E-Paper

কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে সৌরশক্তির সাহায্যে তরল জ্বালানি, বিকল্প পথ দেখাচ্ছেন কালনার মতিয়ার

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মারি কুরি ফেলো’, বর্ধমানের কালনার বাসিন্দা মতিয়ার রহমানের গবেষণাপত্র বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকার সাব জার্নাল ‘নেচার এনার্জি’-তে।

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৩ ০৬:২৬
Scientist

‘কৃত্রিম পাতা’ হাতে গবেষণাগারে মতিয়ার রহমান। নিজস্ব চিত্র।

উষ্ণায়ন ঠেকাতে ভরসা গাছের পাতা। গাছের পাতা যে ভাবে বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে অক্সিজেন দেয়, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে সৌরশক্তির সাহায্যে তরল জ্বালানি তৈরির দিশা দেখাচ্ছেন বাঙালি বিজ্ঞানী। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মারি কুরি ফেলো’, বর্ধমানের কালনার বাসিন্দা মতিয়ার রহমানের সেই গবেষণাপত্র বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকার সাব জার্নাল ‘নেচার এনার্জি’-তে।

গাছ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মাটি থেকে জল নিয়ে তৈরি করে শর্করা এবং অক্সিজেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাজ আইআইটির প্রাক্তনী মতিয়ার জানাচ্ছেন, সেই প্রক্রিয়াই তাঁরা অনুসরণ করেছেন ‘কৃত্রিম পাতা’ তৈরি করে। ওই পাতা আসলে যন্ত্র। মতিয়ারের কথায়, ‘‘এই পাতা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও জলের মিশ্রণে রেখে সূর্যালোক দিলেই তা তরল জ্বালানি ইথানল ও প্রপানল তৈরি করবে।’’ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রেইসনার ল্যাব’-এ এই পরীক্ষা থেকে উদ্ভূত গবেষণাপত্রের প্রথম প্রণেতা (ফার্স্ট-অথর) মতিয়ার। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরউইন রেইসনার মুখ্য প্রণেতা (সিনিয়র অথর)।

মতিয়ার জানাচ্ছেন, উষ্ণায়নের প্রকোপ কমাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমাতেই হবে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাপ পর্যবেক্ষক সংস্থা, হাওয়াই দ্বীপের অ্যাটমোস্ফেরিক বেসলাইন অবজ়ারভেটরির ১৫ই মে-র হিসেবে এখন প্রতি দশ লক্ষ শুষ্ক বায়ুকণায় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ৪২৪.২৫। গত বছর তা ৪১৭ পেরোতেই জানা যায়, তা প্রাক্‌ শিল্প-বিপ্লব পৃথিবীর চেয়ে ৫০% বেড়ে গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই এই গবেষণা দিশা দেখাতে পারে বলে মনে করছেন মতিয়ার। তিনি বলছেন, ‘‘এক দিকে, এর ফলে বাতাসে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমানো যাবে। অন্য দিকে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে তরল জ্বালানি তৈরি করায় পেট্রল, কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে নির্ভরতাও কমানো যাবে।’’ কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে অন্য শক্তি প্রয়োগ করেও রূপান্তরিত করা যায়। কিন্তু সেই ধরনের শক্তি প্রধানত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসে যা নতুন করে কার্বন তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে সৌরশক্তির সাহায্যেই কার্বন-ডাই-অক্সাইডে রূপান্তরিত করা যাবে বলে কার্বন নির্গমন হবে ‘নেট জ়িরো।’

মতিয়ার জানাচ্ছেন, এই ‘কৃত্রিম পাতা’টির এক প্রান্তে থাকবে সৌর কোষ ও অনুঘটক। যার মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিজারণ হয়ে ইথানল ও প্রপানল তৈরি হবে। দ্বিতীয় প্রান্তে থাকবে ন্যানো পার্টিকল, যা অনুঘটক হিসেবে জলের জারণ ঘটিয়ে অক্সিজেন তৈরি করবে। প্রক্রিয়াগত ভাবে যা সালোকসংশ্লেষের মতোই। রেইসনার ল্যাব কয়েক বছর ধরেইএ নিয়ে গবেষণা করছিল বলে জানাচ্ছেন মতিয়ার। তবে এই প্রথম সরাসরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে তরল জ্বালানি তৈরি করা গিয়েছে।

সাধারণত তরল জ্বালানি ইথানল আর প্রপানল উৎপাদনে আখ বা ভুট্টা চাষ করতে হয়, যার জন্য বিপুল জমির দরকার। কিন্তু এই পদ্ধতিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকেই সৌরশক্তির সাহায্যে তরল জ্বালানি তৈরি করা যাবে, কমবে কয়লা, পেট্রলের উপরে নির্ভরতা। তা প্রয়োজনও। কারণ, কয়লা, পেট্রল ইত্যাদি সীমিত এবং এগুলোর ব্যবহারে নতুন করে কার্বন উৎপন্ন হয়।

কালনার কদম্বা গ্রামের বাড়িতে কথা বলার সূত্রে মতিয়ার জেনেছেন সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহের কথা। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক বছর পরে তাপমাত্রা পঞ্চাশের কোঠায় গেলে আর আমরা, পরের প্রজন্ম বাঁচতে পারব কি?’’ সেই ভাবনা তাঁর গবেষণাকে অনেকটা উদ্বুদ্ধ করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা আব্দুল হাসিব, মা জিন্নাতুন সকিনা হক, মাস্টারমশাইদের অনুপ্রেরণা ছাড়া এখানে পৌঁছতে পারতাম না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

cambridge university Scientist

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy