Advertisement
০২ মে ২০২৪

মুজিবের স্বপ্ন সফল করতে লড়ছে বাংলাদেশ, পাশে থাকুক ভারত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। সেদিন ঢাকায় প্রায় ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করেন। জাতি লাভ করে এক অমূল্য সম্পদ- স্বাধীনতা।

জয়ন্ত ঘোষাল
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ১৯:৪৯
Share: Save:

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। সেদিন ঢাকায় প্রায় ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করেন। জাতি লাভ করে এক অমূল্য সম্পদ- স্বাধীনতা।

সে দিন তো আর শুধু সার্বভৌম এক রাষ্ট্রের প্রাপ্তি নয়, সংগ্রামের আর এক অধ্যায় শুরু। বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন, এই স্বাধীনতা নিয়ে আসবে আর্থিক অগ্রগতি। সামাজিক আশা আকাঙ্খা পূর্ণ হবে। কিন্তু বাস্তব হল অন্য। ৭৫ সালের ১৫ অগস্ট। সে এক সাংঘাতিক দিন। শেখ মুজিবের নিথর মরদেহ তাঁর বাড়ির সিড়ির উপর পড়ে রইল। আর তাঁর দেহ থেকে চুঁয়ে চুঁয়ে রক্তের ধারায় নীচতলার মেঝে পর্যন্ত রঞ্জিত হল।

সে দিন কিন্তু তাঁরা বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষণা করেনি। সুকৌশলে মুস্তাক আহমেদ আওয়ামি লিগের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফসল দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে অপরিবর্তিত রেখেছিলেন। ‘খোদা হাফিজ’ এবং ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে তিনি স্লোগান দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না। মুস্তাক এই মর্মে অর্ডিন্যান্স জারি করেন।

পদ্মায় আর গঙ্গায় এর পর অনেক পানি, অনেক জল প্রবাহিত হয়ে গিয়েছে। মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আবার নব নব রূপে বিকশিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার উন্নয়নমুখী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস বানচাল করার চেষ্টা অব্যাহত। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে পরেই তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টা হয়েছিল। আবার ২০১৩ সালে শাহবাগের বসন্ত আন্দোলন ৭১–এর যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি প্রদানের দাবিতে দেখেছে উত্তাল ঢাকাকে। বাংলাদেশের মানুষের ইসলামিক ধর্মীয় সত্তা আর বাঙালির জাতীয় সত্তার মধ্যে যাতে সমন্বয় না হয়, তার চেষ্টায় সক্রিয় মৌলবাদীরা। আর এই পরিস্থিতিতে ভারতের কাছে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান কূটনৈতিকভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক কূটনীতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারতের বিশেষভাবে প্রয়োজন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার আশাব্যঞ্জক। আবার বিশ্ব সন্ত্রাস দমনে, বিশেষত ভারতকে এ ব্যাপারে সাহায্য করার প্রশ্নে শেখ হাসিনা সরকার যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, তাতে ভারতের আশু কর্তব্য দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করা। দু’দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তিস্তা চুক্তিকে বাস্তবায়িত করা প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। এটি শুধু জল বন্টনের বিষয় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আস্থা অর্জনের বিষয়টিও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকায় গিয়ে এই প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছেন। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে ভারত তার যুক্তরাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধান করে বিষয়টির নিরসন ঘটাতে সক্ষম হবেন।

প্রণব মুখোপাধ্যায়, মনমোহন সিংহ, সলমন খুরশিদ, এসএম কৃষ্ণ এমনকী নরেন্দ্র মোদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বারবার ঢাকায় গিয়েছেন। বাংলাদেশের তিস্তা এক প্রবল আবেগ তাড়িত বিষয়। প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে এ ব্যাপারে কাজ অনেকটা এগিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীকে মজবুত করতে পারলে আন্তর্জাতিক স্তরেও সন্ত্রাস বিরোধী গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি জোরদার হবে। ১৯০৫ সালে যে বঙ্গভঙ্গ হয়, তার মাধ্যমে ব্রিটিশরা মুসলমান ও হিন্দু সমাজে বিভেদ নীতি এনেছিল। কিন্তু এই বিভেদ অকাম্য। মুজিব বেঁচে থাকতে থাকতেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুজিববাদ শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- মুজিববাদের উপাদান। মুজিব এক সাক্ষাৎাকারেও এই কথা বলেছিলেন। বঙ্গ সংস্কৃতি বাংলা ভাষা থেকে মানুষ জাতীয়তাবাদের প্রেরণা পাবে। সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমেই সোনার বাংলা করতে চেয়েছিলেন মুজিব। আজ বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাঁর কন্যার নেতৃত্বে সেই অসমাপ্ত প্রয়াস সমাপ্ত করতে অগ্রণী। ভারতের কর্তব্য, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পাশে থাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE