আরব রাজনীতিতে গুরুতর বাঁক।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু আয়ের দেশ কাতারের সঙ্গে সব রকমের সম্পর্ক ছেদ করল সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেন। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লাগাতার মদত দেওয়ার অভিযোগেই কাতারের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ। পাঁচটি দেশই কাতারের সঙ্গে সড়ক, বিমান ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে। পণ্য আদানপ্রদান-সহ সব ধরনের বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে, তার থেকেও কাতার বাহিনীকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ওই পাঁচ দেশ।
কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। কাতার আল-কায়দা ও ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলিতে লাগাতার মদত দিচ্ছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তোলে আরবের বিভিন্ন দেশ। দোহায় প্রাক্তন হামাস প্রধান খালেদ মেশালকে আশ্রয় দেওয়া, আফগান তালিবানদের অফিস খুলতে দেওয়া নিয়েও কাতারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছিল। অভিযোগের ‘আগুনে ঘি’ পড়ে সাম্প্রতিক একটি ঘটনায়।
কাতারের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইটে ইরান ও ইজরায়েলের নাম করে কটূক্তি করেন কাতারের আমির। এর জেরে কাতারের প্রতিটি সংবাদ সংস্থার সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাহরাইন, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইয়েমেন। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি কাতারের রাজধানী দোহা ভিত্তিক স্যাটেলাইট নিউজ নেটওয়ার্ক আল-জাজিরাও। কাতার অবশ্য দাবি করে এটা হ্যাকারদের কাজ। তাদের অভিযোগ ছিল, রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাক করে এই কাজ ঘটিয়েছে হ্যাকাররা। এতে কাতার সরকারের কোনও দায় নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আবর নেতারা।— ফাইল ছবি
কয়েক দিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরবের মাটিতে দাঁড়িয়ে ইসলামিক দেশগুলিকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই বার্তার কয়েক দিনের মধ্যেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদের এই সিদ্ধান্ত। সোমবার সকালে বাহরাইনের বিদেশমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে জানান, কাতারের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করা হবে। কাতার ধারাবাহিকভাবে বাহরাইনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। ইতিমধ্যেই বাহারাইনে থাকা কাতারের সব কূটনীতিককে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, দু’সপ্তাহের মধ্যে বাহারাইনে থাকা কাতারের সব নাগরিককেও দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাতারের সব কূটনীতিকদের দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আরব আমিরশাহি, সৌদি আরব, ইয়েমেন, মিশরও। এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর কাতার প্রশাসনের তরফে এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, সব অভিযোগ মিথ্যা। আমেরিকার চাপেই এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছে পাঁচ দেশ।
আরও পড়ুন: জীবনের শেষ ৬ মাস কেমন ছিলেন বন্দি সাদ্দাম
রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবে মানব সম্পদ উন্নয়ণে আরব দুনিয়ায় সবার উপরে কাতার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাথা পিছু আয়ের দেশ। প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের সম্ভারে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে এবং সেই সঙ্গে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী। আবর দুনিয়ার প্রতিটি দেশেই কমবেশি কাতার থেকে গ্যাস রফতানি হয়। মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি কাতার থেকেই মূলত গ্যাস আমদানি করে থাকে। সোমবার এই সম্পর্ক ছেদের সিদ্ধান্ত কাতারের গ্যাস রফতানিতে বড় ধাক্কা দেবে, তাতে সন্দেহ নেই। সোমবার চার দেশ কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ ঘোষণা করার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। কাতার একঘরে হলে, বা কাতারের সঙ্গে অন্যান্য প্রধান আরব দেশগুলের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকলে, তা আরব দুনিয়ায় বড়সড় কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি করবে বলে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই একমত।
পাশাপাশি, ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক কাতার। আরব দুনিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে তারা এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে যাচ্ছে। সন্ত্রাসে মদতদানের অভিযোগ নিয়ে তৈরি হওয়া চলতি কূটনৈতিক সঙ্কট সেখানে কোনও প্রভাব ফেলবে কি না, তা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy