পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিবিআই যে বিষয়টি বিধানসভার স্পিকারকে জানিয়েছিল, তা স্পষ্ট হয়ে গেল সোমবার।
শুধু ফ্যাক্স-বার্তা নয়, মদন মিত্রকে গ্রেফতার সংক্রান্ত একটি চিঠিও রবিবার স্পিকারের কাছে পাঠিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু স্পিকার না থাকায় তা কেউ নিতে পারেননি। সোমবার সেই চিঠিটি ফের পাঠিয়েছে সিবিআই। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা গ্রহণও করেছেন।
শুক্রবার প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, রাজ্যের এক জন মন্ত্রীকে গ্রেফতারের বিষয়ে বিধানসভার স্পিকারকে কিছু জানায়নি সিবিআই। এতে সাংবিধানিক রীতি মানা হয়নি এবং সিবিআই বিধানসভার মর্যাদাহানি করেছে বলে অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের অন্দরে। সিবিআইয়ের আইনজীবীর অবশ্য দাবি ছিল, শুক্রবার মদনবাবুকে গ্রেফতারের অব্যবহিত পরেই তারা স্পিকারকে ফ্যাক্সযোগে বিষয়টি জানিয়েছে। যার প্রাপ্তি স্বীকারের প্রমাণও রয়েছে।
সে দিন স্পিকার বলেছিলেন, সোমবার বিধানসভা খোলার পরে তিনি সিবিআইয়ের দাবি খতিয়ে দেখবেন। সিবিআই কিছু না জানালে সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেছিলেন স্পিকার।
পরিবহণমন্ত্রীর গ্রেফতারির প্রসঙ্গ না জানানো নিয়ে স্পিকারের আপত্তিতে আজ কিন্তু অন্য প্রশ্ন উঠছে। সিপিএম বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্র এবং প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক সুশান্ত ঘোষকে গ্রেফতারের আগে রাজ্য সরকারের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি কি স্পিকারকে কিছু জানিয়েছিল? স্পিকারের জবাব, “ওঁদের গ্রেফতারের সময় স্পিকারের কাছে আগাম অনুমতি নেয়নি পুলিশ। গ্রেফতারের পরেই স্পিকারকে তা জানিয়েছিল।” তা হলে এ ক্ষেত্রে স্পিকারের আপত্তি কোথায়? বিমানবাবু বলেন, “কোন কোন ধারায় ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তা সিআইডি আমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু মদন মিত্রের ক্ষেত্রে সিবিআই তা জানায়নি।”
শনি-রবি রাজ্য বিধানসভা বন্ধ ছিল। সোমবার সকালে স্পিকারের দফতর খোলার পরে দেখা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে মদন মিত্রকে গ্রেফতারের খবর জানিয়ে সিবিআইয়ের ফ্যাক্সবার্তা এসেছিল। স্পিকার এ দিন বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অফিসারেরা বিধানসভা ভবনে ছিলেন। তার পর শনি-রবি ছুটি ছিল। আজ, সোমবার অফিস খুললে সিবিআইয়ের ফ্যাক্সবার্তাটি পাওয়া যায়।”
স্পিকার বলেন, রবিবার সিবিআই একটি চিঠিও পাঠায়। এ দিন সিবিআইয়ের পাঠানো অন্য একটি চিঠিতে তিনি তা জানতে পেরেছেন। বিমানবাবু বলেন, “এ দিনের চিঠির সঙ্গে রবিবারের চিঠিটাও পাঠিয়েছে সিবিআই। সেটি পড়েছি। আমার অনুপস্থিতিতে কেউ চিঠিটি নিতে চায়নি বলে সিবিআই দাবি করেছে।”
সিবিআইয়ের চিঠি বা ফ্যাক্সবার্তা পেলেও তাতে সন্তুষ্ট নন বিমানবাবু। তিনি বলেন, “ফ্যাক্স ও চিঠিতে শুধু লেখা, সারদা রিয়েলিটি মামলায় মদনবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার নম্বরও আছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কী কী ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। এটা জানানো নিয়ম।”
বিমানবাবুর বক্তব্য, রাজ্য বিধানসভার সার্ভিস রুলের ২৩১ এবং ২৩২ ধারায় বলা আছে, মন্ত্রী বা বিধায়ককে গ্রেফতার করলে দ্রুত তা স্পিকারকে জানাতে হবে এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির কোন কোন ধারা তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছে, তা-ও উল্লেখ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিবিআই সেই নিয়ম মানেনি। তিনি এখনও মনে করেন, বিধানসভা চালু ছিল। তাই মদনবাবুকে গ্রেফতারের আগে তাঁকে জানানো উচিত ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy