ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়েই পড়ল।
বছর দশেক আগে প্রায় ১৫ কোটি ডলার আয় করলেও তার মধ্যে ১০ কোটি ডলার লোকসান দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক মহিলা সাংবাদিক অধুনা মার্কিন প্রেসিডেন্টের ২০০৫-এর কর রিটার্নের দু’টি পাতা প্রকাশ করে এই তথ্য সামনে আনার পরেই হাঁ হাঁ করে উঠেছে হোয়াইট হাউস। প্রেসিডেন্টের এই দফতর বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘অসৎ সংবাদমাধ্যম চুরি করে করের রিটার্ন সংগ্রহ করে বেআইনি ভাবে প্রকাশ করেছে।’ যে সরকারি কর্মী এই তথ্য ফাঁসে জড়িত, তার কপালে যে ভয়ঙ্কর বিপদ নাচছে— সেটাও জানাতে ভোলেনি হোয়াইট হাউস।
বিলিওনেয়ার ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার পর থেকেই প্রতিপক্ষ তাঁর আয়ের উৎস ও করের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছিলেন, সে সব নিয়ে কোনও তথ্য তিনি প্রকাশ করবেন না। কারণ তা ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়। প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে গেলে বিগত বছরগুলির করের রিটার্ন প্রকাশ করার রীতিও তিনি মানবেন না বলে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছিলেন। আর সংবাদমাধ্যমকে তো আগাগোড়াই অসৎ ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে গাল পেড়ে আসছেন ট্রাম্প। টাইমস, সিএনএন, বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান-সহ এক ঝাঁক নামী সংবাদমাধ্যমের মুখের ওপর তিনি হোয়াইট হাউসের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ বার সংবাদমাধ্যমই ট্রাম্পের লুকিয়ে রাখা কর রিটার্ন ফাঁস করে দিল। তবে পুরোটা নয়, মাত্র দুটো পাতা। কিন্তু তা-ই যথেষ্ট বারুদে ঠাসা। হিসেব বলছে— ২০০৫-এ বেতন, মূলধনী লাভ, রয়্যালটি ও বিনিয়োগের ওপর সুদ বাবদ ট্রাম্পের আয় হয়েছিল ১৫.৩০ কোটি ডলার, যার পুরো অঙ্কটির ওপর হিসেব করে তাঁর কর দেওয়ার কথা। কিন্তু, তিনি তার মধ্যে ১০.৩ কোটি ডলার লোকসান দেখিয়ে কর দিয়েছেন বাকি ৫ কোটি ডলারের ওপর। তা-ও এই কর তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না-চোকানোয় পেনাল্টি দিতে হয়েছে ট্রাম্পকে। ঘটনা হল, ২০০৫-এ মন্দার কারণে আর সব ব্যবসায়ীর মতো ট্রাম্পেরও ব্যবসায় লাভ বেশ কম হয়েছিল। রিয়েল এস্টেটের দাম তলানিতে চলে যাওয়ায় সব চেয়ে ক্ষতি হয় নির্মাণ ব্যবসায়ীদের। হোয়াইট হাউস যুক্তি দিয়েছে, সম্পদ হিসেবে রিয়েল এস্টেটের দাম কমে যাওয়াটাই ক্ষতি হিসেবে দেখানো হয়েছিল ট্রাম্পের হিসেবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এক জন দক্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে নিজের কোম্পানি, পরিবার ও কোম্পানির কর্মীদের প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্য আইন মেনে যে করটুকু না-দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেটাই গ্রহণ করেছিলেন ট্রাম্প।’ রিটার্নের পাতা দু’টিকে অসম্পূর্ণ বলে দাবি করে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ‘এই কর ছাড়াও প্রেসিডেন্টের কোম্পানি বিক্রয় কর, উৎপাদন শুল্ক ও অন্যান্য কর বাবদ বহু কোটি ডলার মিটিয়েছিলেন, যা এই দু’পাতায় বলা নেই।’
তবে ট্রাম্পকে বাঁচাতে হোয়াইট হাউসের এই ঝাঁপিয়ে পড়ায় হেসেছেন সাংবাদিক র্যাচেল ম্যাডো। বলেছেন, ‘‘এ থেকে যা প্রমাণ হওয়ার তা কিন্তু হয়েই গিয়েছে— কর রিটার্নের পাতা দু’টি জাল নয়!’’ আর সেই ব্যবসা সাম্রাজ্যের এখনকার অধীশ্বর প্রেসিডেন্ট-পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র টুইট করে বলেছেন— ‘আমার বাবা যে কত দক্ষ ব্যবসায়ী ছিলেন ট্রাম্প-বিরোধী জনগণকে তা জানিয়ে দেওয়ার জন্য র্যাচেল ম্যাডোকে অশেষ ধন্যবাদ!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy