বিপুল কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য চিনের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তো বটেই। মাও জে দং এবং দেং জিয়াও পিঙের পরে সবে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে তাঁর নাম উঠেছে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) গঠনতন্ত্রে। এ বার কি তা হলে শি চিনপিঙের হাত ধরে চিন অর্থনীতি আর সামরিক শক্তির দাপটে দুনিয়া শাসন করতে বেরোবে হইহই করে?
অভয় দিতে আসরে নেমেছেন চিনা কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বোঝাচ্ছেন, একাধিপত্য দেখানোর কোনও বাসনা তাঁদের নেই। তাঁরা আসলে ২০৩৫ সালের মধ্যে নতুন চিন গড়তে চান। আধুনিক প্রযুক্তির হাতিয়ারে যে দেশের সেনা থেকে কৃষক শক্তিশালী হবেন। প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই নতুন চিন গড়ার যাত্রা শুরু হবে। দেশের সরকার এবং সিপিসি-র শীর্ষে শি আরও জাঁকিয়ে বসার পরে বিশ্ব জুড়ে জল্পনার ঘোড়া যাতে লাগামছাড়া না হয়, তার জন্যই শহরে শহরে তাঁদের নতুন রোডম্যাপ ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছেন চিনা কর্তৃপক্ষ। পার্টি কংগ্রেসের পরে চিনের তরফে এমন উদ্যোগ অভিনব।
সিপিসি-র ১৯তম পার্টি কংগ্রেস বেজিংয়ে সাঙ্গ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে কলকাতায় চিনের কনসাল জেনারেল মা চানউ যেমন শুক্রবার তেমন উদ্যোগেই সামিল হলেন। পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত লক্ষ্যের ব্যাখ্যা করলেন, জবাব দিলেন নানা প্রশ্নের। তিনিই বললেন, ‘‘একাধিপত্য নয়। অন্য কোনও দেশের ক্ষতি করে চিন এগোবে না। আধুনিক দেশ গড়ে তোলার পথ হবে শান্তিপূর্ণ। আরও সহযোগিতা, আরও আদানপ্রদানের দরজা খুলে দেওয়া হবে।’’ মেরিটাইম সিল্ক রুট বা ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবোর)-এর মতো প্রকল্পে যে তাঁরা এগোবেন, তা-ও জানাচ্ছেন চানউ। কিন্তু একই সঙ্গে বলছেন, আগ্রাসী বিদেশ নীতি নিয়ে অহেতুক সংঘাতে যাবেন না।
কিন্তু গোটা জল্পনার সূত্রপাত যে শি-র ক্ষমতায়নকে ধরে, তার রহস্য কী? মাও বা দেং জিয়াওয়ের সঙ্গে শি-কে একাসনে বসানো হচ্ছে কেন? চিনা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এর উত্তর নিহিত রয়েছে গত পাঁচ বছরের লড়াইয়ে। তাঁদের ১৪৩ কোটির দেশের শাসনভার পাঁচ বছর আগে যখন শি-র হাতে যায়, তখন অন্তত ১০ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে। আর চিনা বৈশিষ্ট্যযুক্ত সমাজতন্ত্রের স্বপ্নের ফাঁকে বাসা বেঁধেছে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি। এই দুই দানবের বিরুদ্ধেই লড়তে হয়েছে সিপিসি-র সাধারণ সম্পাদককে। দারিদ্রসীমা বাড়িয়ে দিয়েও কমিয়ে ফেলা হয়েছে গরিবের সংখ্যা। আর দুর্নীতির দায়ে ঝাঁকে ঝাঁকে নেতা-কর্মীর ঘাড়ে নেমে এসেছে শাস্তির খাঁড়া। চানউয়ের কথায়, ‘‘খাদ্য বা মাথার উপরে ছাদ নিয়ে এখন চিন্তা নেই। কিন্তু এখনও চার কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে। তাঁদের তুলে আনতে হবে। আর দুর্নীতির সঙ্গে আপস করা হবে না বলে কঠোর রূপরেখা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।’’
কমিউনিস্ট পার্টিতে শি নাম লিখিয়েছিলেন ১৫ বছর বয়সে। টানা ১৭ বছর কাজ করেছেন গ্রামে। তৃণমূল স্তর থেকে শীর্ষে উত্থান। চিনে গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন করলে জবাব দেন, কোন জুতো কার জন্য ঠিক, সেটা যার পা, তারই বলা উচিত! দ্বিতীয় বার প্রেসি়ডেন্ট হওয়ার পরেই হোয়াইট হাউস থেকে ফোন গিয়েছে। শীঘ্রই বেজিংয়েও যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গোটা দুনিয়ার এই সম্ভ্রম যাতে আতঙ্কে বদলে না যায়, সেই অভয়ই দিতে নেমেছে চিন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy