Advertisement
০২ মে ২০২৪
রক্তাক্ত শিক্ষালয়ে ফের মৃত্যু

ঠিকানা বদলেও মিলল না রেহাই, ফের খুন মুক্তমনা

ছ’মাসের মধ্যে চার জন। অভিজিৎ রায়। ওয়াশিকুর রহমান। অনন্তবিজয় দাস। এবং আজ নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়— ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে তালিকাটা। বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের রোষের মুখে একের পর এক ব্লগার খুন নিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমালোচনা হলেও প্রশাসন কোনও ভাবেই হিংসা বন্ধ করতে পারেনি।

নিহত নিলয় চট্টোপাধ্যায়।

নিহত নিলয় চট্টোপাধ্যায়।

সংবাদ সংস্থা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

ছ’মাসের মধ্যে চার জন। অভিজিৎ রায়। ওয়াশিকুর রহমান। অনন্তবিজয় দাস। এবং আজ নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়— ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে তালিকাটা। বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের রোষের মুখে একের পর এক ব্লগার খুন নিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমালোচনা হলেও প্রশাসন কোনও ভাবেই হিংসা বন্ধ করতে পারেনি। এ বার দুষ্কৃতীরা নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নামে ওই ব্লগারের বাড়িতে সরাসরি ঢুকে তাঁকে একই কায়দায় কুপিয়ে খুন করে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

তাঁকে যে খুন করা হতে পারে, তা মাস তিনেক আগে বুঝতে পেরেছিলেন নীলাদ্রি। গত ১৫ মে ফেসবুকে লিখেছিলেন সে কথা। অনন্তবিজয় দাসকে হত্যার প্রতিবাদে এক সমাবেশে যোগ দিয়ে ফেরার পথে তাঁকে অনুসরণ করা হয়েছিল বলে লেখেন নীলাদ্রি। এমনকী তাঁর অভিযোগ ছিল, এ ব্যাপারে থানায় গিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। উল্টে শুনতে হয়েছে, ‘এখানে নয়, অন্য থানার অধীনে বিষয়টি পড়ছে। সেখানে যান।’ শুধু তাই নয়, নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বদলে নীলাদ্রিকে দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে লেখা রয়েছে তাঁর প্রোফাইলে।

বাংলাদেশে কট্টরপন্থী জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-প্রশাসন যথেষ্ট সক্রিয় নয় বলে আগেও অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। নীলাদ্রির এই বক্তব্য থেকেও সে কথা স্পষ্ট। বরং কট্টরপন্থীরা যে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই হত্যাকাণ্ড।

রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাঁর ঘরের মেঝে। শুক্রবার ঢাকায়। ছবি: এএফপি।

কারণ অভিজিৎ থেকে শুরু করে অনন্তবিজয়, প্রত্যেককেই মারা হয়েছে প্রকাশ্য রাস্তায়। কিন্তু নীলাদ্রির ক্ষেত্রে যে ভাবে বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর গলা ও ঘাড়ে এলোপাথাড়ি কোপ মেরে চম্পট দিয়েছে জঙ্গিরা, তাতে স্তম্ভিত সকলেই।

শুধু অনুসরণ নয়, কিছু দিন ধরে হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল বছর চল্লিশের নীলাদ্রিকে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় মৌলবাদ-বিরোধী লেখালেখি করতেন তিনি। ব্লগ লিখতেন নিলয় নীল নামে। নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এই কারণে সব ছবি সরিয়ে ফেলেছিলেন। এমনকী নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁর এখনকার ঠিকানা ঢাকার বদলে প্রোফাইলে লিখেছিলেন কলকাতার কথা। গত দু’বছর ধরে ঢাকার উত্তর গোড়ানে একটি পাঁচতলা বাড়ির ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে থাকতেন নীলাদ্রি। আজ দুপুরে সেখানেই হানা দেয় পাঁচ দুষ্কৃতী।

সেই সময়ে আশপাশে লোকজন কম ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘‘শুক্রবার নমাজের পরে বাড়ি দেখতে আসার নাম করে চার-পাঁচ জন নীলাদ্রির ফ্ল্যাটে ঢোকে। স্ত্রীকে আটকে রাখে পাশের ঘরে। তার পরেই তাঁকে খুন করে তারা।’’ পরে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার জানান, অন্য ব্লগারদের মতো নীলাদ্রিকে একই কায়দায় খুন করা হয়েছে। নমাজের সময় আশপাশে লোকজন থাকবে না ধরে নিয়ে পরিকল্পনামাফিক নীলাদ্রির ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছিল পাঁচ জনওসি মুস্তাফিজুরের দাবি, চাপাতি দিয়েই মারা হয়েছে নীলাদ্রিকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরের পর কোপ মেরেছে হত্যাকারীরা। আল কায়দা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস) এই হত্যার দায় নিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থার দাবি। বাংলাদেশে তাদের সংস্থার নাম, আনসার আল ইসলাম। তারা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘আল্লার শত্রুকে আনসার আল ইসলামের মুজাহিদিন জবাই করেছে।’ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে খুন হন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়। ৩০ এপ্রিল সকালে ঢাকার তেজগাঁওয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে খুন আর এক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু। তার এক মাসের মাথায় সিলেটে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একই ভাবে খুন হন মুক্তমনা আর এক ব্লগার অনন্তবিজয় দাস।

এই সংক্রান্ত আরও খবর:

বারবার আঘাত নামছে মুক্ত মনের উপর
চাপাতির কোপ থামবে কবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE