Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

সন্ত্রাস রুখে পাল্টা দাওয়াই সিপিএমের

নির্বাচনের দিন শাসক দলের তাণ্ডবের সামনে দলীয় কর্মীরা গুটিয়ে যেতে পারেন—আশঙ্কাটা ছিল। দিন কয়েক ধরে তাই পাল্টা প্রতিরোধের মন্ত্রে তাঁদের চাঙ্গা করতে চাইছিলেন সিপিএম নেতারা।

খড়্গপুর-১ ব্লকের বড়কোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের নায়েকপাড়ায় উপনির্বাচনে তৃণমূলের বহিরাগতদের দাপট ঠেকাল বামেদের প্রমীলা বাহিনী। শনিবার রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

খড়্গপুর-১ ব্লকের বড়কোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের নায়েকপাড়ায় উপনির্বাচনে তৃণমূলের বহিরাগতদের দাপট ঠেকাল বামেদের প্রমীলা বাহিনী। শনিবার রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

নির্বাচনের দিন শাসক দলের তাণ্ডবের সামনে দলীয় কর্মীরা গুটিয়ে যেতে পারেন—আশঙ্কাটা ছিল। দিন কয়েক ধরে তাই পাল্টা প্রতিরোধের মন্ত্রে তাঁদের চাঙ্গা করতে চাইছিলেন সিপিএম নেতারা।

‘ইটের পাল্টা পাটকেল’-এর সেই দাওয়াই যে বিশেষ কাজে লাগেনি, শনিবার, নিবার্চনের সকাল থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ব্যতিক্রম, আসানসোলের জামুড়িয়া। সেখানে ভোট দিতে যাওয়ার পথে বাধা পেলে কিংবা বুথে শাসক দলের সমর্থকেরা গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করতেই জড়ো হয়েছেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। অনেক সময়ে পাল্টা রে-রে করে তেড়ে যেতেও দেখা গিয়েছে তাঁদের। ফল মিলেছে হাতেনাতে। জামুড়িয়ার বিভিন্ন বুথে মারমুখী সিপিএম কর্মীদের সামনে পিছু হটতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী কিংবা দলের বহিরাগত সমর্থকদের।

প্রায় একই ধরনের প্রতিরোধের ছবি দেখা গিয়েছে খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার একটি বুথেও। তৃণমূলের এক দল কর্মী বুথ দখলের চেষ্টা করলে সেখানে লাঠি-ঝাঁটা হাতে এগিয়ে এসে তাদের রুখে দিয়েছেন স্থানীয় মহিলারাই। জেলার এক তৃণমূল নেতা তা কবুলও করেছেন, ‘‘আমাদের কিছু বহিরাগত সমর্থক ওই এলাকায় গেলে সিপিএমের প্রমীলা বাহিনী তাদের ঠেকিয়ে দিয়েছে বলে শুনেছি।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি ভারতী ঘোষ বলছেন, ‘‘সিপিএমের মহিলারা ঝাঁটা হাতে বেরিয়েছিলেন বটে, তবে কেন বলতে পারব না।’’

আসানসোল কর্পোরেশন এলাকায় সদ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়া জামুড়িয়া অবশ্য তৃণমূলের ‘দৌরাত্ম্য’ রুখেছে দিনভর। এ দিন সকালে ভোট শুরুর আগেই গোলমাল শুরু হয়েছিল জামুড়িয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে একটি বুথের সামনে তৃণমূল কর্মীদের ভিড় করতে দেখেই বুথ দখল হচ্ছে সন্দেহে লাঠিসোটা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সিপিএম সমর্থকেরা। লাঠির ঘায়ে মাথা ফাটে তৃণমূল প্রার্থী মানিক মাঝির। কিছুক্ষণের মধ্যেই ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতদের নিয়ে বুথ দখলের চেষ্টা হচ্ছে খবর ছড়িয়ে পড়তে একই ভাবে ছুটে যেতে দেখা যায় কয়েকশো সিপিএম কর্মীকে। সেখানেও হাতে চোট পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী রামচন্দ্র নুনিয়া। সকালে ১ নম্বর ওয়ার্ডের শিরিষডাঙায় সিপিএম সমর্থকেরা ভোট দিতে যাচ্ছিলেন, সে সময়ে তাঁদের পথ আটকালে পাল্টা মার দিয়ে সে প্রতিরোধ তুলে দেন সিপিএমের জনা কয়েক কর্মী। দুপুরের দিকে ১১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শ্রীপুরে তৃণমূলের বোমাবাজির অভিযোগে বিক্ষোভে বসে পড়ে সিপিএম। নীরব পুলিশকে

অবশ্য এ ঘটনায় তৎপর হতে দেখা গিয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়া সেই পুলিশ বাহিনীকেও রুখে দিয়েছিল কয়েকশো সিপিএম কর্মী।

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু যা শুনে বলছেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম, ভোট দিতে না পারলে যেখানে সম্ভব, অবস্থানে বসতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধও করতে হবে। জামুড়িয়ায় সম্ভব হয়েছে। যেখানে সম্ভব হয়নি, প্রতিরোধ করা যায়নি।’’

রাজ্যের অন্যত্র সিপিএম কার্যত ‘আত্মসমর্পণ’ করলেও জামুড়িয়ায় তাদের পুরনো চেহারায় দেখা গেল কী করে? বর্ধমান জেলা তৃণমূলের নেতারাই স্বীকার করছেন, জামুড়িয়া বরাবর সিপিএমের ‘দুর্গ’। রাজ্যে পালাবদলের প্রবল হাওয়াতেও জামুড়িয়ার আসনটি ধরে রেখেছিল সিপিএম। লোকসভা ভোটেও এই এলাকায় তারাই এগিয়ে ছিল। এলাকার খনি ও শিল্পাঞ্চলে সিটুর সাংগঠনিক প্রতিপত্তির জেরেই সিপিএমের দাপট জিইয়ে রয়েছে। পাশাপাশি, শাসক দলের গোষ্ঠী-কোন্দল দলের ভরাডুবি ডেকে এনেছে এখানে। তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বলছেন, ‘‘বরাবরের মতো সিপিএম জামুড়িয়ায় সন্ত্রাস চালিয়েছে।’’ প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী পাল্টা বলছেন, ‘‘যেখানে পেরেছি, শাসক দলের তাণ্ডব প্রতিরোধ করেছি, মনে রাখবেন সেখানেই সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE