Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখুন, বললেন দেব

যে-ই জিতুক-হারুক, আপনাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হতে দেবেন না...। বেগুনি রঙের টি-শার্টের উপরে কালো জ্যাকেট আর নীল ডেনিমে টানটান নায়ককে দেখার জন্য তখন আছড়ে পড়ছে ভিড়। আর মঞ্চে উঠেই দীপক অধিকারী ওরফে দেব বুঝিয়ে দিলেন তিনি প্রথমে নায়ক, পরে আর সব কিছু। গায়ে তৃণমূল সাংসদের জার্সি, এসেছেন বনগাঁ উপ-নির্বাচনে দলের হয়ে প্রচারে।

দেবকে ঘিরে উচ্ছ্বাস বনগাঁয়। মঙ্গলবার।  ছবি: শান্তনু হালদার

দেবকে ঘিরে উচ্ছ্বাস বনগাঁয়। মঙ্গলবার। ছবি: শান্তনু হালদার

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

যে-ই জিতুক-হারুক, আপনাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হতে দেবেন না...।

বেগুনি রঙের টি-শার্টের উপরে কালো জ্যাকেট আর নীল ডেনিমে টানটান নায়ককে দেখার জন্য তখন আছড়ে পড়ছে ভিড়। আর মঞ্চে উঠেই দীপক অধিকারী ওরফে দেব বুঝিয়ে দিলেন তিনি প্রথমে নায়ক, পরে আর সব কিছু। গায়ে তৃণমূল সাংসদের জার্সি, এসেছেন বনগাঁ উপ-নির্বাচনে দলের হয়ে প্রচারে। কিন্তু চড়া সুরে বিরোধী পক্ষকে আক্রমণ দূরে থাক, চারদিকে ভক্তদের গলা ফাটানো চিৎকারের মধ্যে মিনিট চারেক মাইক্রোফোন ধরে দেব বরং বললেন, “রাজনীতিটা আসল নয়। বন্ধুত্ব আরও বড়। রাজনীতির জন্য বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করবেন না।”

তবে তখন অন্য রকম ‘লড়াই’ চলছে ময়দান জুড়ে। নায়ককে একটু কাছ থেকে দেখা, মোবাইলে ছবি তোলার লড়াই। মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরনগরের সভায় তো ভিড়ের চাপে এক বার পড়েই গেলেন দেব, কালো জ্যাকেট ছিঁড়ে দফারফা। এক পাটি জুতো খুলে গেল পা থেকে। দু’শো মিটার দূরে গাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যেতে সময় লাগল পাক্কা আধ ঘণ্টা!

জনতার এই উন্মাদনা যে আসলে নায়ক দেবকে ঘিরেই, সাংসদ দেব নিজে তা বিলক্ষণ জানেন। যে কারণে গোড়াতেই বলে দিলেন, “আমি সবে রাজনীতিতে এসেছি। আমার থেকে আপনারা রাজনীতি অনেক বেশি বোঝেন।” বললেন, “আমি ভোট চাইতে আসিনি। আপনারাই বিচার করবেন, কে বেশি ভাল কাজ করেছে।” বললেন, “আমি কী বলছি, টিভি কী বলছে, বড় কথা নয়। আপনি কী দেখছেন সেটাই বড় কথা।”

যা শুনে উত্তর ২৪ পরগনার বিজেপি নেতা শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “উনি তো তৃণমূল বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামই নিলেন না। এ আবার কেমন প্রচার!” বাস্তবিকই এ দিন ‘দিদি’র নাম দেবের মুখে ওঠেনি। এক বিজেপি নেতার টিপ্পনী, “দিদির দল করতে গিয়ে নায়কের যা জেরবার অবস্থা, নাম নেবেন কী করে!” যদিও যে ‘ভাল কাজ’-এর নিক্তিতে বিচার করে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন দেব, তৃণমূল সরকারই তা করছে বলে তাঁর দাবি। গত চার বছরে রাজ্যে ‘ব্যাপক উন্নয়ন’ হয়েছে মন্তব্য করে তাঁর মত, “উন্নয়নের জন্য চার বছর যথেষ্ট নয়। এর জন্য আরও চল্লিশ বছর দরকার।”

সোমবার বনগাঁয় বিজেপির তারকা সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে মানুষের মাতামাতি দেখে কিছুটা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। এ দিন দেব-দর্শনে বাঁধ-ভাঙা জনজোয়ার দেখে তাঁরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। এক নেতা তো দাবিই করে বসলেন, “বাবুলকে এক জন চুমু খেয়েছিল। তাতেই উনি খুশি।

বাদকুল্লায় তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচার অভিনেতা হিরণের। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দেবকে চুমু খাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার জন লাইন দিয়েছিল। আমরাই সে সব হতে দিইনি।”

দেব মঞ্চ থেকে নামার তোড়জোড় করতেই ভিড়টা স্রেফ উন্মাদ হয়ে যায়। ব্যারিকেড-ট্যারিকেড তত ক্ষণে ভেঙে চুলোয়। কেউ দেবের জ্যাকেট টেনে ধরছেন, কেউ গায়ে হাত দেওয়ার জন্য মরিয়া। মোবাইলে ছবি তোলার জন্য শূন্যে ভাসছে অগুন্তি হাত। শেষমেশ যখন গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছলেন, নায়কের প্রায় বিধ্বস্ত অবস্থা। তবে মুখের হাসি তখনও টলেনি। গাড়ি বেরিয়ে যেতে দেখা গেল কুরুক্ষেত্র জুড়ে যত্রতত্র ব্যারিকেডের বাঁশ, সই-শিকারিদের হাত থেকে ছিটকে পড়া শ’দুই ডায়েরি, খাতা, কলম ছড়িয়ে। বেশ কিছু জুতোর পাটি, ব্যাগ।

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, “আজ যে ভিড়টা দেখলাম, সেটা ভোটযন্ত্রেও প্রতিফলিত হবে। দিল্লিতে বিজেপির যা হাল হয়েছে! বনগাঁয় ভোটের ফল বেরনোর পরে ওদের মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না।” গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ তখন মাইকে হেঁকে চলেছেন, “যার-যার জিনিস হারিয়েছে, এসে নিয়ে যান!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dev bangaon arunaksha bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE