বলছি, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিবাদ করুন, বিক্ষোভ-মিছিল করুন কিন্তু আবেগতাড়িত হয়ে রেল-রাস্তা অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা মাথায় রাখুন।” তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁর কথায়, “রাস্তায় নেমে হুজ্জতি করব না, ভাঙচুর-অবরোধ করব না এবং সত্যি কথা বলবএসবগুলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যায় না। গত দু’দিনে শাসক দল যা করেছে, সেটাই ওদের আসল চেহারা।”

মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে শুক্রবার রাত থেকেই কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ-অবরোধ। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ নবান্নের সামনে ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করেই বিক্ষোভ-মিছিল করেন হাওড়ার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে তাঁরা বসে পড়েন। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে আলিপুরে বেলভেডিয়ার রোডে কোর্টের সামনে তৃণমূল কর্মীদের জমায়েতের জেরে ওই রাস্তায় যান চলাচলে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বেলা ৩টে নাগাদ মদন মিত্রের গাড়ি আদালতের কাছাকাছি পৌঁছনোমাত্র তৃণমূল কর্মীরা অবরোধ শুরু করেন। ভবানী ভবন থেকে শুরু করে আলিপুর আদালতের সামনের রাস্তায় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিনই ভবানীপুরে যদুবাজারে ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে সমস্ত দোকান বন্ধের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

ট্রেনও ছাড় পায়নি তৃণমূল কর্মীদের হাত থেকে। বর্ধমানের পূবস্থলী স্টেশনে এ দিন সকালে ৯টা নাগাদ তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল দাসের নেতৃত্বে শ’তিনেক তৃণমূল কর্মী রেললাইনে বসে পড়েন। এর জেরে হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখার বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে ছ’টি লোকাল। অফিসযাত্রী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ ট্রেনে আটকে পড়েন। বিরক্ত অনেককে নেতাদের মুণ্ডপাত করতে শোনা যায়। সময়মতো অফিসে ঢুকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনেকে চিন্তায় পড়েন ।

বারাসত-বসিরহাট শাখার ভাসিলা স্টেশনেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে আধ ঘণ্টা অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। পাশের স্টেশন কদম্বগাছিতে ফের বিকেল ৩টে থেকে পৌনে এক ঘণ্টা অবরোধ করে শাসক দল। ফলে অফিস যাওয়া-আসার পথে ট্রেনযাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। অনেককে বলতে শোনা যায়, “চুরি করবে, আবার ধরা পড়লে হাঙ্গামা বাধাবে? এ কোন রাজত্ব শুরু হয়েছে!” আটকে পড়া একটি ট্রেনের যাত্রী বলেন, “আমার এমনই কপাল, যাওয়া-আসা দু’সময়েই অবরোধে পড়লাম। কোনও কাজই হল না।”

পথ অবরোধের জন্য জেলাতেও সমান ভুগতে হয়েছে জনতাকে। সারদা মায়ের জন্মতিথি উৎসবের জন্য এ দিন বাঁকুড়ার জয়রামবাটিতে বহু ভক্ত গিয়েছিলেন। কিন্তু সকাল থেকে লাগোয়া হুগলি জেলার কামারপুকুর, ব্যাঙ্গাই, বদনগঞ্জের মতো এলাকায় দফায় দফায় তৃণমূল অবরোধ করে। রাস্তায় আটকে পড়েন বহু ভক্ত। তৃণমূল কর্মীরা অবরোধ করেন বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বাসুদেবপুর ও মহিষাচটি বাসস্ট্যান্ডে। রামপুরহাট-বুধিগ্রাম রাস্তায় অবরোধ চলাকালীন কাশীপুর মোড়ে এক ট্রাক চালককে তৃণমূল কর্মীরা মারধর করে বলে অভিযোগ। অল্পক্ষণের জন্যে হলেও ২ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ করা হয় আসানসোলের সেন র্যালি মোড়ে রানিগঞ্জের চাঁদা-রতিবাটি রোডে, দুর্গাপুরের দেবশালা-ভাতকুণ্ডা রোডে, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে। পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ির চৌরঙ্গীমোড়ে পথ অবরোধ করেন তৃণমূলকর্মীরা। অবরোধে বিপাকে পড়া অনেককে বলতে শোনা যায়, “মুখ্যমন্ত্রী না কি অবরোধ-আন্দোলনের বিরুদ্ধে। অথচ, তার দলের লোকেরাই রাজ্য অবরোধ করে রাখল! সারদা-কাণ্ডে এখনও অনেক কিছু বাকি। রাঘব বোয়ালরা ধরা পড়লে তখন এরা কী করবে?”

এ দিকে, মুখমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে হাওড়া সেতু, বহরমপুরের গির্জার মোড়, মালদহের চাঁচল, ইংরেজবাজার ও বালুরঘাটে কংগ্রেস কর্মীরাও কিছুক্ষণ অবরোধ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra cbi arrest saradha scam tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE