Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ট্রাম্পের খোঁচা মোদীকে, নিন্দা কংগ্রেসের

আফগানিস্তানে গ্রন্থাগার তৈরির জন্য সাহায্য দেওয়া নিয়ে ভারতকে রীতিমতো বিদ্রুপ করেছিলেন ট্রাম্প।

ফের বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।—ছবি রয়টার্স।

ফের বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।—ছবি রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন 
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

দেশে যতই লড়াই চলুক, বিদেশের মাটিতে তার ছাপ পড়বে না— ভারতীয় রাজনীতির এই সৌজন্যের প্রথা ভেঙেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই। কিন্তু রাফাল নিয়ে শাসক দলের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যেও সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনল কংগ্রেস। আফগানিস্তান প্রসঙ্গে মোদীর নীতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যের পরে কংগ্রেসের আহমেদ পটেল, রণদীপ সুরজেওয়ালারা দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রীর পাশেই। সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘ডিয়ার মিস্টার ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্রুপ করা বন্ধ করুন। আফগানিস্তান নিয়ে আমেরিকার উপদেশ দরকার নেই ভারতের।’’

আফগানিস্তানে গ্রন্থাগার তৈরির জন্য সাহায্য দেওয়া নিয়ে ভারতকে রীতিমতো বিদ্রুপ করেছিলেন ট্রাম্প। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ভালই জমে— সেই কথা বছরের প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়ে জানিয়ে হঠাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে বসেন, ‘‘মোদী পাঁচ ঘণ্টার কথাবার্তায় আমায় শুধু বলে গেলেন, উনি আফগানিস্তানে একটা গ্রন্থাগার তৈরি করে দিয়েছেন। আমি অবশ্য জানি না, আফগানিস্তানে সেটা কারা ব্যবহার করে!’’ কোন গ্রন্থাগার প্রসঙ্গে ট্রাম্পের এই মন্তব্য, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিজেও তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি।

কিন্তু ট্রাম্পের এই মন্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল। তিনি বলেন, ‘‘ভারত কী কী ভাবে আফগানিস্তানকে সাহায্য করে, সেটা আমেরিকাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া উচিত সরকারের।’’ যে ভাবে মোদীকে বিদ্রুপের নিশানা করেছেন ট্রাম্প, তা-ও ‘অত্যন্ত কুরুচিকর’ বলে দাবি পটেলের। সুরজেওয়ালারও বক্তব্য, আমেরিকার ‘উপদেশ’ প্রয়োজন নেই ভারতের।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদী বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের নিশানা করেছেন। যা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর। সরকারের তিন বছর পূর্তির পরে ২০১৭-র জুনে আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় একটি সভায় মোদী দাবি করেছিলেন, তাঁর সরকারের উপরে দুর্নীতির কোনও দাগ নেই। তবে অতীতে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণেই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। এই ধরনের মন্তব্য একাধিকবার সামনে আসায় কংগ্রেস অভিযোগ এনেছিল, দেশের বাইরে গিয়ে বিরোধীদের অপমান করাই মোদীর বিদেশনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষোভ যা-ই থাকুক, আজ কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়ায় ফিরে এল কূটনৈতিক বিচক্ষণতাই।

ট্রাম্প বুধবার বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ভারত-সহ অন্যান্য দেশ যথেষ্ট সক্রিয় নয়। আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে লড়াইয়ে রাশিয়া, ভারত বা পাকিস্তানের উপস্থিতি কেন সেখানে নেই— প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প বলেন, ‘‘সাড়ে ন’হাজারের বেশি কিলোমিটার দূরে বসে আমরা। আমরাই ওখানে রয়েছি।’’ আমেরিকা যে ভাবে কয়েকশো কোটি ডলার সাহায্য দিচ্ছে আফগানিস্তানে, বাকি বিশ্বনেতারা তাঁর ধারেকাছে নেই বোঝাতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ ভাবে বিদ্রুপের রাস্তা বেছে নিয়েছেন বলে মত কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের। ট্রাম্পের দাবি, ‘‘আর্থিক ভাবে শক্তিশালী বহু দেশ চায় আমেরিকা তাদের ভাগের সেনাটাও পাঠিয়ে দিক।’’

মন্তব্যের শেষের দিকে আবার মোদীর ঢালাও প্রশংসা করেন ট্রাম্প। তাতে অবশ্য ভারত চুপ নেই। ট্রাম্পের উদ্দেশে দেশের প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন, উন্নয়নমূলক কাজই যুদ্ধদীর্ণ দেশে জীবন পাল্টে দিতে পারে। মোদী বারবারই বলেছেন, ভারত চায় আফগান সরকারের নেতৃত্বেই সে দেশে শান্তি-সুস্থিতি বজায় থাকুক। গত বছর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি ভারতে ঘুরে গিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত কথাবার্তা হয়েছে তাঁর। আফগানিস্তানে সড়ক, জলাধার তৈরির মতো বেশ কিছু প্রকল্পে সহায়তা করছে ভারত। রয়েছে আরও উন্নয়নমূলক কাজও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE