অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ ‘দ্য ওয়েলথ অব নেশনস্’ বইটা লেখার পর হাসাহাসি কম হয়নি। প্রশ্ন উঠেছিল রাজনীতি, সমরনীতি, কূটনীতি, দুর্নীতি আছে... কিন্তু অর্থনীতিটা আবার কী। এ সব আজব উদ্ভট বিষয় উদ্ভাবনের কারণ বোঝা দায়। বুঝতে সময় লাগলেও ধীরে ধীরে দুনিয়া জেনেছে, অর্থনীতিই জাতির মেরুদণ্ড। তার কাছে বাকি সব তুচ্ছ। কোন দেশ কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে তার হিসেব অর্থনীতির নিরিখে। সেই বিচারেই বাংলাদেশ চমকেছে বিশ্বকে। বিশ্বব্যাঙ্ক, এশীয় ব্যাঙ্ক হতভম্ব। বলছে দেশটা করেছে কী! আমরা তো ভেবেছিলাম বাংলাদেশের গ্রোথ রেট মেরেকেটে ছ’য়ে পৌঁছবে, এখন দেখছি, তারা সাত পেরিয়েছে। এটা কী ভাবে সম্ভব হল কে জানে।
অর্থনীতি ম্যাজিক নয়। জাদুদণ্ডে ভোল পাল্টানো যায় না। অনেক কষ্টে সিঁড়ি ভেঙে উপরে ওঠা। পিছলে পড়লে ফের উত্তরণের সংকল্প। সাফল্যের কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তাঁর ধারণা কিন্তু আলাদা। তিনি বলেছেন, এটা দেশের সব মানুষের পরিশ্রমের ফসল। কামার, কুমোর, সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, প্রান্তিক মানুষের অবদানের কারণেই বড় সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। সব পর্যায়ের মানুষ পরিশ্রম করে দেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরেই হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পা বাড়ান। বার বার তাঁর স্বপ্নভঙ্গ হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা পথ রুখে দেয়। তার সঙ্গে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিশ্বমন্দা। সাফল্য এল ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে। বছর ফুরোনোর আগে মাত্র ন’মাসেই বিশাল চমক।
ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। জয়ের পরেও ভয় যায় না। বছরের শেষে বৃদ্ধির হার দুম করে নেমে আসবে না তো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না-না, তেমন কোনও শঙ্কার কারণ নেই। বরং আরও বাড়তে পারে। দেশের রাজনৈতিক শান্তি বিদ্যমান, বাম্পার ফসল হয়েছে বোরোতে। তাতেই জিডিপি আরও ওপরে ওঠার সম্ভাবনা। এখনও কৃষিতে অবদান কম। জনপ্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ- এই চারটি স্তম্ভ উন্নয়নের ভিত গড়েছে। সমস্যা বিনিয়োগে। গত বছর ছিল ২২.০৭ শতাংশ। এবার একটু কমে ২১.৭৮ শতাংশ। যেভাবেই হোক বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে।