Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Sudan clash

কড়ি গুনেই বাসে, আজ রওনা পোর্ট সুদানের উদ্দেশে

খার্তুম থেকে ওই বাসে বন্দর শহর পোর্ট সুদানে নিয়ে যাওয়া হবে আমাদের। প্রতিটি বাসে থাকবেন ৫০ জন। এর পরেই ফেরার প্রস্তুতি শুরু করি।

An image of Indians in Sudan

সুদানে বসবাসকারী ভারতীয়দের উদ্ধার অভিযান শুরু। ফাইল ছবি।

নাজমুল হক
খার্তুম, সুদান শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২৪
Share: Save:

সুদানে বসবাসকারী ভারতীয়দের উদ্ধার অভিযান শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় স্বস্তি পেয়েছিলাম। অবশেষে বোধহয় মুক্তি পাব! শুনলাম স্বয়ং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এ বিষয়ে তৎপর। কিন্তু কোথায় কী! বাস্তব অভিজ্ঞতা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ফেরার ব্যবস্থা করতে হল নিজেদেরই।

ভারতীয় দূতাবাস থেকে সুদানে বসবাসকারী ভারতীয়দের ফেরানোর জন্য যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে, সেখানেই গত কাল জানতে পারি, বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খার্তুম থেকে ওই বাসে বন্দর শহর পোর্ট সুদানে নিয়ে যাওয়া হবে আমাদের। প্রতিটি বাসে থাকবেন ৫০ জন। এর পরেই ফেরার প্রস্তুতি শুরু করি। তার পরে জানলাম, দূতাবাস স্রেফ বাসের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ওই বাসে যাত্রী নেওয়া সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এজেন্টরা। তাঁদের মাথাপিছু ২৫০ ডলার করে দিতে হচ্ছে। যাঁরা দিতে পারছেন, তাঁরা বাসে ওঠার লাইসেন্স পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের মতো যাঁদের সেই সামর্থ্য নেই, তাঁদের এই হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যেই থাকতে হবে। দূতাবাস সব জানে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করেনি। শুধু বলেছে, ‘যারা তাড়াতাড়ি যেতে চাও টাকা দিয়ে বাসে চলে যাও। না হলে অপেক্ষা করো। সময় লাগবে।’

এখান থেকে যাঁরা সুদান বন্দর যাচ্ছেন, তাঁদের কাছে দূতাবাস বাসের নম্বর পাঠিয়ে দিচ্ছে। পোর্ট সুদানে গিয়ে যাদের পাসপোর্ট আছে, তাদের আগে দেশে ফেরানো হচ্ছে। পাসপোর্ট না থাকলে ৪ থেকে ৭ দিনের অপেক্ষা।

আমার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাড়িতে সবাই এ নিয়ে উদ্বেগে। শুধু তো বাসের ভাড়া সংক্রান্ত খরচ শেষ নয়। প্রায় ৮০০ কিলোমিটারের যাত্রাপথে খাবারেরও খরচ আছে। দূতাবাস কোনও সুরাহা করেনি। আমার কাছে খাবার কেনার টাকা নেই। জল নেই। বিদ্যুৎ সংযোগও চলে গিয়েছে। অন্যদের থেকে চেয়েচিন্তে খাবারটুকু জোগাড় করেছি। দূতাবাস খাবারের ব্যবস্থাটুকুও করেনি। কিছুক্ষণ আগেই মোবাইলে ‘চার্জ’ দিতে বেরিয়েছিলাম। নানা জায়গায় ‘চেকিং’ চলছে। তা সত্ত্বেও এক অদ্ভুত পরিস্থিতি।

শুনলাম উদ্ধারকাজের জন্য আমেরিকা ও সৌদি আরবের উদ্যোগে তিন দিনের সংঘর্ষবিরতিতে সায় দিয়েছে সেনা-আধাসেনা। কিন্তু রাস্তায় দেখছি, গোলাগুলি থামার নাম নেই। আধাসেনার দাবি, সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ করেছে সেনা। চলছে লুটতরাজও। বিভিন্ন কোম্পানিতে লুট চালানো হয়েছে। তেল, টিভি, শিল্পজাত বিভিন্ন সংস্থায় অবাধ লুট চলছে।

এই অবস্থায় আর এক দিনও এখানে থাকা নিরাপদ মনে হচ্ছে না। এত খরচ করে দেশে ফিরব কী ভাবে! এই নিয়ে দ্বিধা কাটিয়ে আজ রাতে আমরা কয়েক জন মিলে একটা বাস ঠিক করেছি। বাসের ভাড়া ও খাওয়ার খরচ মিলিয়ে মোট ৩০০ ডলারের ধাক্কা। কী ভাবে যে এই অর্থ জোগাড় করেছি! কাল ভোর ৫টায় বাস ছাড়বে। তাতে পোর্ট সুদান পর্যন্ত পৌঁছব। যে সংস্থায় চাকরি করতাম, তাদের এজেন্টের কাছে আমার পাসপোর্ট জমা। ফিরে পাওয়ার আশা কার্যত নেই। ফলে পোর্ট সুদানে পৌঁছেও কী হবে কে জানে! কয়েকটা দিন থাকতে হলে খরচ আরও বাড়বে। দূতাবাস আশ্বাস দিয়েছে, যা খরচ হবে সব দিয়ে দেবে। কিন্তু কী ভাবে? জানতে চাইলেও কোনও জবাব মেলেনি।

শুনলাম, সুদানের ‘ন্যাশনাল পাবলিক ল্যাবরেটরিতে’ হামলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কবার্তা জারি করে জানিয়েছে, এর থেকে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তবে যুযুধান দু’শিবিরের মধ্যে কারা এমনটা করেছে, তা স্পষ্ট নয়।

অপারেশন কাবেরীর আওতায় প্রথম দফায় যে ৫০০ জন ভারতীয়কে পোর্ট সুদানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ২৭৮ জন রণতরী আইএনএস সুমেধায় চেপে জেড্ডায় রওনা দিয়েছে। সেখান থেকে দেশে ফেরানো হবে তাঁদের। আমরা যে কবে বাড়ি পৌঁছব!

অনুলিখন: স্বর্ণাভ দেব

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sudan clash Sudan Indian Navy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE