Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সরকারি কৌঁসুলি কই, মুখ্যসচিবকে ডাকব কি

মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী হাজির। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরাও যথারীতি আসনে। দেখা নেই শুধু সরকার পক্ষের কৌঁসুলির। শুধু শুক্রবারের ছবি নয়। প্রায়ই এই অবস্থা হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন মামলায়। সরকারি কৌঁসুলির গরহাজিরায় বিলম্বিত হতে থাকে মামলা। অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল, জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার), স্ট্যান্ডিং কাউন্সেলদের একাধিক বার নির্দেশ দিয়েও লাভ হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী হাজির। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরাও যথারীতি আসনে। দেখা নেই শুধু সরকার পক্ষের কৌঁসুলির।

শুধু শুক্রবারের ছবি নয়। প্রায়ই এই অবস্থা হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন মামলায়। সরকারি কৌঁসুলির গরহাজিরায় বিলম্বিত হতে থাকে মামলা। অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল, জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার), স্ট্যান্ডিং কাউন্সেলদের একাধিক বার নির্দেশ দিয়েও লাভ হয়নি। অধিকাংশ মামলারই শুনানিতে সরকারি আইনজীবীদের আদালতে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এতটাই ক্ষুব্ধ যে, সরকারি কৌঁসুলিদের গরহাজিরার বিষয়টি এ বার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠিয়ে বলার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

অনেক মামলাতেই সরকারি আইনজীবীদের হাজির না-থাকার ব্যাপারটা দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধান বিচারপতি। অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল, জিপি-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তাদের বারবার নির্দেশ দিয়েছেন, শুনানিতে দায়িত্বশীল সরকারি কৌঁসুলিরা যাতে হাজির থাকেন, তার ব্যবস্থা করুন। প্রধান বিচারপতি মনে করেন, তাতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারে। কারণ, যে-সব মামলায় সরকারও যুক্ত হয়, সরকার পক্ষের বক্তব্য না-শুনে সেখানে রায় দেওয়া যায় না।

বারবার এটা বলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও শুক্রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে সরকারি আইনজীবী গরহাজির থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রধান বিচারপতি। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রকে তিনি বলেন, এ বার তো রাজ্যের মুখ্যসচিবকে আদালতে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি শোনানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। জয়ন্তবাবু আদালতে জানান, ব্যাপারটা দুর্ভাগ্যজনক। এমন ঘটনা যাতে আর না-ঘটে, সেটা তিনি নিশ্চিত করবেন। প্রধান বিচারপতি তাঁকে জানান, এটা এক দিনের ব্যাপার নয়। আগের সপ্তাহেও অন্য একটি মামলার শুনানিতে সরকার পক্ষের কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। তিনি সে-দিনই নির্দেশ দিচ্ছিলেন, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে আদালতে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হোক। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে তাঁকে অনুরোধ করা হয়, মুখ্যসচিবকে যেন আদালতে তলব করা না-হয়। তখনকার মতো তিনি সেই অনুরোধ রাখেন। কিন্তু এ দিন ফের একই ঘটনা ঘটায় তিনি যে অত্যন্ত বিরক্ত, এজি-কে তা জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।

হাইকোর্টের ক্ষোভ শুধু সরকারি কৌঁসুলিদের গরহাজিরা নিয়ে নয়। রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কী দুরবস্থা, সেই বিষয়েও তোপ দেগেছে ডিভিশন বেঞ্চ। কী মামলা ছিল এ দিন?

হাওড়ার আমতার খড়িয়পের বাসিন্দা প্রবীর পাত্র জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে জানান, অরূপকুমার ধাড়া নামে এক ব্যক্তি জাল রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে চিকিৎসা করছেন। ‘সার্টিফিকেট অব ডেথ’ বা মৃত্যুর শংসাপত্র দিচ্ছেন। দিচ্ছেন অন্যান্য শংসাপত্রও। নথিপত্র দাখিল করে প্রবীরবাবু জানান, ওই ব্যক্তি দু’টি জাল রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখছেন।

প্রবীরবাবুর আইনজীবী সুব্রত চক্রবর্তী জানান, তাঁর মক্কেল ২০১৩ সালে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-কে চিঠি দিয়ে ওই চিকিৎসক এবং তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চান। এমসিআই তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। সেখানে যোগাযোগ করেও ওই নামের কোনও চিকিৎসকের খোঁজ মেলেনি। তখন হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করা হয়। গত ৪ জুন তার শুনানিতে হাইকোর্ট এ রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেয়, অরূপকুমার ধাড়া নামে ওই চিকিৎসক এবং আবেদনকারী প্রবীরবাবুর বক্তব্য শুনে আইনি ব্যবস্থা নিন। প্রবীরবাবুর অভিযোগ, মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার আদালতের সেই নির্দেশ মানেননি। তাই জনস্বার্থে নতুন মামলা করা হয় গত ২২ ডিসেম্বর।

এ দিন সেই মামলারই শুনানিতে সময় সরকার পক্ষের কেউ হাজির না-থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানায়, রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার আইনি ব্যবস্থা নেননি। ওই দু’টি রেজিস্ট্রেশন নম্বর আসলে কোন কোন চিকিৎসকের, তা জানিয়েই ক্ষান্ত হয়েছেন। প্রধান বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ সম্পর্কে সরকার পক্ষের নীরবতায় বোঝাই যাচ্ছে, রাজ্যের সাধারণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কী অবস্থায় রয়েছে! সাধারণ মানুষই বা কী অবস্থায় রয়েছেন!! ওই রেজিস্ট্রারকে ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর ডিভিশন বেঞ্চে হাজির থাকার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন জেনে কিছু পরেই তাঁর আদালতে হাজির হন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্তবাবু এবং অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত। সরকারি আইনজীবীদের গরহাজিরা নিয়ে তাঁদের কাছেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

high court GP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE