Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Coronavirus

অপুষ্টি-ক্ষুধা বাড়াবে অতিমারি: রাষ্ট্রপুঞ্জ

রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত এক দশকে সারা পৃথিবীতে ক্ষুধা এবং অপুষ্টির কবল থেকে দরিদ্রদের একাংশকে বার করে আনার ক্ষেত্রে যে সাফল্যের মুখ দেখা গিয়েছিল, তাকে অনেকটাই ধাক্কা দিতে পারে কোভিড-অতিমারি।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০২:৫৬
Share: Save:

করোনার কামড়ে বিশ্ব জুড়ে দারিদ্র, বেকারত্ব এবং শিশু শ্রমের সমস্যা যে প্রবল ভাবে মাথা তুলতে পারে, সে বিষয়ে আগেই সাবধান করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এ বার ক্ষুধা এবং অপুষ্টি নিয়েও একই রকম আশঙ্কার কথা শোনাল তারা।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত এক দশকে সারা পৃথিবীতে ক্ষুধা এবং অপুষ্টির কবল থেকে দরিদ্রদের একাংশকে বার করে আনার ক্ষেত্রে যে সাফল্যের মুখ দেখা গিয়েছিল, তাকে অনেকটাই ধাক্কা দিতে পারে কোভিড-অতিমারি। শুধু এই কারণে এই ২০২০-র শেষ থেকেই ধারাবাহিক ভাবে খিদে-পেটে থাকতে হতে পারে বাড়তি ১৩.২ কোটি মানুষকে! এই ধারা বজায় থাকলে এবং সমস্ত দেশের সরকার সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা না-নিলে, ২০৩০ সাল নাগাদ অভুক্ত এবং অর্ধভুক্তের সংখ্যা পৌঁছতে পারে ৮৪ কোটিতে। এখন সংখ্যাটা ৬৯ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ৮.৯%।

শুধু খাবার বাড়ন্ত হওয়া যে একমাত্র সমস্যা, এমন নয়। মাথাব্যথার কারণ পর্যাপ্ত পুষ্টির খাবার না-পাওয়াও। সমীক্ষা অনুযায়ী, এই অপুষ্টির কামড় সব থেকে বেশি এশিয়ায়। খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টি না-পাওয়া মানুষের সংখ্যা এই মহাদেশে ৩৮.১ কোটি। দ্রুত এই সংখ্যা বাড়ছে আফ্রিকা (২৫ কোটি) এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জেও (৪.৮ কোটি)। আবার জনসংখ্যার অনুপাতে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা সব থেকে বেশি আফ্রিকায় (১৯.১%)। তার পরে এশিয়া (৮.৩%) আর লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ (৭.৪%)।

আরও পড়ুন: চিন সাগর নিয়ে বেজিংকে কড়া বার্তা আমেরিকার

সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার পাননি ৩০০ কোটি মানুষ! পুষ্টির অভাবে বৃদ্ধি থমকে গিয়েছে পাঁচ বছর কিংবা তার কমবয়সি ১৯ কোটি শিশুর! অথচ এই একই পৃথিবীতে শুধু ওই বয়সের ৩.৮ কোটি শিশুর সমস্যা বাড়তি ওজন বা ওবেসিটি। বড়দের মধ্যে এই বাড়তি ওজনের অসুখ প্রায় মহামারি। তা ডেকে আনছে বহু জটিল রোগকেও। তাই রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) পরামর্শ, যাঁদের সামর্থ রয়েছে, তাঁদের যেমন খাবারে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, তেমনই দরিদ্রদের জন্য পুষ্টিকর খাবার জোগানোয় মন দিতে হবে সমস্ত দেশের সরকারকে। এখন দিনে ১.৯ ডলার রোজগার করলেই, তাঁকে ধরা হয় দারিদ্র সীমার উপরে। কিন্তু আজকের দামে ওই আয়ে যে পুষ্টির জন্য জরুরি আনাজ, ফল, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, প্রোটিন সমৃদ্ধ পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার পরিবারকে জোগানো সম্ভব নয়, তা কার্যত মেনে নিয়েছে এই সমীক্ষা।

বিশ্ব খাদ্য প্রকল্পের কর্ণধার ডেভিড বিসলির কথায়, “আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, করোনার চোখরাঙানি-সহ যাবতীয় সমস্যা সত্ত্বেও পৃথিবীর প্রত্যেকের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতো সম্পদ এই দুনিয়ায় মজুত রয়েছে।” রাষ্ট্রপুঞ্জেরও বক্তব্য, “পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭৮০ কোটি। কিন্তু কৃষি-উৎপাদন ১০০০ কোটি জনের মতো। তাই জোগানে ঘাটতি নয়, মূল সমস্যা দারিদ্র, আর্থিক অসাম্য, ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত, সমাজের নির্দিষ্ট কিছু অংশকে কোণঠাসা করার প্রবণতা এবং অবশ্যই প্রশাসনিক খামতি।” অর্থাৎ ইঙ্গিত, সরকারের সদিচ্ছা আর সঠিক পরিকল্পনা থাকলে, খালি পেটে ঘুমোতে যাওয়ার দরকার পড়বে না কারওরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Malnutrition UN United Nations
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE