ক্রিস্টোফার ওয়াইলি।
প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছেন কানাডার ২৮ বছর বয়সি যুবকটি। ক্রিস্টোফার ওয়াইলি। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হয়ে কাজ করেছেন এক সময়ে। এখন তাদেরই কাজকর্ম ফাঁস করে চলেছেন একে একে। আজ যেমন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এক কমিটিতে হাজির হয়ে দাবি করেছেন, ভারতে ওই সংস্থা কাজ করেছে কংগ্রেসের সঙ্গে। অ্যানালিটিকার কাজকর্মে ব্রেক্সিটের ফলাফল প্রভাবিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ওয়াইলির দাবি, ভারতে কংগ্রেস ছাড়াও বেশ কিছু প্রকল্পে প্রচুর কাজ করেছে সংস্থাটি। এ দিন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘ডিজিটাল, কালচার মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্ট কমিটি’র সামনে ঘণ্টাখানেক সাক্ষ্য দেন ওয়াইলি। লেবার পার্টির পল ফারালি ভারতে অন্যালিটিকার কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমার ধারণা কংগ্রেস ওদের খদ্দের। তবে আমি জানি। ও দেশে ওরা বিভিন্ন রকম প্রকল্পে কাজ করেছে। কোনও জাতীয় প্রকল্পের কথা মনে নেই তবে আঞ্চলিক স্তরে করেছে। ভারত এত বড় দেশ যে একটা রাজ্যই যথেষ্ট। ভারতে ওদের অফিস আছে। কর্মী আছে। আপনারা চাইলে, ভারত সংক্রান্ত কিছু নথিও আপনাদের দিতে পারি।’’ ফারালি এই প্রস্তাবে স্বাগত জানান।
ভারতে ক’দিন ধরেই তুমুল হইচই চলছে এ নিয়ে। আজ তাতে ঘি ঢেলেছেন ওয়াইলি। তাঁর সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু প্রকাশ্যে আসতেই মোদী সরকারের আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মুন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ কংগ্রেস ও তার সভাপতি রাহুল গাঁধীকে নিশানা করে সাংবাদিক বৈঠক করেন। গুজরাতের নির্বাচনে কংগ্রেস অ্যানালিটিকার সাহায্য নিয়েছিল বলে আগেই অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, রাহুলের মুখে ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’-এর মতো শব্দ ওদেরই জোগানো। আজ রবিশঙ্কর বললেন, ‘‘রাহুল গাঁধী সব অস্বীকার করে যাচ্ছিলেন। এখন সব ফাঁস হয়ে গেল। কংগ্রেস ও রাহুল গাঁধীকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে।’’
মুখ খুলেছে কংগ্রেসও। রণদীপ সুরজেওয়ালা সন্ধেয় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা কখনও ওদের পরিষেবা নিইনি।’’ সুরজেওয়ালার দাবি, এটা চক্রান্ত। অ্যানালিটিকার ভারতীয় শাখার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাই ফাঁস করে দিয়েছেন, কংগ্রেসকে হারাতে এক জন ভারতীয় ধনকুবের তাঁদের কাছে টাকা ঢেলেছিলেন। এই সত্যটি থেকে নজর ঘোরাতেই চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি।
ওয়াইলি এ দিন জানান, মাইক্রো-টার্গেটিং তথা ব্যক্তিবিশেষ বা বিশেষ জনগোষ্ঠীকে নিশানা করে প্রচার চালিয়ে অবিশ্বাস্য রকম সফল হয়েছে অ্যানালিটিকা। যেখানে যখন যে প্রকল্পে তারা কাজ করেছে, সেখানেই গড়ে অন্তত ১০ শতাংশ মানুষকে প্রভাবিত করে তাঁদের মত বদল করিয়ে ছেড়েছে। অন্যরা এমন ক্ষেত্রে মাত্র ১ শতাংশ সাফল্য পায়। ফলে অন্য প্রতিযোগীদের চেয়ে দশ গুণ সফল এই কেমব্রিজ অন্যালিটিকা। তারা বলত, এর পিছনে রয়েছে তাদের গোপন মশলা (সিক্রেট সস)। তার স্বরূপটি সামনে এনে দিয়েছেন ওয়াইলি। শুধু ভারত, আমেরিকা বা ব্রিটেন নয়। অ্যনালিটিকার জাল ছড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ওয়াইলি আজ জানিয়েছেন, ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা ‘ব্ল্যাক কিউব’ নাইজিরিয়ার প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন-সহ সে দেশের নেতাদের ও বিভিন্ন প্রকল্প তথ্য হাতিয়েছিল অ্যানালিটিকার মাধ্যমে। গত সপ্তাহেই এমন খবর বেরিয়েছে কিছু ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যমে। ‘ব্ল্যাক কিউব’-এর দাবি, এ সব পুরো মিথ্যে। এ দিন ওয়াইলির সঙ্গে থেকে পল অলিভিয়ে নামে এক তথ্য-প্রযুক্তি বিশারদও ওই কমিটিকে কিছু তথ্য জোগান। তিনি জানান, ওই সংস্থায় ওয়াইলির পূবর্সূরি ছিলেন রোমানিয়ার নাগরিক ড্যান মুরিসান। তিনি ভারতে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছিলেন। ২০১২ সালে কেনিয়ায় তিনি রহস্যজনক ভাবে মারা যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy