আফগানিস্তানের মাটিতে চিন সামরিক ঘাঁটি বানাতে চাইছে বলে খবর। কিন্তু চিন সম্পূর্ণ অস্বীকার করছে সে কথা। —প্রতীকী ছবি / এএফপি।
চিনের নজর এ বার আফগানিস্তানে। জঙ্গি রোখার অছিলায় আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটি বানাতে চাইছে চিন। কাবুলের সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনাও শুরু করে দিয়েছেন বেজিংয়ের প্রতিনিধিরা। কাবুল এবং বেজিং, দু’তরফের কর্তারাই স্বীকার করেছেন এই আলোচনার কথা।
আফগানিস্তানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চিন সামরিক ঘাঁটি বানাতে চাইছে বলে খবর। ওয়াখান করিডরে এই ঘাঁটি বানানোর কথা হচ্ছে, খবর কাবুল সূত্রের। ওয়াখান করিডর হল এমন একটি অঞ্চল, যার সঙ্গে আফগানিস্তানের মূল স্রোতের যোগাযোগ বেশ ক্ষীণ। ওয়াখানের উত্তরে অবস্থান করছে পামির, আর দক্ষিণে রয়েছে কারাকোরাম। দুই দুর্গম পর্বতমালার মাঝখানে ওয়াখান একটা উপত্যকার মতো, পামির আর কারাকোরামের সীমানাও বটে। দুর্গম ওয়াখানে জীবনযাত্রা কঠিন, কিন্তু দীর্ঘ যুদ্ধের প্রায় কোনও ছাপই ওয়াখানে পড়েনি। ওয়াখানের বাসিন্দাদের অনেকে জানেনই না, তালিবানকে হঠিয়ে আফগানিস্তানে গণতন্ত্র ফেরানোর যুদ্ধে কতটা বিধ্বস্ত হয়েছে গোটা দেশ।
এ হেন দুর্গম ওয়াখানের পূর্ব প্রান্ত চিনের শিনচিয়াং প্রদেশের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। পশ্চিম চিনের শিনচিয়াঙে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বাস বড় সংখ্যায়। এই উইঘুর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে চিনের কমিউনিস্ট কর্তৃপক্ষের বিরোধ দীর্ঘ দিনের, তার জেরে উইঘুররা বিদ্রোহীও। ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম বা এতিম) নামে এক জঙ্গি সংগঠন ওই অঞ্চলে সক্রিয় এবং শিনচিয়াং প্রদেশে তারা মাঝেমধ্যেই নাশকতা চালায়।
এতিম জঙ্গিদের নির্মূল করতে শিনচিয়াং প্রদেশে কঠোর দমন নীতি প্রয়োগ করে আসছে চিন। অনেক ক্ষেত্রেই চিনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠছে। কিন্তু ওই রকম বলপ্রয়োগের রাস্তায় হেঁটেও চিন এতিম জঙ্গিদের নির্মূল করতে পারছে না। কারণ নাশকতা ঘটিয়ে জঙ্গিরা শিনচিয়াং প্রদেশের সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ কিরঘিজস্তান বা তাজিকিস্তান বা আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ছে। আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডর এখন এতিম জঙ্গিদের সবচেয়ে প্রিয় করিডর হয়ে উঠেছে বলে বেজিংয়ের দাবি। মধ্য এশিয়া থেকে আইএস এবং আল কায়েদা জঙ্গিরাও ওয়াখান হয়ে শিনচিয়াং প্রদেশে ঢুকছে বলে বেজিং মনে করছে।
জঙ্গি অনুপ্রবেশ রোখার বিষয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই কথা চালাচ্ছে চিন। ওয়াখানে সম্প্রতি আফগান ও চিনা বাহিনীর যৌথ নজরদারি বা রুট মার্চও দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে। ওয়াখানে কিরঘিজ সম্প্রদায়ের বাস। তাঁদের সঙ্গেই কথা বলেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। কিরঘিজ মোড়লরাই মিডিয়াকে জানিয়েছেন, চিনা বাহিনীর টহল বা অন্যান্য কার্যকলাপ ওয়াখানে মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। চিন বা আফগানিস্তান কিন্তু এ কথা স্বীকার করছে না। আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে কোনও রকম সামরিক কার্যকলাপে চিন অংশ নেয়নি বলে বেজিং দাবি করছে। কাবুলের মুখেও কুলুপ এ বিষয়ে।
আরও পড়ুন: অবাধ বাণিজ্য লক্ষ্য, চিনে মে
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র মহম্মদ রাদমানেশ সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে সম্প্রতি বলছেন, ‘‘সামরিক ঘাঁটিটা আমরাই তৈরি করব, চিন আমাদের অর্থনৈতিক ভাবে এবং সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করবে, আমাদের বাহিনীকে তারা প্রশিক্ষণও দেবে।’’ বিষয়টি নিয়ে ডিসেম্বর মাসেই দু’দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে কথা হয়েছে বলে তিনি জানান। বেজিংয়েই সেই আলোচনা হয়েছিল বলেও রাদমানেশ জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও অনেক বিষয় স্পষ্ট হওয়া বাকি রয়েছে বলে আফগান মুখপাত্রের দাবি। আর কাবুলের চিনা দূতাবাসের এক কর্তার দাবি, চিন শুধু আফগানিস্তানের ‘সক্ষমতা বাড়াচ্ছে’।
আরও পড়ুন: সু চি-র বাড়ি লক্ষ করে পেট্রোল বোমা
আফগানিস্তানের উন্নয়নে চিন ইতিমধ্যেই খরচ করতে শুরু করেছে। তার সুবাদে কাবুল এবং বেজিং কিছুটা কাছাকাছিও এসেছে। সেই নৈকট্যকে কাজে লাগিয়েই চিন এ বার ওয়াখানে সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের উন্নয়নে আমেরিকা এবং ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। সড়ক, বিদ্যুৎ-সহ নানা পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে বহু ভারতীয় এখন আফগানিস্তানে থেকে কাজ করছেন। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করছে ভারতীয় বাহিনীই। আর মার্কিন সামরিক বাহিনী তো বিপুল সংখ্যায় রয়েছেই সে দেশে। এ বার চিনও সেই পথেই হাঁটতে চায়। মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত আফগানিস্তান কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সে দেশে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চিন এখন তৎপর বলে বিশেষজ্ঞ মহলের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy