পাকিস্তান যে নতুন পরমাণু কৌশল নিয়েছে, তা এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপদগুলির অন্যতম। মার্কিন সেনেটকে অনেকটা এমনই জানিয়েছেন সে দেশের গোয়েন্দা প্রধান। —প্রতীকী ছবি / এএফপি।
ছোট ছোট পরমাণু বোমা তৈরি করছে পাকিস্তান। ছোট পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা দ্রুত বাড়াচ্ছে তারা। বাড়িয়ে তুলছে স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যাও। এই প্রবণতাকে বিপজ্জনক আখ্যা দিলেন মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান। মার্কিন কংগ্রেসকেও সে কথা জানালেন তিনি।
মার্কিন সেনেটের গোয়েন্দা সংক্রান্ত সিলেক্ট কমিটির শুনানিতে বুধবার হাজির হয়েছিলেন সে দেশের ডায়রেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স ড্যান কোটস। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে পৃথিবীর সামনে বড় বিপদ কোনগুলি— শুনানি ছিল তা নিয়েই। গোয়েন্দা প্রধান জানিয়েছেন, পাকিস্তান ‘ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার ওয়েপনস’ বা ছোট আকারের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বাড়াচ্ছে।
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে মার্কিন সেনেটকে ঠিক কী জানিয়েছেন সে দেশের গোয়েন্দা প্রধান? তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান প্রথাগত পরমাণু অস্ত্রের বদলে নতুন ধরনের পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে এবং নিরন্তর সে সবের উৎপাদন চলছে। ছোট আকারের পরমাণু বোমা, (যার প্রভাব খুব ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে কিন্তু এক আঘাতে একটা গোটা ব্যাটালিয়ন বা ব্রিগেডকে শেষ করে দিতে পারে), স্বল্প পাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র (সম্মুখ সমরে ব্যবহারের উপযুক্ত), যুদ্ধজাহাজ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র— মূলত এই সব তৈরির উপরেই পাকিস্তান জোর দিয়েছে বলে ড্যান কোটস জানিয়েছেন।
এর পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লাও পাকিস্তান বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্মুখ সমরের ক্ষেত্র বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী স্থানে যদি ছোট আকারের পরমাণু হামলা চালানোর দরকার পড়ে, সে কথা মাথায় রেখেই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে পাকিস্তান।
ছোট পরমাণু বোমা এবং স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি— এই কৌশলেই এগোতে চাইছে পাকিস্তান। —প্রতীকী ছবি।
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য তুলে ধরেই ক্ষান্ত থাকেননি ড্যান কোটস। পাকিস্তানের এই নতুন ধরনের পরমাণু কৌশলের ফলশ্রুতি কী, মার্কিন সেনেটের সামনে তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। কোটস জানিয়েছে, পাকিস্তানের এই নতুন পরমাণু কর্মসূচি আঞ্চলিত নিরাপত্তার ছবিটা বদলে দেবে। দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা এতে বাড়বে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা আরও বিপন্ন হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুন: তিন পাক জঙ্গির উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা
পরমাণু অস্ত্রের দ্বারা আক্রান্ত না হলে ভারত কোনও দেশের উপরে পরমাণু হামলা চালাবে না। নয়াদিল্লির ঘোষিত নীতিই এটা। এই ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতির কারণেই ছোট আকারের পরমাণু অস্ত্র তৈরির কথা ভারত ভাবে না। যদি কোথাও ভারতের বাহিনী এবং প্রতিপক্ষের বাহিনী মুখোমুখি লড়াই করে, তা হলে প্রথাগত অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই লড়াই চালানোর পক্ষপাতী ভারত। প্রতিপক্ষের বাহিনীর মোকাবিলা করতে না পেরে ছোট আকারের পরমাণু বোমা দিয়ে তাদের উপর আঘাত হানতে হবে, এমনটা ভারতীয় বাহিনী মনে করে না। সেই কারণে ভারত ছোট পরমাণু অস্ত্র বা ট্যাকটিকাল নিউক তৈরিও করে না। পরমাণু অস্ত্রে আক্রান্ত হলে যাতে উপযুক্ত জবাব দেওয়া যায়, তার জন্য স্ট্র্যাটেজিক নিউক বা বড় আকারের পরমাণু বোমাই অস্ত্রাগারে মজুত রেখেছে ভারত।
আরও পড়ুন: কী পাচ্ছি, বুঝেই সায় ‘আরব শর্তে’
পাকিস্তান সে ভাবে ভাবছে না বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। গত কয়েক দশকে ভারতীয় বাহিনীর সক্ষমতা যতটা বেড়েছে, পাকিস্তান নিজেদের বাহিনীর আধুনিকীকরণ ততটা করতে পারেনি। আর্থিক সঙ্কটও তার অন্যতম কারণ। তাই সম্মুখ সমরে প্রথাগত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে এঁটে ওঠা যাবে কি না, তা নিয়ে পাকিস্তান যথেষ্ট সন্দিহান। সেই সন্দেহ বা আশঙ্কা থেকেই পাকিস্তান ট্যাকটিকাল নিউকসের দিকে ঝুঁকছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। তবে পাকিস্তানের এই কৌশলকে যে আন্তর্জাতিক মহল একেবারেই ভাল চোখে দেখছে না, তা মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy