Advertisement
E-Paper

সাংসদদের নিয়ে বাড়ছে বিড়ম্বনা

স্থান, সংসদে ঢোকার মূল ফটক। কাল, সদ্য সমাপ্ত সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ সপ্তাহ। পাত্র, তৃণমূলের কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী। উপলক্ষ, তৃণমূলের কেন্দ্র-বিরোধী ধর্না। তিন সপ্তাহ ধরে চলা কালো ছাতা, লাল ডায়েরি, কাঁখে হাঁড়ি বা মুখে ঠুলি পরা ধর্নায় এর আগে এক দিনের জন্যও দেখা যায়নি শিশিরবাবুকে। সে দিনই প্রথম এসে দাঁড়ালেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৭

স্থান, সংসদে ঢোকার মূল ফটক।

কাল, সদ্য সমাপ্ত সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ সপ্তাহ।

পাত্র, তৃণমূলের কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী।

উপলক্ষ, তৃণমূলের কেন্দ্র-বিরোধী ধর্না।

তিন সপ্তাহ ধরে চলা কালো ছাতা, লাল ডায়েরি, কাঁখে হাঁড়ি বা মুখে ঠুলি পরা ধর্নায় এর আগে এক দিনের জন্যও দেখা যায়নি শিশিরবাবুকে। সে দিনই প্রথম এসে দাঁড়ালেন। তবে সামান্য দূরে। খানিক ক্ষণ স্লোগান চলার পর রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন দেখতে পান শিশিরবাবুকে। কাছে গিয়ে হাত ধরে সামনে আসতে অনুরোধও করেন। কিন্তু অনড় শিশিরবাবু ইশারায় বুঝিয়ে দেন, একটু দূরেই তিনি ভাল আছেন। স্লোগানে সামিল হওয়ার কোনও অভিপ্রায় সে দিন দেখাননি তিনি।

তৃণমূলের অন্দরে এখন এমন করেই কেউ সরে থাকছেন, কেউ বা বিবেকের তাড়নায় মুখ খুলছেন। কাউকে আবার দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। কেউ কেউ নেত্রীর হয়ে মুখ খুলেও দলের বিড়ম্বনা বাড়াচ্ছেন। যেমন ইদ্রিশ আলি। এই সাংসদ সম্প্রতি বলেছিলেন, সারদা-কাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হলে আগুন জ্বলবে এবং অনেককে সেই পুড়ে মরতে হবে। বৃহস্পতিবার এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি জয়ললিতার উদাহরণ টেনেছেন। যার পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে তিনি কি মনে করেন, মমতার পরিণতি জয়ললিতার মতোই হবে? এই প্রশ্নের সামনে অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন ইদ্রিশ। অস্বস্তি বাড়িয়েছেন দলেরও।

এই বিড়ম্বনা আর অস্বস্তিই চুম্বকে তৃণমূলের সাম্প্রতিক চেহারা। সেখানে অবশ্য ইদ্রিশের থেকে শিশিরবাবুদের সংখ্যাই বেশি। সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও দিল্লির ধর্নায় আগাগোড়া গরহাজির ছিলেন দলের একাধিক সাংসদ। সেই তালিকায় আছেন শিশির-পুত্র শুভেন্দু অধিকারীও।

রাজনৈতিক সূত্র বলছে, যত দিন যাবে, মমতার উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দলের মধ্যেকার এই অনৈক্যের ছবিটা ততই প্রকট হবে। আগামী বাজেট অধিবেশনেই সেটা দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে? দলেরই একাংশের মত, সারদা কেলেঙ্কারি-সহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে রাজ্যে যে অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে কমবেশি মুখ পুড়ছে বিভিন্ন এলাকার সাংসদেরই।

বাজেট অধিবেশন শুরু হতে বাকি আরও দু’মাস। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এই দু’মাসে সিবিআই তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়বে বই কমবে না। সুতরাং বাজেট অধিবেশন শুরু হলে সাংসদদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। ইতিমধ্যেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুগত বসু, সৌগত রায়, শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী, দীনেশ ত্রিবেদী বিভিন্ন কারণে অসন্তুষ্ট নেতা-সাংসদদের তালিকাটা দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমের সামনে ঘোষণা করে কেউ বিদ্রোহ দেখাচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু দলের অন্দরে ক্ষোভ আর চাপা থাকছে না। ফলে আগামী অধিবেশনে সংসদে আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কায় রয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।

সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরানোর বিষয়টি নিয়ে দল এবং সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সৌগত রায়, সাধন পাণ্ডে এবং সুগত বসুর মতো সাংসদ এবং নেতারা। এর আগেও প্রকাশ্যে সারদা নিয়ে সুগতবাবু বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের টাকা নয়ছয় যারা করে, তাদের বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। সংসদে তৃণমূলের ধর্নায় তাপস পাল এবং হাসান আহমেদ ইমরানের মতো সাংসদের পাশে দাঁড়াতে কার্যত অস্বীকারই করেছেন যাদবপুরের এই সাংসদ।

আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তৃণমূলের একের পর এক সাংসদ-নেতা জেলে ঢুকছেন, এমন বিরল পরিস্থিতিকে কী ভাবে দেখছেন সুগতবাবু? তিনি বলছেন, “আমার চ্যালেঞ্জ বাংলার সঙ্গে সর্বভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতেও কাজ করা। সে ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়াই করতে হবে।” ধর্নায় এক দিনও দেখা যায়নি তাঁকে। সুগতবাবুর ব্যাখ্যা, “ব্যাপারটা এমন নয় যে, কোনও বিষয়েই রাস্তায় নামব না। কিন্তু কোন বিষয়ে ধর্না দেব, সেটা ভাল করে জানা উচিত। এখানে বুদ্ধিমত্তা, নীতির প্রশ্ন রয়েছে। নীতির সঙ্গে সমঝোতা হয় না।”

বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগতবাবু গত বছর মার্চে প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। মমতার নীতির বিরোধিতা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্প-বাণিজ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের পরামর্শদাতার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। দলীয় সূত্রের খবর, তার পর থেকেই তাঁর ও নেত্রীর সম্পর্ক যথেষ্ট শীতল। তৃণমূলের মূল ক্ষমতার বৃত্ত থেকেও অনেক দূরে থাকেন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিক বার তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘকাল কথোপকথন পর্যন্ত হয় না। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বছরের প্রথম দিনে সৌগতবাবুর বক্তব্য, “সব মিলিয়ে আমি দুঃখিত এটা এখনই বলছি না। তবে অস্বাচ্ছন্দ্য তো তৈরি হয়েছেই।” অস্বাচ্ছন্দ্যের কারণ, সারদায় সিবিআইয়ের তদন্ত এবং দলের নেতাদের গ্রেফতার হওয়া। নাম না-করতে চাওয়া এক প্রবীণ তৃণমূল সাংসদের কথায়, “বাকি সব চুলোয় গিয়েছে। সবার এখন একটাই চিন্তা, এর পর কে? এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে যে, এর পর গোটা পার্টিটাই না গোল্লায় যায়!”

এবং মুকুল রায়। শীতকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে যন্তরমন্তরের কেন্দ্র-বিরোধী ধর্নায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যখন রাজনৈতিক অভিষেক হয়, তখন থেকেই কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছেন তিনি। ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে তিনি এতটাই দূরে চলে গিয়েছেন যে, গত মাসে যখন মমতা দিল্লি আসেন, তাঁর ধারেকাছে বিশেষ দেখা যায়নি মুকুলবাবুকে। সন্ধ্যায় হাসপাতালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সময় যে মমতা পেয়েছেন, সেই তথ্যও ছিল না তাঁর কাছে। একই ভাবে গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছেন আর এক প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। আগে সংসদে কক্ষ সমন্বয় ছাড়াও সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। এখন কাজটি করেন ডেরেক ও’ব্রায়েন।

একা কুম্ভের মতো।

parliament tmc mp agitation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy