চলছে জীবাণুমুক্ত করার কাজ।
আশঙ্কা করা হচ্ছিল গত ক’দিন ধরেই। বিশেষজ্ঞেরা বলছিলেন, ইউরোপে মৃত্যুর সংখ্যা খুব দ্রুত এশিয়াকে ছাপিয়ে যাবে। সেটাই এ বার সত্যি হল। করোনা-সংক্রমণে মৃত্যুর নিরিখে আজ চিনকে পেরিয়ে গেল ইটালি। চিনে মৃেতর মোট সংখ্যা এখন ৩,২৪৫। ইটালিতে ৩,৪০৫। গোটা দেশ এখনও তালাবন্দি করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকার। স্কুল বন্ধ থাকবে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। ২৫ মার্চ পর্যন্ত ইটালিতে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তার সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে।
গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৯,৮২৮। আক্রান্ত ২,৩৬,৭০৩। তবে সেরে উঠেছেন কমপক্ষে ৮৬,৬৭৬ জন।
ব্রেক্সিট-মধ্যস্থ মিশেল বার্নিয়ে-ও আক্রান্ত কোভিড-১৯-এ। সংক্রমণের খবর আজ নিজেই জানিয়েছেন তিনি। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে আজ একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন বার্নিয়ে। যেখানে দেখা গিয়েছে, বই ভর্তি একটি তাকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন ফরাসি বিদেশমন্ত্রী। পরনে সোয়েটার। ৬৯ বছরের ইইউ কর্তা বলেছেন, ‘‘গত কাল জানতে পেরেছি যে, আমিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। নিজেকে পুরোপুরি ঘরবন্দি করে ফেলেছি। আমি ঠিক আছি। আমি আর আমার দলের সকলেই যাবতীয় নির্দেশিকা মেনে চলছি।’’ আক্রান্ত হয়েছেন মোনাকোর রাজা দ্বিতীয় অ্যালবার্টও।
ইরানের পরিস্থিতি উন্নতির কোনও লক্ষণ আপাতত নেই। আজই ১৪৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে নতুন করে। দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রকই জানাচ্ছে, প্রতি দশ মিনিটে সেখানে এক জন নাগরিকের মৃত্যু হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা ১,২৮৪। আক্রান্ত ১৮ হাজারেরও বেশি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ইরানে মৃতদের মধ্যে এক জন ভারতীয় রয়েছেন। গত কালও ২০১ জন ভারতীয়কে ইরান থেকে ভারতে ফেরানো হয়েছে। তবে সেখানে এখনও কিছু ছাত্রছাত্রী ও পুণ্যার্থী রয়েছেন বলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে।
ইউরোপের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ইটালি, স্পেন, জার্মানি আর ফ্রান্সের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনাভাইরাসের আক্রমণে ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন শতাধিক মানুষ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা লন্ডনের। এখানে স্কুল বন্ধ হলেও বরিস জনসনের সরকার এখনও গোটা শহর পুরোপুরি তালাবন্দি করার পথে হাঁটেনি। তবে শহর জুড়ে টিউব পরিষেবায় রাশ টানা হচ্ছে। কমপক্ষে ৪০টি টিউব স্টেশন বন্ধ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। বিশেষ করে আন্ডারগ্রাউন্ড টিউবের সংখ্যা কমানো হচ্ছে। কমছে বাসের সংখ্যাও। খুব প্রয়োজন ছাড়া লন্ডনবাসীকে বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করেছেন শহরের মেয়র সাদিক খান। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কাল এক বার্তায় আরও কঠোর পদক্ষেপ করা হতে পারে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তবে প্রয়োজনে নিজেকে ঘরবন্দি করার ক্ষেত্রে সংশয় থাকার কথা নয়।’’ কাফে, পাব, রেস্তরাঁ কী ভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা।
ইটালির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃত্যু বাড়ছে স্পেনে। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ বেড়েছে। মৃতের সংখ্যা ৭৬৭। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র মাদ্রিদ শহরেই প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জন সংক্রমিত। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৭,১৪৭ জন।
জার্মানিতেও হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজারে পৌঁছেছে। গত এক দিনেই ২,৮০০ মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা সেখানে এখনও পর্যন্ত ২০। তবে খুব শীঘ্রই সেখানে মৃত্যু বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছোট ছোট শহরগুলিকে ইতিমধ্যেই তালাবন্দি করা হয়েছে। বড় শহরগুলিও সেই পথে হাঁটবে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বার্লিনের মেয়র মাইকেল মুলার আজই বলেছেন, ‘‘শহর তালাবন্ধ করে দেওয়ায় সত্যিই কাজ হতে পারে। তাই আগামী কয়েক দিনে তেমনটা যে করা হবে না, তা এখনই বলতে পারছি না। সবার আগে পার্কগুলি বন্ধ করা হবে।’’
গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে ৪০ শতাংশ। মার্কিন বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র প্রবীণেরাই নন, কমবয়সিদেরও কাবু করছে এই ভাইরাস। মে মাসে নির্ধারিত কান চলচ্চিত্র উৎসব হবে না বলে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে। হতে পারে জুনের শেষে।
একই ভাবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই নতুন করে সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চিনের মতো দেশে সংক্রমণ অনেকটা কাবু হলেও বিদেশ ফেরত নাগরিকদের মাধ্যমে ওই সব দেশে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ইউরোপের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই অবস্থায় সেখানকার পড়ুয়ারা দেশে ফিরছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকের শরীরেই দেখা যাচ্ছে করোনার লক্ষণ। যা দেখে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। পাকিস্তানেও আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চারশোর কাছাকাছি।
সংক্রমণ পরীক্ষা না করে যদি ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে বলে আজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। তাঁর হুঁশিয়ারি, ঠিক মতো পরীক্ষা না-করলে বিশেষ করে গরিব দেশগুলি এর ফলে বিপদে পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy