Advertisement
E-Paper

হুমায়ুন ভাবছেন রাজনৈতিক সন্ন্যাসের কথা

অনুযোগ করছেন না। অভিযোগও নয়। তবে কি, অভিমান? টেলিফোনের ওপারে তাঁর গলায় বাস্তবিকই মেঘ জমে রয়েছে। বার কয়েক গলা ঝেড়ে হুমায়ুন কবীর বলছেন, “কী বলব বলুন তো, বলার কি কিছু আছে? দল যাকে যোগ্য মনে করেছে তাঁকেই প্রার্থী করেছে।” বুধবার, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে দেখা গিয়েছে মুর্শিদাবাদের তিনটি কেন্দ্রের কোনওটিতেই দল তাঁকে ‘যোগ্য’ মনে করেনি।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৯:৪৯

অনুযোগ করছেন না। অভিযোগও নয়। তবে কি, অভিমান?

টেলিফোনের ওপারে তাঁর গলায় বাস্তবিকই মেঘ জমে রয়েছে। বার কয়েক গলা ঝেড়ে হুমায়ুন কবীর বলছেন, “কী বলব বলুন তো, বলার কি কিছু আছে? দল যাকে যোগ্য মনে করেছে তাঁকেই প্রার্থী করেছে।”

বুধবার, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে দেখা গিয়েছে মুর্শিদাবাদের তিনটি কেন্দ্রের কোনওটিতেই দল তাঁকে ‘যোগ্য’ মনে করেনি।

ষোলো মাস আগে কংগ্রেস ছেড়ে আসা প্রাক্তন বিধায়ক শনিবার তাই স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, “যে দল ছেড়ে এসেছি প্রস্তাব থাকলেও সে দলে প্রত্যাবর্তনের প্রশ্ন নেই। তবে কংগ্রেসের খাসতালুকে তৃণমূলকে বিকল্প শক্তি হিসেবে চিনিয়ে দেওয়ার পরেও শাসক দল যোগ্য না মনে করলে সে দলে থেকেই বা লাভ কী!” তবে, অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে নয়, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বলছেন, “আর দল বদল নয়। তৃণমূলে প্রাপ্য সম্মান না পেলে এ বার রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেব।”

রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছিল বছর দুয়েক আগে। ২০১২ সালে ১২ নভেম্বর সরাসরি তৃণমূল ভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সে নালিশই জানিয়েছিলেন রেজিনগরের বিধায়ক হুমায়ুন। মমতার সায় মেলায় পরের দিন যোগ দিয়েছিলেন শাসক দলে। আর, দিন কয়েকের মধ্যেই অধীরের গড়ে ফাটল ধরানোর ‘পুরস্কার’ হিসেবে পান প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রতিমন্ত্রীর পদ।

তবে মাত্র সাড়ে চার মাসের জন্য। উপ-নির্বাচনে নিজের কেন্দ্রেই হেরে গিয়েছিলেন হুমায়ুন। মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্রশ্রয়ে’ অবশ্য বিধায়ক পদ খুইয়েও অন্তত মাস দুয়েক মন্ত্রিত্বের চেয়ার ছাড়তে হয়নি তাঁকে। শেষতক মন্ত্রিত্ব থেকে সরতে হলেও মমতার নির্দেশে তাঁকে বহাল করা হয় মুর্শিদাবাদের কার্যকরী জেলা সভাপতি হিসেবে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় তাঁর সংগঠন প্রসারের কাজেও খুশি হয়েছিলেন দলনেত্রী। বহরমপুর পুর-নির্বাচনের যাবতীয় দায়িত্বও তাই বর্তে ছিল তাঁর উপরেই। তিন-তিন বার বিরোধী শূন্য বোর্ড গড়া অধীরের গড়ে তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম বার দু’টি ওয়ার্ডও দখল করে তৃণমূল। ঘনিষ্ঠ মহলে যা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মমতাও।

দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “লোকসভায় হুমায়ুনের টিকিট পাওয়া সেই সময়ে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।” তা হলে?

তৃণমূল ভবনের আশ্বাস পেয়ে, গত কয়েক দিন ধরে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লকের কর্মিসভাতেও আভাসে ইঙ্গিতে তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, দিল্লি যাওয়ার টিকিট প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছে তাঁর। এই আগাম উচ্ছ্বাসই কি কাল হল তাঁর?

ঘনিষ্ঠদের কাছে হুমায়ুন এ কথাও জানিয়েছিলেন, জেলার তিনটি আসনের যে কোনওটিতে দাঁড়াতে তিনি ‘প্রস্তুত’। এমনকী অধীরের গড় বহরমপুরেও। হুমায়ুন নিজেই বলছেন, “ওই আসনে প্রার্থী করলে এক মাত্র আমিই যে লড়াই দিতে পারতাম তা নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেন না!” তাঁর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর দাবি, “দিন কয়েক ধরেই জেলা কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা হুমায়ুনের কাছে প্রস্তাব দিচ্ছিলেন কোনও ভাবেই তিনি যেন বহরমপুরে অধীরের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাজি না হন।” পুরনো দলের নেতাদের সঙ্গে ঘন ঘন এই যোগাযোগ ভাল চোখে দেখেননি জেলা নেতাদের একাংশ। দলের শীর্ষ নেতাদের এ ব্যাপারে তাঁরাই ‘কান ভারী’ করেন বলেও হুমায়ুন ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ।

এ দিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে, বহরমপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে জেলা সভাপতি মহম্মদ আলিকে। আর, বিবিধ অভিযোগে জেরবার বসিরহাটের বিদায়ী সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামকে পুরনো কেন্দ্র থেকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জঙ্গিপুরে।

গলায় অভিমান, হুমায়ুন বলছেন, “কী আর বলব, দল নিশ্চয় যোগ্য মনে করেছে!”

humayun kabir trinamul murshidabad rahul roy loksabha vote
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy