ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ইমতিয়াজ বাবুল। সেখানেই ৩০ তারিখ খবর পান, ছেলে রোহান বাড়ি ফেরেনি। ক’দিন আগে জানতে পারলেন, রোহানই শুক্রবার রাতে গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারির অন্যতম হামলাকারী।
শাসক দল আওয়ামি লিগের নেতা ইমতিয়াজ বাবুল মঙ্গলবার দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেছেন, ‘‘ব্যর্থ পিতা আমি। কিন্তু আমার ভিতু ছেলের হাতে রাইফেল তুলে দিয়ে যারা তাকে জঙ্গি বানিয়েছে, তাদের খুঁজে বার করুন— সকলের কাছে এই আমার আর্জি। না হলে বাংলাদেশ বাঁচবে না।’’ শুধু আর্জি জানিয়েই শেষ করেননি জঙ্গি রোহানের বাবা। শুনিয়েছেন এমন এক ভয়ঙ্কর কাহিনি, যা শুনে আতঙ্কে কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ।
অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব বাবুল জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে ফিরে তিনি ছেলের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘোরাঘুরি করেন থানা-পুলিশ থেকে নানা মহলে। সে সময়েই জানতে পারেন— শুধু তাঁর ছেলে নয়, কয়েক মাসের মধ্যে এ ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরে আসেনি বহু ছেলে। তাদের কারও বাবা বিচারপতি, তো কারও সেনা অফিসার। কারও বাবা আবার সরকারি আমলা অথবা বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা। লোক জানাজানি এড়াতে অনেকে পুলিশের কাছে অভিযোগটুকুও জানাননি।
পুলিশের ডিজি কালই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ মাসের শেষে ঢাকায় আরও একটি বড় হামলার পরিকল্পনার কথা গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। আইএস-এর মুখপত্র ‘দাবিক’-এ এপ্রিলেই ঘোষণা করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রথমে একটি সংগঠিত হামলা করা হবে, তার পরে ‘সব চেয়ে বড়’ হামলাটি করে ক্ষমতা দখলের পথে যাওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে বাবুল ছেলে হারানোর যে কাহিনি শুনিয়েছেন, তা বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছে। র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন)-এর প্রধান বেনজির আহমেদ এ দিনই ঘোষণা করেছেন, কারও ছেলে নিখোঁজ থাকলে এখনই তা পুলিশকে জানান।
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে রোহানের বাবা জানান, ঢাকার একটি নামী স্কুলের ছাত্র তাঁর ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ার সময়েও আরশোলা দেখলে ভয় পেত। তার মা ওই স্কুলেরই অঙ্কের শিক্ষিকা ছিলেন। তাই স্কুলে নজরদারির খামতি ছিল না। বাবুল বলেন, ‘‘হাজার হাজার ছোট ছোট ছেলেকে যারা খুনি তৈরি করছে, সেই ছেলেধরাদের খুঁজে বার করাটা আগে দরকার।’’
হামলার পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিভাবকদের আর্জি জানিয়েছিলেন— ছেলে বিপথে যাচ্ছে কি না নজর রাখুন। এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালও বলেন, শুধু পুলিশি অভিযানে জঙ্গি দমন সম্ভব নয়। শিক্ষিত তরুণদের যাঁরা বিপথে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy