Advertisement
E-Paper

ভোট মানে ভালবাসার উৎসব

আমার দেশে গণতন্ত্রের উৎসব পালিত হল আজ। গোটা ইন্দোনেশিয়া আজ ভোট দিল। ভারতে ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। চলবে সেই মে পর্যন্ত। আমাদের দেশে যদিও এক দিনে ভোট হল।

ফেবি ইন্দিরানি (ইন্দোনেশিয়া)

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০৮
পাপুয়া প্রদেশে ভোটগ্রহণ। ছবি রয়টার্স।

পাপুয়া প্রদেশে ভোটগ্রহণ। ছবি রয়টার্স।

হৃৎপিণ্ডটা যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল! একটা কাজে ম্যাঞ্চেস্টার গিয়েছিলাম। লন্ডন ফেরার জন্য ভুল দিনের টিকিট কেটে ফেলেছি। ব্রিটেনে পড়াশোনা করি। পকেটে টান সব সময়েই। এর মধ্যে একটা ভুল টিকিট কাটার খরচ প্রচুর। তবু ঝুঁকি নিতে পারলাম না। শুক্রবার রাতের আরও একটা টিকিট কাটতেই হল। কারণ পরের দিন, অর্থাৎ ১৩ তারিখ যে করেই আমায় লন্ডন পৌঁছতে হত। কারণ সে দিনই আমি পালন করেছি আমার গণতন্ত্রের উৎসব।

আমার দেশে গণতন্ত্রের উৎসব পালিত হল আজ। গোটা ইন্দোনেশিয়া আজ ভোট দিল। ভারতে ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। চলবে সেই মে পর্যন্ত। আমাদের দেশে যদিও এক দিনে ভোট হল। তবে এই প্রথম বার। কিন্তু আমার ভোটের দিন ছিল ওই ১৩ এপ্রিল। সে দিনই আমি ভোট দিয়েছি লন্ডনের ইন্দোনেশীয় দূতাবাসে গিয়ে। আমার মতো প্রবাসী ইন্দোনেশীয়দের জন্য এমন ব্যবস্থা রয়েছে বিশ্বের নানা দেশে। শুধু ব্রিটেন নয়, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও কানাডায় ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে ভোট দেওয়া যায় এ ভাবে। ব্রিটেনে প্রায় সাত হাজার ইন্দোনেশীয় থাকেন। সে দিন সন্ধে সাতটা পর্যন্ত ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল লন্ডনের দূতাবাসে।

সে দিন লন্ডনে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সি-৬ ফর্ম পূরণের জন্য প্রথমে লাইন। তার পরে ব্যালট পেপার জমা দেওয়ার। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই হাসি মুখে সব কাজ সেরেছেন আমার দেশের লোকজন। দূতাবাসেই আলাপ হল সুলতানের সঙ্গে। পেশায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ। থাকেন ডান্ডি-তে। লন্ডন থেকে ট্রেনে দূরত্ব প্রায় ১১ ঘণ্টার। বললেন শুধু ভোট দিতেই লন্ডনে আসা।

আমাদের গণতন্ত্র তুলনামূলক ভাবে নতুন। ভারতে স্বাধীনতার পর থেকেই গতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় ভোট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে ১৯৯৮ সালে সুহার্তো গদিচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভোট পদ্ধতির সূচনা হয়। তবে এ বারের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভোটারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ হলেন নবীন প্রজন্মের। গড় বয়স ১৭ থেকে ৩৫-এর মধ্যে।

এ বারের লড়াই মূলত দু’জনের মধ্যে। জোকো উইডোডো এবং প্রবোয়ো সুবিয়ান্তো। এঁদের মধ্যে প্রথম জন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। আসবাবের ব্যবসায়ী ছিলেন এক সময়ে।

১৪ বছর আগে রাজনীতির দুনিয়ায় পা রাখেন। ২০১২ সালে জাকার্তার গভর্নর হয়েছিলেন জোকো। সুবিয়ান্তো-ও প্রাক্তন শাসক সুহার্তোর আমলে সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। সুহার্তোর জামাইও ছিলেন। তবে তাঁর মেয়ের সঙ্গে আপাতত বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে সুবিয়ান্তোর। জোকো গোটা দেশে বেশ কিছু উন্নয়ন আর সংস্কারমূলক কাজ করলেও তাঁর বিরুদ্ধে জনরোষ কম নেই। তার প্রধান কারণ মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তাঁর সরকার কোনও কিছুই করে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে ১৯৬৫ থেকে’৯৮ সাল পর্যন্ত যে ভাবে দেশের জনগণের কণ্ঠরোধ করা হত, গণতন্ত্র ফেরার পরেও সেই সব ঘটনার বিচার হয়নি। এ ছাড়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমন এক কট্টরপন্থী শিক্ষাবিদকে জোকো মনোনীত করেছিলেন, গোটা দেশে ঘৃণা ছড়ানোর পিছনে তাঁর একটা বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়। সুবিয়ান্তোর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ রয়েছে একই ভাবে। সুহার্তোর আমলে আন্দোলনরত ছাত্রদের অপহরণের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

আর এই সব কারণে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন দেশের শিক্ষিত নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ। কম করে তিরিশটি সংগঠন ভোট বয়কটের ডাকও দিয়ে ফেলেছে। দেশে নারী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের এক মুখ ঘোষণা করেছেন, ‘‘এই পচে যাওয়া

ব্যবস্থা দেখে আমি ক্লান্ত। সবই মনে হয় একই মুদ্রার এ-পিঠ ও-পিঠ। ভোট দেওয়ার মানেই হয় না।’’ তবে ভারতের নোটার মতোই এক ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের দেশেও। দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের উচিত শিক্ষা দিতে অনেকেই এখন

তাতেই ভোট দেন। আর ব্যক্তিগত ভাবে আমিও মনে করি, ভোট না দেওয়াটা কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। যে দেশ যতই দুর্নীতি গ্রস্ত হোক না কেন, ভোট দেওয়াটা সকলের জন্যই জরুরি। কারণ পরিবর্তন আনার ওটাই একমাত্র রাস্তা। বিশ্বের কোনও গণতন্ত্রই বোধ হয় নিখুঁত নয়। কিন্তু আমার-আপনার ভোটই সেখানে কথা বলে।

লন্ডনে সে দিন আট ডিগ্রিকে সে জন্যই উপেক্ষা করেছিলাম। বিশাল লাইনের পিছনে সে জন্যই দাঁড়িয়েছিলাম। আমি মনে করি ইন্দোনেশিয়া, ভারত বা বিশ্বের যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে ভোট হল আসলে ভালবাসা। কারণ একমাত্র এর মাধ্যমেই নিজের স্বাধীনতা উদ্‌যাপন করা যায়।

লেখক সাংবাদিক

Indonesia Election Lok Sabha Election 2019 India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy