Advertisement
১৯ মে ২০২৪

হঠাত্‌ সেতু বন্ধ রাখার নোটিসে ধন্দে যাত্রীরা

মেরামতির জন্য নড়বড়ে সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে দুর্গাপুর-বাঁকুড়া রাস্তায় ডিভিসি-র সেচখালের সেতুতে সাঁটিয়ে দেওয়া হল এই নোটিস। সোমবার তা দেখে ধন্দে পড়েন বাস-লরির চালক ও নিত্যযাত্রীরা। কবে থেকে সেতু বন্ধ থাকবে, কত দিন কাজ চলবে, সে সবের উল্লেখ না থাকায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়। সেতু বন্ধ থাকলে বিকল্প কোন পথে যাতায়াত করা যাবে, সে নিয়েও সংশয়ে পড়েন যাত্রীরা। জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

দুর্গাপুর-বাঁকুড়া রোডের সেতুতে সেই নোটিস। নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুর-বাঁকুড়া রোডের সেতুতে সেই নোটিস। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৩
Share: Save:

মেরামতির জন্য নড়বড়ে সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে দুর্গাপুর-বাঁকুড়া রাস্তায় ডিভিসি-র সেচখালের সেতুতে সাঁটিয়ে দেওয়া হল এই নোটিস। সোমবার তা দেখে ধন্দে পড়েন বাস-লরির চালক ও নিত্যযাত্রীরা। কবে থেকে সেতু বন্ধ থাকবে, কত দিন কাজ চলবে, সে সবের উল্লেখ না থাকায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়। সেতু বন্ধ থাকলে বিকল্প কোন পথে যাতায়াত করা যাবে, সে নিয়েও সংশয়ে পড়েন যাত্রীরা। জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

বাঁকুড়া ও দুর্গাপুরের মাঝের এই সেতুটি দক্ষিণবঙ্গের একাংশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠিক মতো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেতুটির হাল বেশ খারাপ। সেচ দফতর দ্রুত মেরামতি শুরু করবে। সে জন্য আগামী শনিবার কয়েক দিন সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। বাঁকুড়ার দিক থেকে বাসগুলি ব্যারাজ পর্যন্ত আসবে। সেখান থেকে যাত্রীরা অটো, ট্রেকার বা অন্য ছোট গাড়িতে চড়ে বীরভানপুর, ডিপিএল কলোনির সরু রাস্তা ধরে স্টেশনে পৌঁছবেন। আবার দুর্গাপুর থেকে বাঁকুড়া যেতে হলে সে ভাবেই স্টেশন থেকে ব্যারাজের কাছে পৌঁছতে হবে। লরি বা অন্য গাড়িকে রানিগঞ্জ হয়ে ঘুরে চলাচল করতে হবে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঘুরতে হবে বলে জানান চালকেরা।

পঞ্চাশের দশকে সেচ দফতর গড়ে তোলে এই সেতুটি। সেটির অবস্থা এখন বেশ খারাপ। কংক্রিটের মেঝে ক্ষয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে ছোট-বড় বহু গর্ত। সেতুটি বসে গিয়ে দু’পাশের রাস্তা থেকে কিছুটা নীচে নেমে গিয়েছে। বৃষ্টি হলে জল জমে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেতুটির এমন পরিস্থিতির জন্য নিয়মিত যানজট হয়। সেতু দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সেচ দফতরের ‘দামোদর হেড ওয়ার্কস ডিভিশন’। দফতরের পক্ষ থেকে দশ টনের বেশি ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বোর্ড টাঙানো হয়েছে। কিন্তু তা মেনে না চলায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পুরনো সেতুর বদলে নতুন সেতু গড়ার আর্জি অনেক ধরে জানাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন সেতু তৈরির কাজ শুরু করে পূর্ত দফতর। বাজেট ধরা হয় প্রায় সাত কোটি টাকা। কিন্তু সেই সেতু সম্পূর্ণ হতে কয়েক বছর লাগবে। তত দিন কাজে আসবে পুরনো সেতুই। দুর্গাপুর পুরসভার ৪ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারপার্সন শেফালি চট্টোপাধ্যায় জানান, সেতুর দু’দিকেই দুর্গাপুর পুরসভার এলাকা রয়েছে। স্কুল, কলেজ, অফিস-কাছারি, হাসপাতাল, বাজার, স্টেশন-সহ নানা প্রয়োজনে মানুষজনকে দু’দিকেই যাতায়াত করতে হয়। তিনি জানান, অবিলম্বে সেতুটি মেরামতির জন্য কয়েক মাস আগে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করা হয়। সম্প্রতি সেচ দফতর সেতুটি মেরামতির জন্য বাজেট অনুমোদন করে।

এই পরিস্থিতিতে বর্ধমান ও বাঁকুড়া, দুই জেলাতেই পরিবহণে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অভিজিত্‌ মুখোপাধ্যায় জানান, শনিবার একটি বৈঠকে ঠিক হয়, সেতু মেরামতি চলাকালীন দুর্গাপুর ব্যারাজ দিয়ে কোনও বড় গাড়ি চলবে না। জেলা পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য রুটও ঠিক করা হয়েছে। আরটিও (বাঁকুড়া) অরিন্দম সেনগুপ্ত জানান, বাঁকুড়া থেকে দুর্গাপুর হয়ে কলকাতা বা আসানসোল যাওয়ার বাসগুলিকে বড়জোড়া মোড় থেকে দুর্লভপুরের রাস্তা ধরে মেজিয়া হয়ে রানিগঞ্জে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে মেজিয়া-রানিগঞ্জ হয়ে যেতে হবে শালতোড়া থেকে দুর্গাপুরগামী লরিগুলিকেও। বাঁকুড়ার অন্য জায়গা থেকে দুর্গাপুর যাওয়ার লরিগুলিকে পাত্রসায়র হয়ে অথবা কোতুলপুর, আরামবাগ রাস্তা ধরে বর্ধমান যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের তরফে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছেও পুরুলিয়া থেকে দুর্গাপুরগামী লরিগুলিকে রঘুনাথপুর, আসানসোল হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

বড়জোড়া থেকে একাধিক স্কুল বাস পড়ুয়াদের নিয়ে দুর্গাপুরে যায়। সেগুলি যেতে পারবে কি না, তা জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসন। বড়জোড়ার বাসিন্দা অনিমেষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার ছেলে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ে। বাস না গেলে খুব সমস্যায় পড়বে সব ছাত্রছাত্রীই।” দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি কংস্থার কর্মী সুমন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের মতো নিত্যযাত্রীদের প্রচণ্ড দুর্ভোগ হবে। পর্যাপ্ত অটোর ব্যবস্থা না করলে সময় মতো কাজে পৌঁছনো যাবে না।”

দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, “সেতু বন্ধ থাকার কথা জানিয়ে ইতিমধ্যে নোটিস দেওয়া হয়েছে। শনিবার থেকে তা কার্যকর হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। তা আবার নোটিস দিয়ে জানানো হবে।” শেফালিদেবী বলেন, “এ ছাড়া উপায় নেই। বিপদের ঝুঁকি দূর করতে গেলে দিন কয়েক দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bridge closed maintanance notice durgapur bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE