Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সারদার টাকা ঢাকায় পাচার, ইডির রিপোর্ট তলব

সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার নিয়ে এ বার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরট (ইডি)-এর কাছে রিপোর্ট চাইল অর্থ মন্ত্রক। এর আগেই সারদা কেলেঙ্কারির আর এক তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের কাছেও রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সারদার টাকা বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন জামাতে ইসলামির কাছে পাচার হয়েছে কি না জানতে চেয়েছে ঢাকা। বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে শীঘ্রই বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠাবে মোদী সরকার।

ইডি-র অফিসে রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডু।—নিজস্ব চিত্র।

ইডি-র অফিসে রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডু।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২০
Share: Save:

সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার নিয়ে এ বার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরট (ইডি)-এর কাছে রিপোর্ট চাইল অর্থ মন্ত্রক। এর আগেই সারদা কেলেঙ্কারির আর এক তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের কাছেও রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সারদার টাকা বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন জামাতে ইসলামির কাছে পাচার হয়েছে কি না জানতে চেয়েছে ঢাকা। বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে শীঘ্রই বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠাবে মোদী সরকার। এ জন্যই বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে টাকা পাচার নিয়ে তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, টাকা বিদেশে পাচার হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই কিছু তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের গুরুতর জালিয়াতি তদন্তকারী সংস্থার (এসএফআইও) রিপোর্টেও সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচারের ইঙ্গিত রয়েছে। তবে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত ভাবে ইডি-র কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য দিতে বলেছেন অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা।

কী সেই তথ্য?

ইডি সূত্রের খবর, অর্থ মন্ত্রক তাদের কাছে জানতে চেয়েছে সারদার টাকা বিদেশে গিয়েছে কি না? নির্দিষ্ট ভাবে বাংলাদেশে জামাতের কাছে গিয়েছে কি না? বাংলাদেশে টাকা পাচার হয়ে থাকলে তার সঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানের কী যোগ রয়েছে?

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন জামাতের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ ইমরানের যোগাযোগর কথা উঠে আসে। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদেরও দাবি, সে দেশে অস্থিরতা তৈরিতে জামাতকে সারদার টাকা দিয়ে সাহায্য করা হয়েছিল। তার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ইমরান। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তদন্ত শুরু করে ঢাকাও। তার পরেই বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে ভারতের কাছে তথ্য চেয়ে পাঠায় তারা। ইতিমধ্যে ইডি-র তদন্তকারীরা ইমরানকে কয়েকপ্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক কর্তা বলছেন, বিদেশ মন্ত্রকের কাছে ঢাকার চিঠি পৌঁছতেই সে ব্যাপারে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নির্দেশ দিয়েছেন, এ ব্যাপারে ঢাকার কাছে কোনও তথ্য যেন গোপন করা না-হয়। তার ভিত্তিতেই তড়িঘড়ি তদন্তকারীদের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, শুধু সারদাই নয়, বাকি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির টাকাও বিদেশে পাচার হয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ইডি ও সিবিআই রোজ ভ্যালি সংস্থা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। বাকি সংস্থাগুলি নিয়েও শীঘ্রই তদন্ত শুরু হবে। শুক্রবারই ইডি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুকে। ঘণ্টা চারেক তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। বেরিয়ে এসে গৌতমবাবু বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশেই হাজিরা দিতে এসেছিলাম। তদন্তে সহযোগিতাও করব।” ইডি সূত্রের খবর, রোজ ভ্যালি সংস্থার প্রায় আড়াই হাজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলি খুলে দিতে অনুরোধ করেছেন গৌতমবাবু। এ দিন ইডি অফিসের বাইরে তিনি জানতে চান, “জয়ললিতা যদি জামিন পেতে পারেন, তবে আমার আড়াই হাজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কেন খুলে দেওয়া হবে না!”

সিবিআই জানতে পেরেছে, সুদীপ্ত সেনের মতো প্রায় দু’কোটি টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি কিনেছিলেন রোজ ভ্যালির মালিক গৌতমবাবুও। তবে এ দিন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। গৌতমবাবুর কথায়, “আমি কি সুদীপ্ত সেন নাকি যে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা দিয়ে মমতার ছবি কিনব!’’ কোনও রাজনৈতিক দলকেও তিনি টাকা দেননি বলে দাবি করেছেন গৌতমবাবু।

এ দিন বেহালায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে হানা দিয়ে সারদার ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্র জানিয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, মাস খানেক আগে সারদার এক উচ্চপদস্থ কর্তার বাড়িতে হানা দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই ওই লকারের চাবি মেলে। সেই চাবি নিয়ে এ দিন বেহালার ব্যাঙ্কটিতে যান তদন্তকারীরা। উদ্ধার হওয়া কাগজপত্র খতিয়ে দেখছে সিবিআই।

রোজ ভ্যালির পাশাপাশি সারদা তদন্তেও ফাঁস আরও শক্ত করছে ইডি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই কেলেঙ্কারিতে শিল্পী শুভাপ্রসন্নের কাছে তাঁর ‘আর্টস একর’ নিয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শিল্পী সেই তথ্য জমা দেননি। ইডি সূত্রের খবর, তথ্য চেয়ে শুভাপ্রসন্নবাবুকে নোটিস পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছেন তদন্তকারীরা। তাঁকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rose valley ED saradha scam gautam kundu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE