সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী কে ষণ্মুগমের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি শর্ত হল মজবুত আইনশৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক স্থিরতা। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত কি না, সেটা দেখেই সিঙ্গাপুরের শিল্পপতিরা লগ্নি করতে যান। আজ আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানালেন সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী কে ষণ্মুগম। তাঁর কথায়, “কোনও শিল্পপতিই এমন কোথাও লগ্নি করবেন না, যেখানে রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে।”
ষণ্মুগমের মতে, নিরাপত্তার পরেই গুরুত্বর্পূণ হল, আধুনিক শ্রম আইন এবং প্রশাসন পরিচালনার দক্ষতা। তা ছাড়া, জমির ব্যবস্থা করা এবং দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়গুলি তো রয়েছেই। এই সব শর্ত পূরণ করে পশ্চিমবঙ্গ এ দেশ থেকে লগ্নি নিয়ে যেতে পারে কি না, সেটা দেখার। তবে, সেই লক্ষ্যে গত কাল এখানে শিল্প সম্মেলন করার পরে আজ ষণ্মুগমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ষণ্মুগমের আমন্ত্রণেই তাঁর সিঙ্গাপুর আসা।
শিল্প টানতে বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক কেন? সিঙ্গাপুরের রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং-এর পরই সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ষণ্মুগম। বিদেশ দফতরের সঙ্গে আইন দফতরের দায়িত্বও তাঁর কাঁধে। বিদেশে সিঙ্গাপুরের সংস্থাগুলির লগ্নির ক্ষেত্রে সরকারের বড় ভূমিকা থাকে। ভারতের বিভিন্ন বণিকসভার কর্তাদের মতে, এ দেশে সরকারই বৃহৎ মূলধনী সংস্থারগুলির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তারা চাইলে যে কোনও স্থানে বিনিয়োগ পাঠাতে পারে। যদিও সরকারি ভাবে তা কখনও স্বীকার করা হয় না। ষণ্মুগমের কথায়, “কোথায় লগ্নি করবেন, সেটা ব্যবসায়ীরাই ঠিক করেন। আমরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি বুঝি। লগ্নিকারীদের নতুন নতুন জায়গায় বিনিয়োগে উৎসাহিত করে থাকি।”
২০১৩ সালে ভারতের সবর্বৃহৎ বাণিজ্য সহযোগী হিসেবে উঠে এসেছে সিঙ্গাপুর। গত আর্থিক বছরে ভারতে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে তার ২৫%-ই সিঙ্গাপুর থেকে। বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী এর পরিমাণ সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এই লগ্নির বেশির ভাগই গিয়েছে পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতে। কেন?
ষণ্মুগম জানান, এক সময় তামিলনাডু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত থেকে অনেকে সিঙ্গাপুরে চলে এসেছিলেন। সেই যোগসূত্র ধরেই লগ্নি যায় ওই সব রাজ্যে। এর পরেই ষণ্মুগম খানিকটা রসিকতা করে বলেন, “অবশ্য আপনাদের পশ্চিমবঙ্গ দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পে প্রথম সারিতে ছিল না। ফলে কারও নজর যায়নি। আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী আজই আমাকে এ কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, গত তিন বছরে সেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছেন তিনি।”
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী। কেমন লাগল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? ষণ্মুুগম বলেন, “খুবই প্রাণবন্ত। কী করতে চান, সে সম্পর্কে ধারণাও স্পষ্ট। এখানে লগ্নিকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মউ সই হয়েছে বলে জানালেন।”
ষম্মুগম জানান, মধ্যাহ্নভোজের আসরে মমতা মূলত আর্থিক বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন। গত কাল এ দেশের শিল্পপতিদের সামনে যা বলেছিলেন, তা-ই শুনিয়েছেন বিদেশমন্ত্রীকে। বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘট ব্যাপারটাই উঠে গিয়েছে। ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে। কেউ শিল্প গড়তে এলে সেই ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে জমি দেওয়া হবে।
ঘটনাচক্রে এ দিনই নবগঠিত রাজ্য তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ষণ্মুগম। রাও-ও নিজের রাজ্যে লগ্নি চেয়ে দরবার করেছেন। বলেছেন ল্যান্ড ব্যাঙ্কের কথা। বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর রাজ্যে ২১টি শিল্প পার্কে ১০ হাজার একর জমি রয়েছে। তার মধ্যে ৪০০০ একরের পরিকাঠামো তৈরি। অন্য দিকে তেলঙ্গানার ল্যান্ড ব্যাঙ্কে মোট জমির পরিমাণ ৪০ লক্ষ একর। তার মধ্যে ৩ লক্ষ একর জমি শিল্পের জন্য চিহ্নিত। ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে লগ্নি টানার প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
এ দিন বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ কর্মসূচি ছিল না। রাতে একটি বিনোদন পার্কে নাইট সাফারিতে যান মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy