Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুব্রতই কি বিজেপি প্রার্থী, মতুয়াবাড়ি নিয়ে জল্পনা

লড়াই শুরুর আগেই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের লড়াইটা যেন কঠিন হয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের পক্ষে। এবং কঠিন হচ্ছে, মতুয়াবাড়ির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সৌজন্যেই। মতুয়াবাড়ির ছোট ছেলে তথা রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে সুব্রত বিজেপি-র দিকে কার্যত পা বাড়িয়েই আছেন। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে বনগাঁয় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিলে তাঁর যে কোনও আপত্তি নেই, সে কথা তিনি মুখে বলছেনও। সুব্রতর নিজের কথায়, “আমার আদর্শ-চিন্তাভাবনা বাবার থেকে আলাদা হতেই পারে। বিজেপি আমাকে প্রার্থী করলে আমার কোনও আপত্তি নেই।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

লড়াই শুরুর আগেই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের লড়াইটা যেন কঠিন হয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের পক্ষে। এবং কঠিন হচ্ছে, মতুয়াবাড়ির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সৌজন্যেই।

মতুয়াবাড়ির ছোট ছেলে তথা রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে সুব্রত বিজেপি-র দিকে কার্যত পা বাড়িয়েই আছেন। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে বনগাঁয় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিলে তাঁর যে কোনও আপত্তি নেই, সে কথা তিনি মুখে বলছেনও। সুব্রতর নিজের কথায়, “আমার আদর্শ-চিন্তাভাবনা বাবার থেকে আলাদা হতেই পারে। বিজেপি আমাকে প্রার্থী করলে আমার কোনও আপত্তি নেই।” যদিও ঘটনা হল, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলে অস্বস্তি বাড়িয়ে খোদ মঞ্জুলকৃষ্ণকে নিয়েও নানা মহলে চলছে জল্পনা। উপ-নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে বাবা-ছেলে দু’জনেই গেরুয়া শিবিরে চলে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, আড়ালে বলছেন তৃণমূল-বিজেপি, দুই দলের নেতৃত্বের একাংশই।

পরিস্থিতি যে এমন হবে, তা কিন্তু আঁচ করা যাচ্ছিল গত কয়েক মাসে মতুয়াবাড়ির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গতিপ্রকৃতি দেখেই। গত লোকসভা ভোটে ওই বাড়ির বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে বনগাঁ কেন্দ্রে প্রার্থী করে তৃণমূল। কপিলকৃষ্ণের মৃত্যুর পরেই মতুয়াবাড়ির কোন্দল প্রকাশ্যে আসতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের একাংশও ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে দূরত্ব রাখতে শুরু করেন। কপিলকৃষ্ণের পর সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হন মঞ্জুলকৃষ্ণ। কপিলবাবুর স্ত্রী মমতাবালাও পাল্টা কমিটি গড়ে নিজে সঙ্ঘাধিপতি হয়ে বসেন।

এ বার মঞ্জুলের ছেলে সুব্রত বিজেপি-তে যেতে পারেন বলে খবর ভাসছে এলাকায়। তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েও গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করে দেন মন্ত্রী-পুত্র। যদিও সরকারি ভাবে ইস্তফা দেননি এখনও। বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার খবর পৌঁছেছে তৃণমূলের কানেও। বিজেপি সূত্রের খবর, সুব্রতকে নিয়ে তাঁদের ‘বিশেষ’ ভাবনা-চিন্তা আছে। মঞ্জুল ও সুব্রত দু’জনের সঙ্গেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের তরফে একাধিক বার যোগাযোগ করা হয়েছে। নিজের ব্যাপারে মুখ না খুললেও ছেলে বিজেপি-র টিকিটে প্রার্থী হলে তাঁর যে আপত্তি নেই, সে কথা জানিয়েছেন মঞ্জুল।

বিজেপি যখন তৃণমূলের ঘর ভেঙে নিজেদের ঘর গোছানোর কৌশল নিয়েছে, তখন কী হাল শাসক-শিবিরের?

সারদা-কেলেঙ্কারি সহ নানা বিষয়ে ক্রমশ কোণঠাসা তৃণমূল। মুকুল রায়কে পর্যন্ত তলব করেছে সিবিআই। এই অবস্থায় দলের অগোছালো ভাবটাও আর ঢাকা যাচ্ছে না। উপ-নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেলেও যে কারণে এখনও বনগাঁ কেন্দ্র প্রার্থীই ঠিক করে উঠতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতারা। তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি।

তৃণমূলের একাংশের দাবি, বনগাঁ কেন্দ্রে দলীয় টিকিটের লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন মমতাবালাই। কিন্তু, কপিল-পত্নীকে নিয়ে জেলা তৃণমূলের একটা অংশের আপত্তিও আছে। মমতাবালার সঙ্গে অবশ্য এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। ১৬ জানুয়ারি প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতা। তাঁর দাবি, ওই দিন বেলা ৪টের পরে ‘শুভ মহরত’ দেখে তবেই নাম জানানো হবে। কিন্তু কে হবেন প্রার্থী, তা নিয়ে যে এখনও দলের অন্দরেই টানাপড়েন চলছে, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি। দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নেবেন।”

এমন অবস্থায় তৃণমূলের উদ্বেগ বাড়িয়েছে, সুব্রত-মঞ্জুলকে নিয়ে জল্পনা। প্রশ্ন উঠছে, বাবা যেখানে রাজ্যের মন্ত্রী, সেখানে ছেলে কি শেষমেশ বিপক্ষ দলের হয়ে ভোটের ময়দানে নামবেন? যদি নামেন, তা হলে তৃণমূলের অস্বস্তি কি আরও বাড়বে না? শাসক দলের এক নেতা বলেন, “এ সব নিয়ে কথা বলার এখনও সময় আসেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE