ফের মত বদলেছেন মানস ভুঁইয়া। রাহুল গাঁধী প্রস্তাব দেওয়ার পরেও লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে চাননি প্রদেশ কংগ্রেসের এই প্রাক্তন সভাপতি। কিন্তু সর্বভারতীয় কংগ্রেস সূত্রের খবর, সহসাই সেই মত পাল্টে এখন ফের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মানসবাবু। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাশাপাশি দলীয় হাইকম্যান্ডকেও সেই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে কংগ্রেসের সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এ মাসেই কলকাতায় কর্মিসভা করতে আসছেন রাহুল গাঁধী।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এখনও কয়েকটি আসনে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত না-হওয়ার কারণেই সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের বাকি আসনগুলির জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশে দেরি হচ্ছে। রাজ্যের ১৭টি আসনে প্রার্থীর নাম আগেই ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। বাকি ২৫টি আসনে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার জন্য গত সপ্তাহে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক হয়। কিন্তু তার পরই তিন-চারটি আসনের প্রার্থী নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে মন কষাকষি শুরু হয়ে যায়। হুগলি আসনে তাঁর প্রস্তাব করা নেতাকে প্রার্থী না-করা হলে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আব্দুল মান্নান। তেমনই কৃষ্ণনগরের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন শঙ্কর সিংহ। আবার বালুরঘাটের পরিবর্তে তাঁকে দমদম থেকে প্রার্থী করার প্রস্তাব নিয়ে হাইকম্যান্ডের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্র। এ সবের মধ্যেই এখন আবার মত বদল করে প্রার্থী হতে চাইছেন মানসবাবু। ফলে কংগ্রেসের প্রকাশিত তৃতীয় তালিকায় আজ কেবল দার্জিলিং আসনের জন্য সুজয় ঘটকের নামটিই আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এআইসিসি-র এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা এ বার যথাসম্ভব ত্রুটিমুক্ত রাখতে চাইছেন রাহুল। সেই জন্যই প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার আগে বার বার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রার্থী তালিকা তৈরির ক্ষেত্রেও সেটা হচ্ছে। তবে কংগ্রেসের ওই নেতা জানান, রাজ্যের বাকি ২৪টি আসনে প্রার্থী তালিকা দু’-তিন দিনের মধ্যেই ঘোষণা হয়ে যাবে। তার পর সম্ভবত ২৫ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে যাবেন রাহুল গাঁধী। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ খানের সঙ্গে গত কাল অধীরবাবুর কথা হয়েছে। ২৫ তারিখ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কংগ্রেসের একটি কর্মিসভা করতে পারেন রাহুল।
তবে প্রার্থী তালিকা নিয়ে রাজ্যস্তরে উদ্বেগ ও সংশয় দুই-ই বাড়ছে। তার মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির রাতারাতি মত বদল। সূত্রের খবর, গত কাল রাতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে ফোন করে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেন মানসবাবু। অধীরবাবু তাঁকে জানান, যে হেতু রাহুল গাঁধীই মানসবাবুকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাই তাঁর এই ইচ্ছার কথা সরাসরি হাইকম্যান্ডকেই জানানো উচিত হবে। রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও মানসবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রশ্ন হল, হঠাৎ মানসবাবু মত বদলালেন কেন? কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এ ব্যাপারে এআইসিসি সম্পাদক শাকিল আহমেদ খান মানসবাবুকে বুঝিয়েছেন। শাকিল তাঁকে জানিয়েছেন, রাহুলের প্রস্তাব সত্ত্বেও তিনি প্রার্থী না হলে একটা নেতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। এই কথাটি এখন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্য প্রবীণ নেতাদেরও বোঝাচ্ছেন শাকিল। এবং সে ক্ষেত্রে তিনি সফল হলে অবশ্যই প্রার্থী তালিকায় কিছু চমক দেখা যাবে।
কিন্তু মুশকিল হল, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়া নিয়ে এই জটিলতার কারণে রাজ্য নেতাদের একাংশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে যাঁদের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ষোল আনা। সেই বিষয়টি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও বুঝছেন। তবে সূত্রের খবর, আনুষ্ঠানিক ভাবে তালিকা প্রকাশ না হলেও যাঁদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে ধন্ধ নেই, তাঁদের ঘরোয়া ভাবে প্রচার শুরু করার পরামর্শও দিয়েছেন অধীরবাবু।
তবে মহম্মদ আজহারউদ্দিন যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দাঁড়াচ্ছেন না, আজকের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে তা চূড়ান্ত হয়ে গেল। পুরনো কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে সরে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন আজহার। কিন্তু পরে রাজস্থানের কোনও কেন্দ্র চেয়ে তিনি রাহুলের দ্বারস্থ হন। তাঁকে রাজস্থানের সোয়াই মাধোপুরে প্রার্থী করেছেন রাহুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy