Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ভোটের বাতাসে ভয়

শেষ বেলাতেও নাগাড়ে অশান্তি

শুরুটা হয়েছিল শনিবারে। রবিবার রাত গড়ালেও রাজ্যের নানা প্রান্তে সংঘর্ষে ছেদ পড়ল না। যা শেষ দফার ভোটে অশান্তির আশঙ্কা জিইয়ে রাখল পুরোদস্তুর। আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম তথা চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। একই সঙ্গে সেরে ফেলা হচ্ছে নদিয়ার চাকদহ ও শান্তিপুর বিধানসভার উপনির্বাচন।

হুমকির তর্জনী: আধাসেনার সামনেই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জিয়াউর রহমানকে শাসানি তৃণমূল কর্মীর। রবিবার কাশীপুরে।  ছবি: সুমন বল্লভ।

হুমকির তর্জনী: আধাসেনার সামনেই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জিয়াউর রহমানকে শাসানি তৃণমূল কর্মীর। রবিবার কাশীপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০৩:৪৬
Share: Save:

শুরুটা হয়েছিল শনিবারে। রবিবার রাত গড়ালেও রাজ্যের নানা প্রান্তে সংঘর্ষে ছেদ পড়ল না। যা শেষ দফার ভোটে অশান্তির আশঙ্কা জিইয়ে রাখল পুরোদস্তুর।

আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম তথা চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। একই সঙ্গে সেরে ফেলা হচ্ছে নদিয়ার চাকদহ ও শান্তিপুর বিধানসভার উপনির্বাচন। তার আগে রবিবার একাধিক প্রার্থী ঘেরাও-নিগ্রহের মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ। বহরমপুরে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীকে ঘণ্টা দুয়েক ঘেরাও করে রাখেন তৃণমূল সমর্থকেরা। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেনের পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেসের লোকজন তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিগ্রহ করেছে। চাকদহ বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সমরলাল সিংহরায়ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিগ্রহের নালিশ এনেছেন। খাস কলকাতার কাশীপুরে সিপিএমের এক সমর্থককে আক্রমণের ঘটনা ঘিরে অভিযোগ স্থানীয় থানার ওসি-র হস্তক্ষেপেই কেন্দ্রীয় বাহিনী সেখানে হাত গুটিয়ে ছিল, এমনকী এসি-ও (অ্যসিস্ট্যান্ট কমিশনার) সেখানে কর্তব্যপালনে বাধা পেয়েছেন। বেলেঘাটায় লাঠির ঘায়ে সিপিএম সমর্থকের মাথা ফেটেছে। বেলেঘাটা, এন্টালি-সহ উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও মিলেছে এ দিন রাত পর্যন্ত।

রবিবার যাদবপুর-সংলগ্ন এলাকায় একাধিক সংঘর্ষের অভিযোগ এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এসএফআই-এর রাজ্য কমিটির সম্পাদক সৌমজিৎ রজক জানান, তৃণমূলের দলীয় পতাকা ছেঁড়ার অভিযোগ তুলে কিছু তৃণমূল সমর্থক তাঁদের উপর চড়াও হয়। রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার কিছু সিপিএম সমর্থকের অভিযোগ, তাঁদের উপর চড়াও হন বাইক-আরোহী কিছু যুবক। প্রাক্তন বিধায়ক ও সিপিএম নেত্রী চন্দনা ঘোষদস্তিদার অভিযোগ করেছেন, বাঘাযতীনের চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকায় এক স্থানীয় নেতার উপর হামলা করে তৃণমূল সমর্থকরা। এলাকার মহিলারা একত্রিত হয়ে ওই যুবকদের বাধা দিতে গেলে ঝামেলা হয়। অভিযোগ, পরিস্থিতি সামাল দিতে এসে ওই মহিলাদের উপর লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সল্টলেকের সুকান্তনগরে এক সিপিএম-এর পোলিং এজেন্টের বাড়িতেও এ দিন বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে দত্তাবাদের বিভিন্ন বাড়িতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে প্রচুর লোক ঢুকছে। এ সমস্ত কথাই নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি।

কিন্তু সামগ্রিক ভাবে এ হেন সন্ত্রাসের আবহে প্রশ্ন উঠেছে, মানুষ আজ নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন তো?

বেলঘরিয়ায় গণ্ডগোলের পরে রবিবার পুলিশ ও আধাসেনার টহল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

এই আশঙ্কা নিয়ে এ দিন বিরোধী দলগুলি নির্বাচন কমিশনে দরবার করেছে। সিপিএম নেতা রবীন দেবের অভিযোগ, প্রচার শেষ হতেই তৃণমূলী গুন্ডারা হামলা শুরু করেছে। এসি-র নির্দেশ ওসি মানছেন না! “সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়! কী ভাবে শান্তিপূর্ণ ভোট হবে?” প্রশ্ন রবীনবাবুর। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “কমিশনকে বলেছি, তৃতীয় ও চতুর্থ দফার পুনরাবৃত্তি যেন পঞ্চম দফায় না হয়।” কলকাতায় তৃণমূল বহিরাগত ঢোকাচ্ছে বলে কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের দাবি, “হাওড়া-হুগলি থেকে প্রচুর লোক কলকাতায় আসছে।”

অন্য দিকে তৃণমূল পাল্টা আঙুল তুলেছে বিরোধীদের দিকে। মুর্শিদাবাদে তৃণমূল প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেনের উপরে হামলার নিন্দা করে দলের সর্বভারতীয়

সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেন, “মানুষ ভোট দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি অশান্তির চেষ্টা করছে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এই নির্বাচন কুৎসার মেঘে ঢাকা। এত কুৎসা ভবিষ্যতে গবেষণার বিষয় হতে পারে।” রাজ্যবাসীর প্রতি তৃণমূলনেত্রীর আবেদন, “কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। সিপিএম নাটক করছে।”

ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার মূল দায় যার, দু’পক্ষের এই চাপান-উতোরের মাঝে সেই নির্বাচন কমিশন কী বলছে?

ঘটনা হল, আম ভোটারকে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য স্পষ্ট কোনও নিশ্চয়তা বা আশ্বাস কিন্তু এ দিন কমিশনের তরফে পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গে কমিশন-নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ বরং জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের আগের দিনই সব কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে বুথে পৌঁছে গিয়েছে। তাই রাস্তায় টহলদারিতে তাদের পাওয়া যাবে না। রাস্তায় টহল দেবে রাজ্যের পুলিশ। বুথের ভিতরের নিরাপত্তা সম্পর্কে তিনি অবশ্য ‘শতকরা একশো ভাগ’ নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

এবং কমিশনের কড়া ব্যবস্থায় যে কাজ হচ্ছে, তা বোঝাতে গিয়ে রাকেশ এ দিন দাবি করেছেন, “রাজ্যে দফায় দফায় ভোট পড়ার হার বাড়ছে। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে আসছেন। তবে কিছু ঘটনা ঘটছে। সে জন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।” নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিশেষ পর্যবেক্ষকের পর্যবেক্ষণ, “দু’জন নিজেদের মধ্যে মারামারি করলে তাকে নিরাপত্তাহীনতা বলা যায় না।” রাকেশ জানান, মহানগরে ভোটের মুখে ‘বহিরাগত প্রবেশের’ অভিযোগটি তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে পাঠিয়েছেন। কাশীপুর কাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ওসি-র ভূমিকা সম্পর্কেও পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট চেয়েছেন।

জখম সিপিএম কর্মী কল্যাণ সমাজদার। মেডিক্যাল কলেজে। শনিবার বেলঘরিয়ায় সংঘর্ষে আহত
সায়নদীপ মিত্র (ডান দিকে) এখনও চিকিৎসাধীন। রবিবার সুদীপ্ত ভৌমিক ও বিতান ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

বস্তুত এ দিনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার কাশীপুরেই। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ অসুস্থ ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিলেন সিপিএমের কাশীপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক কল্যাণ সমাজদার। অভিযোগ: মোটরবাইক নিয়ে জনা পঞ্চাশেক তৃণমূল কর্মী তাঁকে ধাওয়া করে। কল্যাণবাবু স্থানীয় পার্টি অফিসে ঢুকে পড়লে হামলাকারীরা সেখানে চড়াও হয়। পার্টি অফিসে ভাঙচুর করে, কল্যাণবাবুদের মারধর করা হয়। কল্যাণবাবুর পায়ে লোহার অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হলে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। পরে দলীয় কর্মীরা তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতে দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

কল্যাণবাবুর অবস্থা এখন কেমন? হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নীচের মাংস খুবলে হাড় বেরিয়ে গিয়েছে। দুই হাতেরই বেশ কয়েকটি আঙুলের হাড় সরে গিয়েছে বলে আশঙ্কা। কল্যাণবাবুর দিদি স্বপ্না দাস বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় দুষ্কৃতীরা তাঁর ভাইকে ঘিরে হুমকি দিয়েছিল। তাঁর দাবি, তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতী বাপি দলবল নিয়ে এ দিনের হামলা চালিয়েছে, পিছনে ছিলেন তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর অতীন ঘোষ ও শান্তনু সেন। অতীনবাবু ও শান্তনুবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। “আমার নামে অভিযোগ থাকলে কমিশন-পুলিশে জানাক।” মন্তব্য অতীনবাবুর। আর শান্তনুবাবুর দাবি, তিনি ঘটনার কথাই জানতেন না।

পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। এ দিন কাশীপুর থানার ওসি-র সঙ্গে কলকাতা পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের বচসাই তার প্রমাণ বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের অভিযোগ, এ দিন কাশীপুর থানার ওসি মহম্মদ কলিমুদ্দিন জনা পাঁচেক পুলিশকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেও গোলমাল থামাতে সক্রিয় হননি। বরং অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জিয়াউর রহমান কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এলে ওসি তাঁকে বাধা দেন।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে কলিমুদ্দিন ও জিয়াউরের বচসা সংবাদমাধ্যমেরও নজরে এসেছে। ঠিক কী ঘটেছিল?

এসি জিয়াউর গিয়ে দেখেন, তৃণমূল অফিসের সামনে প্রচুর লোক। ভিতরেও এক দল। তা দেখে তিনি ওসিকে বলেন, ‘ও দিকে চলুন।” কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সাহায্যে তাঁরা লোকজনকে দলীয় অফিসে ঢুকিয়ে দিতে থাকেন। জনতাও পাল্টা পুলিশকে ধাক্কা দিতে থাকে। জিয়াউরও হেনস্থা হন। তিনি ফোনে লালবাজারের কর্তাদের জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে তৃণমূল সমর্থকদের দলীয় অফিসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে দলীয় কাজে পুলিশ কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। ইতিমধ্যে আশপাশের এক দল মহিলা পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ওই ডামাডোলের সুযোগে ওসি কলিমুদ্দিন কয়েকটি ছেলেকে আড়াল করে গলিতে ঢুকিয়ে দেন। তা দেখে এসি উত্তেজিত ভাবে ওসি-কে বলেন, “আপনি ওসি। আপনি দেখুন, ওদের গ্রেফতার করা হবে কি না।” ওসি অবশ্য তাতে আমল দেননি। জিয়াউর ফের তাঁকে বলেন, “আপনি কি অভিযুক্তদের ধরতে এসেছেন, না বাঁচাতে?”

দৃশ্যত ক্ষুব্ধ এসি এর পরে নিজের গাড়িতে উঠে চলে যান। যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমকে বলে যান, “যা জানার, লালবাজার থেকে জানুন।”

খোদ থানার ওসি-র এমন আচরণ দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। অভিযোগ করেন, ওসি-ই তাঁদের কাজ করতে বাধা দিচ্ছেন। “এক ঝটকায় সব সামলে দেব। কিন্তু উনি (ওসি) বারণ করছেন! আমরা কী করব?” প্রশ্ন এক জওয়ানের। ডিসি (উত্তর) গৌরব শর্মা অবশ্য এসি-ওসি বিতণ্ডার কথা জানতেন না। পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে শুনে বলেন, “ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

প্রাক্-নির্বাচনী আঁচে শনিবার রাত থেকে উত্তপ্ত বহরমপুরও। মুর্শিদাবাদের শক্তিপুরের সোমপাড়ায় দলীয় কর্মীদের উপরে হামলার খবর পেয়ে সেখানে যাওয়ার পথে এ দিন তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। প্রায় এক ঘণ্টা তিনি আটকে থাকেন। প্রতিবাদে কংগ্রেস পথ অবরোধ করে। এ দিকে তৃণমূল প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন বিকেলে বহরমপুরে সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, কান্দির সালারে কংগ্রেস কর্মীরা তাঁকে মারধর করেছেন। অধীরবাবুর পাল্টা দাবি, “এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।” পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি ঘটনার অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কেউ গ্রেফতার হয়নি।

এ দিনই সকাল দশটা নাগাদ চাকদহ থানার গোরাচাঁদতলায় চাকদহ বিধানসভা উপনির্বাচনের কংগ্রেস প্রার্থী সমরলাল সিংহরায় আক্রান্ত হন। দলীয় কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। তৃণমূলের দিকে আঙুল উঠলেও জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রশাসন তদন্তে নেমেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার তালগেড়িয়ায় সিপিএমের শাখা অফিসে হামলা ও এক কর্মী মধু দাসকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক নয়ন দত্তের দাবি, পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি। এসডিপিও অজিত সিংহ যাদব তা মানতে চাননি। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরেই সবংয়ে তৃণমূলের মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। জখম ১৪ জন তৃণমূলকর্মীকে প্রথমে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিন জনকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। তমলুকের সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলির আবার অভিযোগ, ভোটের মুখে নন্দীগ্রাম ও হলদিয়া টাউনশিপে বাম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল।

এ দিকে শনিবারের ঘটনার জেরে এ দিনও বেলঘরিয়া উত্তপ্ত ছিল। সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারির পরে বিমান বসু, ক্ষিতি গোস্বামী, অসীম দাশগুপ্তের নেতৃত্বে বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধিদল আহত ডিওয়াইএফআই নেতা সায়নদীপ মিত্রকে দেখতে হাসপাতালে যায়। শনিবারের হামলার প্রতিবাদে বিটি রোডে রথতলা মোড়ে অবরোধ করেন সিপিএম কর্মীরা। বেলা এগারোটা নাগাদ দলের জোনাল অফিসে বিমানবাবু সাংবাদিক সম্মেলন শুরু করার সময় খবর আসে, অবরোধকারীদের উপরে তৃণমূল হামলা করেছে। শনিবার রাত থেকে বেলেঘাটায় গোলমাল চলছে। এ দিন সেখানে আশিস দাস নামে এক সিপিএম সমর্থকের মাথায় রিভলভারের বাঁট দিয়ে মারা হয়। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। শনিবার রাতে শাসক দলের সমর্থকেরা বেলেঘাটায় সিপিএম কর্মী নওলকিশোর শ্রীবাস্তবের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ।

উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও উত্তেজনা যথেষ্ট।

শনিবার রাতে নৈহাটির জেঠিয়ায় সিপিএম লোকাল কমিটির সম্পাদকের বাড়িতে হামলার অভিযোগ মিলেছে। উত্তর শহরতলি ও শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকায় সিপিএম পার্টি অফিস ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ, রাস্তায় বাইকবাহিনী ও সশস্ত্র যুবকেরা দাপিয়ে বেড়ালেও পুলিশের দেখা মেলেনি। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের কথায়, “বীজপুরে সাধারণ মানুষের ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।”

এবং এ সবের মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তিতে সিপিএমের বিরুদ্ধে দলীয় অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। যদিও সিপিএমের মগরাহাট জোনাল সম্পাদক দীপক দাসের দাবি, “এতে আমাদের কেউ জড়িত নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ellection violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE