আইনের পাঠ নিচ্ছেন কর্মরত বিচারকেরাও! তবে এই আইন বছরের পর বছর ধরে চলে আসা ফৌজদারি বা দেওয়ানি বিধি নয়। এ আইন নতুন প্রজন্মের সাইবার জগতের কাজকর্ম নিয়ে। অনেক সময়ে যা ছড়িয়ে পড়ে খুন-ধর্ষণ-ডাকাতির মতো অপরাধেও!
সাইবার অপরাধ যে ক্রমশ তার শাখাপ্রশাখা মেলছে, তা কয়েক বছর আগেই উপলব্ধি করেছিলেন পুলিশকর্তারা। তাই পুলিশ অফিসারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছিল। লালবাজারে গড়ে উঠেছিল সাইবার থানা। কিন্তু আদালতের ক্ষেত্রে এত দিন সে ভাবে সাইবার পাঠ শুরু হয়নি। শনিবার অবশ্য সেই ধারায় নতুন বদল আনল কলকাতার নগর দেওয়ানি আদালত। দায়রা ও দেওয়ানি আদালতের বিচারকদের নিয়ে একটি সাইবার অপরাধের কর্মশালার আয়োজন করেছিল জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্র। সেখানে হাজির হওয়া বিচারকদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্দীপনাও চোখে পড়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেট,কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই ব্যবহার কখন অপরাধ হয়ে যেতে পারে, তার ধারণা আমাদের অনেকেরই নেই। বিচারকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই বিষয়টি নিয়ে আরও স্বচ্ছ ধারণা দিতেই এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
বিচারকদের একাংশ বলছেন, সাইবার আইন এ দেশে নতুন একটি বিষয়। ফলে এই আইনে বিচার করার ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন, তা তাঁদের অনেকেরই নেই। “তাই আগামী দিনে এমন নানা অপরাধের বিচারের সুবিধার জন্যই এই কর্মশালার আয়োজন।”বলছেন কলকাতা জেলা আইনি পরিষেবা সংস্থার সম্পাদক মৌ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার ওই কর্মশালায় উপস্থিত বিচারকদের উৎসাহও দেখার মতো ছিল।
সাইবার আইনজ্ঞরা বলছেন, এ রাজ্যে প্রথম সাড়া জাগানো অপরাধ ছিল দু’টি টেলিকম কোম্পানির মধ্যে। এক সংস্থার কর্তা চাকরি ছাড়ার আগে প্রতিপক্ষ সংস্থাকে ইন্টারনেটে গোপন তথ্য পাচার করেছিলেন। কিন্তু এখন নেহাত ওই কোম্পানি বা শুধু ইন্টারনেটে সীমাবদ্ধ নেই। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা বলছেন, বছর কয়েক আগেও ইন্টারনেটে অশ্লীল ছবি বা হুমকি দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সাইবার অপরাধ। কিন্তু এখন নেট ব্যাঙ্কিং চালু হওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাঙ্ক জালিয়াতি ইন্টারনেটে হচ্ছে। খুন-ধর্ষণ-ডাকাতিতেও সাইবার তথ্যপ্রমাণকে হাতিয়ার করছেন তদন্তকারীরা। কী রকম?
কলকাতা পুলিশের এক গোয়েন্দা বলছেন, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে একটি পাঁচতারা হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ তদন্তে নতুন মোড় দিয়েছিল। সেই ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সেই ফুটেজ সাইবার আইনের তথ্যপ্রমাণের মধ্যেই পড়ে। গোয়েন্দারা বলছেন, এখন খুন, ডাকাতি, ধর্ষণের মতো হাজারো অপরাধে অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন, ই-মেলের তথ্য কিংবা সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়। বিচারের সময়ে সেগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারগুলি না বুঝলে যে বিচারের কাজে অসুবিধা হতে পারে, তা মেনে নিয়েছেন বিচারকদের একাংশও।
সাইবার অপরাধের বিচারে যে আইনি বিষয়টি নিয়ে এখনও অনেক ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন আইনজীবীদের একাংশ। এক আইনজীবীর কথায়, এই আইন অনেকটাই প্রযুক্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকায় অনেক আইনজীবী এই ধরনের মামলা লড়তে পারেন না। এ কথা যে কিছুটা হলেও সত্যি তার প্রমাণও মিলেছে। কী রকম?
সল্টলেকবাসী এক আইপিএস কর্তার মেয়েকে ইন্টারনেটে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় মামলা হয়। তার বিচারের জন্য বিভাস চট্টোপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। আইনজীবী মহলের খবর, বিভাসবাবু দীর্ঘদিন ধরেই সাইবার মামলা করছেন। রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদেরও সাইবার অপরাধের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। শনিবার নগর দেওয়ানি আদালতেও তিনি প্রশিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy