বাংলাদেশের ব্লগার রাজীব হায়দার খুনের মামলায় ২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত। আরও ৬ জনকে এই হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে এই রায়ে প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত ব্লগার রাজীবের বাবা নাজিমউদ্দিন। রাজীবের লেখা পছন্দ না হওয়াতেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে পাঁচ জন আসামি নিজেরাই স্বীকার কথা সত্ত্বেও কেন তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হল না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন নাজিমউদ্দিন। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের এই রায়কে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছেন তিনি। বিচারক এ দিন ব্লগারদেরই লেখার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
যে দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত, তাদের নাম ফয়জল বিন নাইম ও রেদোয়ানুল আজাদ। এ ছাড়া মাকসুদুল হাসান অনিক এক অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এহসান রেজা রুম্মান, নইম শিকদার ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছর করে এবং সাদমান ইয়ানির মাহমুদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানিকে পাঁচ বছরের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, নিহত রাজীব হায়দায়কে ব্লগার হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তিনি কী ধরনের লেখালেখি করতেন তা স্পষ্ট নয়। কেন রাজীব হায়দায়কে খুন করা হল, তদন্তে তাও স্পষ্ট হয়নি বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি রায় দিতে গিয়ে জানান, রাজীব হায়দার যে লেখালেখি করতেন, তার কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ তদন্তকারীরা আদালতে জমা দিতে পারেননি। বিচারক আরও বলেন, মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে যে নিহত ব্লগার রাজীব হায়দার একজন টেকনিশিয়ান ছিলেন। আবার মামলার অধিকাংশ আসামি দাবি করেছেন তাঁরাও টেকনিশিয়ান। অর্থাৎ টেকনিশিয়ানদের হাতেই টেকনিশিয়ান খুন হয়েছেন।’ রায়ে জানানো হয়, আসামি জসিমউদ্দিন রহমানি যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান, তা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা গিয়েছে। কিন্তু মামলার কোথাও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। তাই শুধুমাত্র খুনে প্ররোচনার অভিযোগই তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত হচ্ছে। জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে না।
অশ্চর্যজনক ভাবে বাংলাদেশের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট এ দিন খুন-জখমের দায় ব্লগারদের ঘাড়েই চাপাতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ব্লগারদের অনেকেই এমন লেখা প্রকাশ করেন, যা পড়লে সেই ব্লগারদের খুন করতে লোকজন উৎসাহিত হয়। এ ধরনের লেখা থেকে অবশ্যই ব্লগারদের বিরত থাকতে হবে বলে বিচারক মন্তব্য করেন। খুনিদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সামান্য কারণে খুন করা ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে বলে মৃদু খেদ প্রকাশ করেই দায় সারেন বিচারক। বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে এই রায় এবং বিচারকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের বিরাট অংশ। খুনিদের সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় ঢাকার শাহবাগে বিকেলে বিক্ষোভ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকায় নিজের বাড়ির সামনে ব্লগার রাজীব হায়দার খুন হন। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর নাজিমউদ্দিন স্পষ্ট জানান, তিনি সুবিচার পাননি। অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচ জন নিজেদের জবানবন্দিতেই মেনে নিয়েছে খুনে জড়িত থাকার কথা। তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়াই উচিত ছিল বলে মনে করছেন নাজিমউদ্দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy