Advertisement
E-Paper

লাহৌরের গির্জায় হানা, পাল্টা রোষে দগ্ধ ২

রবিবারের সকাল। নিয়মমাফিক প্রার্থনা চলছিল লাহৌরের দু’টি রোমান ক্যাথলিক গির্জায়। হঠাৎই বিস্ফোরণ। দুই গির্জাতেই। রক্তগঙ্গা বয়ে গেল দুই ধর্মস্থানে। জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের শাখা জামাত-উল-আহরার দাবি করল, এই হামলার পিছনে তারাই রয়েছে। তাদের দুই আত্মঘাতী জঙ্গির হামলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন দুই পুলিশকর্মী, এক কিশোর, এক কিশোরী-সহ মোট ১৫ জন। গুরুতর জখম অন্তত ৮০।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৭
জ্বলছে দুই সন্দেহভাজনের দেহ। প্রত্যক্ষদর্শী উন্মত্ত জনতা। রবিবার লাহৌরে। ছবি: এএফপি।

জ্বলছে দুই সন্দেহভাজনের দেহ। প্রত্যক্ষদর্শী উন্মত্ত জনতা। রবিবার লাহৌরে। ছবি: এএফপি।

রবিবারের সকাল। নিয়মমাফিক প্রার্থনা চলছিল লাহৌরের দু’টি রোমান ক্যাথলিক গির্জায়। হঠাৎই বিস্ফোরণ। দুই গির্জাতেই। রক্তগঙ্গা বয়ে গেল দুই ধর্মস্থানে। জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের শাখা জামাত-উল-আহরার দাবি করল, এই হামলার পিছনে তারাই রয়েছে। তাদের দুই আত্মঘাতী জঙ্গির হামলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন দুই পুলিশকর্মী, এক কিশোর, এক কিশোরী-সহ মোট ১৫ জন। গুরুতর জখম অন্তত ৮০। উন্মত্ত জনতা অবশ্য সে সব জানার আগেই গণপিটুনি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুই সন্দেহভাজনকে।

পাকিস্তানের মাটিতে সংখ্যালঘুদের উপর বা বিভিন্ন ধর্মস্থানে হামলা নতুন নয়। ২০১৩ সালে পেশোয়ারের এক গির্জায় এমনই হামলা চালিয়ে ৮০ জনের প্রাণ নিয়েছিল জঙ্গিরা। তার পরও একাধিক এই ধরনের হামলা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য লোকের। কিন্তু এ বারে হামলার পরে অন্য এক দৃশ্য দেখা গেল। দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা এ দিন রীতিমতো মারমুখী হয়ে ওঠেন। রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ, ধর্না, আগুন কিছুই বাদ দেননি তাঁরা। আর এই ছবি দেখার পরে পাকিস্তানের একাধিক বিশিষ্ট জনের বক্তব্য, জঙ্গিদের অত্যাচার দেখতে দেখতে ক্লান্ত আম-জনতা। এই বিক্ষোভ তারই প্রকাশ।

ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?

জঙ্গি বিস্ফোরণ রেয়াত করেনি এই কিশোরকেও। ছবি: রয়টার্স।

পাক প্রশাসন জানাচ্ছে, রবিবারের সকালে তখন প্রার্থনা চলছিল গির্জায় গির্জায়। লাহৌরের ইউহানাবাদ এলাকাটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত বলে পরিচিত। সেখানেই আধ কিলোমিটারের দূরত্বে রয়েছে সেন্ট জনস্ ক্যাথলিক চার্চ ও ক্রাইস্ট চার্চ। প্রথমে এক জঙ্গি গায়ে বিস্ফোরক বেঁধে ক্যাথলিক চার্চের মূল ফটকের সামনে বিস্ফোরণ ঘটায়। তার উদ্দেশ্য ছিল গির্জার ভিতরে ঢোকা। কিন্তু দরজায় পুলিশের বাধা পেয়ে সে ওখানেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বসে। এর কয়েক মুহূর্ত পরেই ক্রাইস্ট চার্চ গির্জা চত্বরে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি শোনা যায়। দু’টি গির্জাতেই তখন বিপুল ভিড়। বিস্ফোরণের পরেই পালানোর জন্য হুড়োহুড়ি বেধে যায় আতঙ্কিত জনতার মধ্যে। তাতে পদপিষ্ট হয়ে আহতও হন অনেকে। পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে।

কিন্তু ততক্ষণে রণাঙ্গনের চেহারা নিয়েছে গির্জা দু’টির চার পাশের এলাকা। বিস্ফোরণে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া দরজা, জানলা, চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাংসপিণ্ড, সন্তান হারিয়ে প্রবল শোকে কাঁদতে থাকা মা চেনা সব ছবিই ফিরে আসছিল। কিন্তু সেটাই বদলে গেল আচমকা। উন্মত্ত জনতার নজর পড়ে দুই সন্দেহভাজনের দিকে। তারা দুই জঙ্গির সহযোগী ছিল, এমন অভিযোগ তুলে দু’জনকে বেধড়ক পেটাতে থাকে জনতা। শুধু মার নয়, তার পরে তাদের গায়ে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। জনতার দাবি, নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছিল ওই দু’জন। পুলিশ অবশ্য এ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। ঘটনার পর প্রায় হাজার চারেক ক্ষুব্ধ জনতা লাহৌরের নানা জায়গায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। মেট্রো স্টেশনেও হামলা চালায় তারা। ভাঙচুর চলে করাচিতেও। পেশোয়ারেও জনতা বিক্ষোভ দেখায়।

এমন দৃশ্য নজিরবিহীন, স্বীকার করছেন অনেকেই। জনতার এই ক্ষোভের বিস্ফোরণ বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা আর জঙ্গি উপদ্রব নির্বিবাদে মেনে নিতে নারাজ। সে কারণেই এমন প্রতিক্রিয়া। কিছু দিন আগেই হিন্দুরা যাতে নিশ্চিন্তে হোলির উৎসব পালন করতে পারেন, সে জন্য করাচির এক মন্দিরচত্বর ঘিরে মানববন্ধন তৈরি করেছিলেন পাকিস্তানের এক বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। পাক বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই মনে করছেন, পেশোয়ারের স্কুলে নির্বিচার শিশুহত্যা এ দেশের আমজনতাকে একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে। জঙ্গিদের লাগাতার অত্যাচার আর সহ্য করতে চাইছেন না আম-পাকিস্তানি। এ ধরনের হামলা-রক্তপাত কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের যতটা না ক্ষতি করছে, তার থেকে ঢের বেশি ক্ষতি করছে গোটা পাকিস্তানের। এ দিন পঞ্জাব প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীও বলেন, “এ আসলে গোটা পাকিস্তানের উপর হামলা। ওদের কষ্ট বুঝতে পারছি।” ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিসও।

suicide attack lahore church blast two suspects lynched
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy