Advertisement
E-Paper

শিক্ষামেলার আড়ালে টিএমসিপি-র ভাঁড়ার ভরার অভিযোগ

ছাত্র সংসদের টাকা রোজগারের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে বলেই স্নাতক স্তরে ভর্তিতে কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এ বার শিক্ষামেলার নামেও লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:৫৬
শিক্ষামেলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে শঙ্কুদেব পণ্ডা।— নিজস্ব চিত্র।

শিক্ষামেলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে শঙ্কুদেব পণ্ডা।— নিজস্ব চিত্র।

ছাত্র সংসদের টাকা রোজগারের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে বলেই স্নাতক স্তরে ভর্তিতে কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এ বার শিক্ষামেলার নামেও লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর বিরুদ্ধে।

শুক্রবার থেকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তিন দিনের শিক্ষামেলার আয়োজন করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। ওই সংসদ টিএমসিপি-র অধীন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের বকলমে আসলে টিএমসিপি ওই মেলার আয়োজন করেছে বলে সংগঠন সূত্রেই জানা গিয়েছে। যদিও টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা-সহ সংগঠনের অনেক নেতাকে মেলায় দেখা গেলেও তাঁরা সে-কথা মানতে চাননি। টাকা আয় করার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

স্নাতক স্তরে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েও রাজ্য সরকার সম্প্রতি তা থেকে পিছিয়ে এসেছে। এবং টিএমসিপি-র চাপেই সরকার পিছু হটেছে বলে অভিযোগ। অনলাইনে ভর্তি চালু হলে পছন্দমতো ছাত্র ভর্তি করে বিপুল অঙ্কের টাকা রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে ছাত্র সংসদগুলির। মূলত সেই জন্যই অনলাইনে টিএমসিপি-র আপত্তি বলে অভিযোগ উঠেছিল। যদিও শঙ্কুদেব এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দু’জনেই অভিযোগ উড়িয়ে দেন।

নেতাজি ইন্ডোরে তিন দিনের ওই মেলায় শিক্ষা নিয়ে অলোচনাচক্রেরও আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার, প্রথম দিনে সেখানে বিভিন্ন রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা উপস্থিত ছিলেন। আইআইটি কানপুর, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়-সহ অন্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তারাও ছিলেন। বাকি দু’দিন শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদদের ডাকা হয়েছে। বিভিন্ন আলোচনাচক্রে চাকরির উপযোগী শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ওই শিক্ষামেলার জন্য যে-ভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তিন দিন ইন্ডোর স্টেডিয়াম ব্যবহার করার জন্য ভাড়া বাবদ ক্রীড়া দফতর কোনও টাকাই নিচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে টাকা তোলার প্রয়োজন কী?

ক্রীড়া দফতর সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, তিন দিনের জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ভাড়া দেওয়া হয়েছে বটে। তবে ভাড়ায় অনেকটাই ছাড় দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহেও ইন্ডোরে তিন দিনের একটি শিক্ষামেলার আয়োজন করেছিল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি সংগঠন। তিন দিনে তাদের প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে ওই সংগঠন সূত্রের খবর। তবে ছাড় দেওয়া হলেও শিক্ষামেলার জন্য ছাত্র সংসদের কাছ থেকে কত টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তা জানাতে চাননি ক্রীড়া দফতরের কর্তারা।

অথচ যে-সব সংস্থা মেলায় স্টল দিয়েছে, তাদের কারও কারও কাছ থেকে মোটা টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট, মেডিক্যাল ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের একটি সংগঠন সূত্রের খবর, তাদের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ দিয়েছে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে বলে টিএমসিপি সূত্রের খবর।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের তরফে সৌরভ অধিকারী গত ৯ জুন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই শিক্ষামেলার কথা জানান। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্টল দেওয়ার আবেদন জানান। তা হলে স্টল দেওয়ার জন্য এত টাকা নেওয়া হচ্ছে কেন? শুক্রবার সৌরভ বলেন, “সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অধিকার আমার নেই। কে কথা বলতে পারবেন, তা-ও জানি না।” সংসদের সভাপতি মহম্মদ বকুল বিশ্বাস বলেন, “ওই শিক্ষামেলার ব্যাপারে কিছু জানি না। আমার পরীক্ষা চলছে। তাই মেলায় যাইনি।”

এ দিন দুপুরে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, চার দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল বিশাল কাট-আউট। সাদা-সবুজ গেঞ্জি পরে ঘুরছেন আয়োজকেরা। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন শঙ্কুদেব। তাঁর কথায়, “এই মেলার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাই এসেছি।” তা হলে উদ্যোক্তাদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরে ঘুরছেন কেন? তিনি বলেন, “ছেলেরা দিল। তাই পরলাম। তা ছাড়া আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।” শঙ্কুদেব যা-ই বলুন, এ দিন আগাগোড়া তিনি ছিলেন মেলা আয়োজনের দায়িত্বে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুকে স্টেডিয়ামের ভিতরে নিয়ে আসা থেকে তাঁকে বার করে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন শঙ্কুদেব। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ মন্ত্রীকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গেলে তাঁদেরও থামিয়ে দেন তিনি। সকলের সামনেই শঙ্কুদেব বলেন, “দয়া করে আপনারা আসবেন না। যা করার আমরা করছি।”

শিক্ষামেলার আয়োজন করায় পার্থবাবু অবশ্য ছাত্র সংসদের প্রশংসা করেন। বারবার এমন মেলার ব্যবস্থা করার জন্য সংসদকে উৎসাহিতও করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, “ছাত্র সংসদ যেন ভর্তির ব্যাপারে কোনও রকম হস্তক্ষেপ না-করে। ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করাই সংসদের দায়িত্ব। তাদের সেই কাজটাই মন দিয়ে করে পড়ুয়াদের কাছাকাছি পৌঁছতে বলব।”

education fair tmcp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy