Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সংস্কৃত চর্চার সুদিন ফেরাতে কোর্টের কমিটি

রাজ্যের প্রায় ৮০০ টোল বা চতুষ্পাঠীর অধ্যক্ষ এবং এক জন সহায়কের বেতন বাবদ কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি মাসে টাকা পাঠায়। তা সত্ত্বেও এক কালের সংস্কৃত শিক্ষার পীঠস্থান ওই সব টোলের দুরবস্থা কহতব্য নয়। ছাত্র-সংখ্যা নগণ্য। শিক্ষকদের মধ্যেও তেমন সংস্কৃতপ্রেমীর দেখা মেলে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৯:০৪
Share: Save:

রাজ্যের প্রায় ৮০০ টোল বা চতুষ্পাঠীর অধ্যক্ষ এবং এক জন সহায়কের বেতন বাবদ কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি মাসে টাকা পাঠায়। তা সত্ত্বেও এক কালের সংস্কৃত শিক্ষার পীঠস্থান ওই সব টোলের দুরবস্থা কহতব্য নয়। ছাত্র-সংখ্যা নগণ্য। শিক্ষকদের মধ্যেও তেমন সংস্কৃতপ্রেমীর দেখা মেলে না। এই পরিস্থিতিতে টোলগুলির হালহকিকত দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে তিন সদস্যের কমিটি গড়ে দিচ্ছে কলকাতা হাইকোর্ট।

দীননাথ মিশ্র নামে এক সংস্কৃতপ্রেমীর আবেদনের ভিত্তিতে দায়ের হওয়া মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার সোমবার জানান, ১০ মার্চ আদালত অ্যাড-হক বা অস্থায়ী ভিত্তিতে ওই কমিটি গড়বে। কমিটির তিন সদস্যের এক জন হবেন রাজ্য সরকারের মনোনীত, এক জন খোদ আবেদনকারীর মনোনীত এবং চেয়ারম্যান হবেন বিচারপতির মনোনীত ব্যক্তি। এবং তিন জনকেই হতে হবে অরাজনৈতিক ব্যক্তি। সেই সঙ্গে তাঁরা যে অবশ্যই সংস্কৃতজ্ঞ ও সংস্কৃতপ্রেমী হবেন, বিচারপতি এ দিন সেটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।

সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য, উৎকর্ষ ও গুরুত্ব গোটা পৃথিবীতে স্বীকৃত বলে এ দিন ওই মামলার শুনানিতে মন্তব্য করেন বিচারপতি। তাঁর মতে, শুধু লাতিনের সঙ্গে এই ভাষার তুলনা চলে।

কিছু দিন আগে দীননাথবাবু হাইকোর্টে মামলা করে বলেন, এই সব চতুষ্পাঠীর গৌরব এক সময় গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। অথচ এখন তারা নিছক নামেই টিকে আছে। দীননাথবাবু তাঁর আবেদনে জানান, সংস্কৃত ভাষার বিকাশের জন্য ১৯৪৯ সালে রাজ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। ’৭১ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার একটি অ্যাড-হক কমিটি তৈরি করে দেয়। ঠিক ছিল, এক বছরের মধ্যে স্থায়ী কমিটি গড়া হবে। কিন্তু তা হয়নি।

আবেদনকারীর পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী কাশীনাথ মৈত্র এ দিন বলেন, সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য এ রাজ্যে একদা যতখানি মূল্য পেত, এখন তা পায় না। এক সময় পশ্চিমবঙ্গে যে-ভাবে তার বিকাশ হয়েছিল, এখন তেমন চর্চাও হয় না। বলা চলে, এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। সংস্কৃতের বিকাশের লক্ষ্যে ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ’৬০ সালে কেন্দ্রের কাছে একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। কেন্দ্র সেটি অনুমোদনও করে। কিন্তু তার পর থেকে অন্যান্য রাজ্য সংস্কৃত ভাষা-সাহিত্যের বিকাশে যে-কাজ করেছে, পশ্চিমবঙ্গে তার কিছুই হয়নি।

কেন এই অবস্থা, সওয়ালে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কাশীনাথবাবু। তাঁর অনুযোগ, সংস্কৃতের প্রচার ও বিকাশে এখন যাঁরা সরকারি স্তরে কাজ করছেন, ওই ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ আগ্রহ নেই, যোগ্যতাও নেই। টোলগুলিতে এক সময় স্মৃতি, কাব্য, সাংখ্য, ন্যায়ের পঠনপাঠনের জন্য পড়ুয়ারা ভিড় করতেন। যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে পড়াতেন অধ্যক্ষেরাও। এখন সবই যেন মাসে মাসে কিছু উপার্জনের জন্য। তার ফলে যে-ভাষা এক সময় ভারতকে গৌরবান্বিত করেছে, তা এখন হারিয়ে যাচ্ছে।

কাশীনাথবাবুর সঙ্গে একমত হয়ে বিচারপতি বলেন, আমরা খুব দ্রুত অতীতকে ভুলে যাই। অথচ সংস্কৃত আমাদের ঐতিহ্য ও সম্পদ। তিনি জানান, সেই সম্পদের সুরক্ষায় অ্যাড-হক কমিটি গড়া হচ্ছে। সংস্কৃতের ব্যাপারে ওই কমিটির সদস্যদের শুধু আগ্রহ থাকলেই চলবে না, সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে তাঁদের যথেষ্ট ব্যুৎপত্তিও থাকতে হবে। এবং তাঁরা অবশ্যই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হবেন।

রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, বর্তমান সরকার সংস্কৃতের গুরুত্ব অনুধাবন করে স্থির করেছে, আদালত যে-রায় দেবে, সেটাই হুবহু মেনে চলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE