Advertisement
১৭ মে ২০২৪

গ্যাস হামলা সিরিয়ায়, ১১ শিশু-সহ নিহত ৫৮

বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালিয়ে ফের ১১ জন শিশু-সহ মোট ৫৮ জনকে হত্যার অভিযোগ উঠল সিরিয়ায়। মঙ্গলবারের এই হামলার জন্য বাসার আল আসাদ সরকারকেই দায়ী করে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে দ্রুত তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন বিদ্রোহীরা। ২০১৩ সালের ২১ অগস্ট বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করে সিরিয়ার দামাস্কাসের কাছে ঘোউতা প্রদেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল সরকারের বিরুদ্ধে।

বিপন্ন: হাসপাতালের পথে রাসায়নিক হামলায় আক্রান্ত এই শিশু। মঙ্গলবার সিরিয়ার ইদলিবে। ছবি: এপি।

বিপন্ন: হাসপাতালের পথে রাসায়নিক হামলায় আক্রান্ত এই শিশু। মঙ্গলবার সিরিয়ার ইদলিবে। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
বেইরুট শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩৪
Share: Save:

বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালিয়ে ফের ১১ জন শিশু-সহ মোট ৫৮ জনকে হত্যার অভিযোগ উঠল সিরিয়ায়। মঙ্গলবারের এই হামলার জন্য বাসার আল আসাদ সরকারকেই দায়ী করে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে দ্রুত তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন বিদ্রোহীরা।

২০১৩ সালের ২১ অগস্ট বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করে সিরিয়ার দামাস্কাসের কাছে ঘোউতা প্রদেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল সরকারের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছিল, সেই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে প্রাণঘাতী সারিন গ্যাস। সে বার সিরিয়া সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ আরব জোটের দেশগুলি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ও সিরিয়ার উপর মার্কিন সামরিক অভিযান আটকাতে রায়ায়নিক অস্ত্র ভাণ্ডার নষ্ট করার কথা বলেছিল আসাদ সরকার। তবে তার পরেও সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক বার রাসায়নিক হামলার অভিযোগ উঠেছে। আজকের হামলার পিছনেও সিরিয়া সরকারকেই দায়ী করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সিরিয়ার একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ বিদ্রোহী অধ্যুষিত ইদলিব প্রদেশের খান শেখু শহরের আকাশে দেখা যায় যুদ্ধবিমান। অভিযোগ, সরকার বা রুশ সেনার সেই বিমান থেকেই ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারিন ও ক্লোরিন জাতীয় গ্যাস। সারিন যা কিনা গন্ধ ও বর্ণহীন। অজান্তেই সরাসরি বিকল করে স্নায়ুতন্ত্রকে। মনে করা হচ্ছে, বিষাক্ত সেই সারিনেই দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন ৫৮ জন। মুখে গ্যাঁজলা উঠে অজ্ঞান হয়ে যান কেউ কেউ। অসুস্থদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হোয়াইট হেলমেট নামে সিরিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানিয়েছে, আহতের চিকিৎসা চলছিল যে শিবিরে, সেখানেও বিমান হানা হয় কিছু ক্ষণের মধ্যে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, সাদা কাপড়ে ঢাকা শিশুদের দেহ সার দিয়ে শোয়ানো রয়েছে মেঝেতে। অনেকেরই মুখে সাদা ফেনা। অসুস্থদের চোখে আলো ফেললেও কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না। সাজুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই চিহ্নগুলি দেখেই নিশ্চিত যে এটা রাসায়নিক গ্যাস হামলা।’’ অন্য একটি ভিডিওতে আবার দেখা গিয়েছে, মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছে শিশুরা। হোসপাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে তাদের সুস্থ করার চেষ্টা করছেন ত্রাণকর্মীরা।

যে কোনও পরিস্থিতিতেই রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগ যুদ্ধাপরাধের সামিল বলে মনে করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যদিও আগাগোড়াই এই হামলার দায় এড়িয়ে গিয়েছে। এক সেনা কর্তার কথায়, ‘‘অতীতেও সরকার কখনও রাসায়নিক হামলা করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। এটা বিদ্রোহীদের মিথ্যা প্রচার।’’

২০১৩ সালে ঘোউতায় সারিন গ্যাস হামলার পর আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৩০০ টন বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র হস্তান্তরে রাজি হয় সিরিয়া সরকার। সিরিয়ার উপর মার্কিন সেনাজোটের অভিযান ঠেকাতে আন্তর্জাতিক নজরদারির অধীনে রায়ায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি
বন্ধ করতেও রাজি হয় তারা। সরকার এই চুক্তি মেনে চলছে কি না, তা জানতে তদন্ত করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ ও রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত অক্টোবরে তাদেরই দেওয়া একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৪-২০১৫ সালের মধ্যে অন্তত তিন বার রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে সরকার। ২০১৫ সালে অবশ্য
মাস্টার্ড গ্যাস ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে ইসলামিক স্টেট। আজকের হামলার তদন্তের জন্য অবিলম্বে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠক ডাকার আর্জি
জানিয়েছে ফ্রান্সও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Syria Gas Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE