E-Paper

পেঁয়াজে ভারতের চড়া শুল্ক, ঝাঁঝ বাংলাদেশের ভোটে

বাংলাদেশের খাদ্যাভ্যাসে পেঁয়াজ অপরিহার্য হলেও চাহিদার পুরোটা সে দেশে চাষ হয় না। আবার তারা পেঁয়াজের ৯৫ শতাংশই আমদানি করে ভারত থেকে।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৯
An image of Onion

—প্রতীকী চিত্র।

ভারত পেঁয়াজের উপরে রফতানি শুল্ক চাপানোয় ভোটের আগে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারকে। কারণ এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বাড়বে। বিকল্প হিসাবে সরকার তাই মিশর, তুরস্ক ও চিন থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা ভাবছে। এমনিতেই বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম মাত্রাছাড়া হয়েছে। বিরোধীরা এই নিয়ে সরকারকে বিঁধছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত দায়ী— এ কথা প্রচার হলে দেশে ভারত-বিরোধিতাও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, যা নিয়ে চিন্তিত শাসক দল।

বাংলাদেশের খাদ্যাভ্যাসে পেঁয়াজ অপরিহার্য হলেও চাহিদার পুরোটা সে দেশে চাষ হয় না। আবার তারা পেঁয়াজের ৯৫ শতাংশই আমদানি করে ভারত থেকে। কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে রফতানিতে ৪০% শুল্ক আরোপ-সহ কিছু পদক্ষেপ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, পেঁয়াজ রফতানিকে নিরুৎসাহ করার জন্যই এই শুল্ক আরোপ। এই সিদ্ধান্ত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এ দিকে ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে ভোট বাংলাদেশে। সুতরাং পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝ কমাতে বিকল্প বন্দোবস্ত ছাড়া গতি নেই, বুঝেছে হাসিনা সরকার। বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কী ভারত, কী বাংলাদেশ— সবার কাছেই পেঁয়াজের দাম অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়বেই। মিশর, তুরস্ক ও চিন থেকে কতটা কী আমদানি করা যায়, আমরা এখন খতিয়ে দেখছি।”

গত বছর একই কারণে রাতারাতি পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় ভয়ানক বিপাকে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় উঠে যায়। খালাস হতে না পেরে বহু হাজার টন পেঁয়াজ ট্রাক ও জাহাজের কন্টেনারে পড়ে থেকে পচে নষ্ট হয়। সে বারে চিন ও মিশর থেকে বিমান বোঝাই করে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছিল সরকারকে। বাংলাদেশের পক্ষে বারে বারে জানানো হয়েছিল, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দিল্লি নির্দিষ্ট চ্যানেলে বিষয়টি জানালে তারা প্রস্তুতির সুযোগ পায়। কিন্তু এ বারেও ঢাকাকে অন্ধকারে রেখেই দিল্লি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ঢাকা সূত্রের দাবি। গত বছর পেঁয়াজের আকাশছোঁয়া দামের জন্য ভারত-বিরোধিতা উস্কে উঠেছিল বাংলাদেশে। এর আগে কোভিডের ভ্যাকসিনের রফতানিও মোদী সরকার আচমকা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছিল বাংলাদেশ। শেষ মুহূর্তে অনেক বেশি দাম দিয়ে চিন থেকে ভ্যাকসিন কিনে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় হাসিনা সরকারকে। এ বার ভোটের মুখে সরকার-বিরোধী শক্তি পেঁয়াজ নিয়ে দিল্লির মুণ্ডপাতের সুযোগ ছাড়বে না বলেই মনে করেন শাসক দল আওয়ামী লীগের এক বর্ষীয়ান সদস্য। তিনি বলেন, “পেঁয়াজের দাম বাড়ার রাজনৈতিক ঝাঁঝও আমাদের সামলাতে হবে। চোখে জল আসার আগেই সরকার তাই বিকল্প বন্দোবস্ত করার কথা ভাবছে।” তবে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, “এ বার বাংলাদেশে পেঁয়াজের ভাল চাষ হয়েছে। মজুতের পরিমাণও ভাল। পরিস্থিতি তাই আগের বারের মতো হবে না বলেই মনে হয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Onion Price India-Bangladesh sheikh hasina

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy