দেখা গেল, ঘটনাচক্রে, মহাকাশ গবেষণায় ভারতের সাফল্যের পরিমাপের ক্ষেত্রেও গত তিন বছরে আমূল বদলে গিয়েছে চিনা সরকারি সংবাদমাধ্যমের অবস্থান। যখন ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে প্রথম বারের চেষ্টাতেই ইসরো সফল ভাবে পাঠিয়েছিল ‘মার্স অরবিটার মিশন’, তখন কিন্তু চিনা সরকারি সংবাদমাধ্যম বাহবা দিয়েছিল ভারতের। চিনা সরকারি সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে লেখা হয়েছিল ইসরোর সাফল্যের সেই খবর। চিনের সরকারি সংবাদপত্রে ভারতের ওই সাফল্যকে ‘এশিয়ার গর্ব’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এর পর থেকে মহাকাশ গবেষণায় ভারতের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে আগ্রহী চিন। তার পর ইয়াংসি নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। চিনের মতিগতিও বদলে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘‘ভারতবাসীর এই সাফল্যে গর্বিত বোধ করার কারণ থাকতেই পারে। তবে কোনও দেশ এক সঙ্গে কতগুলি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাতে পারল, তা সেই দেশের মহাকাশ গবেষণার সাফল্যের মাপকাঠি হতে পারে না। ভারতের মহাকাশ গবেষণা আমেরিকা ও চিনের থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। বড়সড় মহাকাশ অভিযানের জন্য ভারতের রকেট প্রযুক্তি এখনও ততটা উন্নত হতে পারেনি। ভারত এখনও পর্যন্ত এক জন মহাকাশচারীকেও পাঠাতে পারেনি মহাকাশে। মহাকাশ স্টেশন বানানোরও কোনও পরিকল্পনা নেই ভারতের। আর ইতিমধ্যেই চিনের দু’জন মহাকাশচারী ৩০ দিন কাটিয়ে ফেলেছেন মহাকাশে। তাই বলা উচিত, এই সাফল্যের তাৎপর্য যথেষ্টই সীমিত। এটা ভারতের বিজ্ঞানীরাও জানেন। আসলে সবটাই সংবাদমাধ্যমের ফলাও প্রচার।’’
আরও পড়ুন- ছিটকে বেরোচ্ছে ১০৪ উপগ্রহ, ভিডিও-সেলফি পাঠাল পিএসএলভি
কিন্তু ঘটনা হল, সেই ‘প্রচার’কে নস্যাৎ করার জন্যও চিনও দ্বারস্থ হয়েছে সংবাদমাধ্যমেরই, পাল্টা প্রচারের জন্য!
ও দিকে, আমেরিকার প্রথম সারির দৈনিক ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ ভারতের এই সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আর সর্বাধিক প্রচারিত মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ লিখেছে, ‘‘এই সাফল্য ভারতকে বিশ্বের অন্য দেশগুলির মহাকাশ গবেষণায় এক কুশীলব করে তুলল। যে ভাবে ইসরো ওই ১০৪টি উপগ্রহকে একই সঙ্গে মহাকাশে পাঠিয়েছে, তাতে দক্ষতার ছাপ রয়েছে যথেষ্টই।’’
আর সিএনএন কী মন্তব্য করেছে, জানেন?
সিএনএনের বক্তব্য, ‘‘মহাকাশ গবেষণা নিয়ে আমেরিকা আর রাশিয়ার দ্বৈরথের কথা ভুলে যান। সেই লড়াইটা এখন হচ্ছে এশিয়ায়।’’ ইসরোর সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছে লন্ডন টাইমসও। তারিফ করেছে বিবিসি ও ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ও।