Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ইরানে কাল কঠিন পরীক্ষা মধ্যপন্থার

দু’রাত পরেই ভোট ইরানে। মধ্যপন্থী হাসান রুহানি কিংবা কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রইসি— এই দু’জনের মধ্যে এক জনকে বেছে নেবে ইরান। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৬৮ বছর বয়সি রুহানিকে এক দফা দেখে নিয়েছেন ইরানবাসী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
তেহরান শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

দু’রাত পরেই ভোট ইরানে। মধ্যপন্থী হাসান রুহানি কিংবা কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রইসি— এই দু’জনের মধ্যে এক জনকে বেছে নেবে ইরান। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৬৮ বছর বয়সি রুহানিকে এক দফা দেখে নিয়েছেন ইরানবাসী। তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট ক্ষোভ জমা হলেও সর্বশেষ জনমত সমীক্ষায় ৫৫ শতাংশের সমর্থন পেয়ে প্রধান প্রতিপক্ষ রইসির চেয়ে সামান্য হলেও এগিয়ে রয়েছেন রুহানি। যদিও বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ইরানে এই ধরনের সমীক্ষা মিলেছে খুব কমই।

দু’বছর আগে প্রেসিডেন্ট রুহানির আমলেই পরমাণু কর্মসুচিতে লাগাম পরানোর চুক্তি হয়েছে আমেরিকার সঙ্গে। ওই চুক্তিকে ইরানের মানুষ কী ভাবে দেখছেন তারও পরীক্ষা হবে শুক্রবার। রুহানির বিরোধীদের দাবি, ওই চুক্তিতে লাভের লাভ হয়নি কিছুই। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠলেও, মার্কিন প্রশাসনের হুমকি বন্ধ হয়নি। আসেনি লগ্নি। ব্যবসাপাতি বা কর্মসংস্থান— কোনওটিই বাড়েনি। মোদ্দা কথায় ইরানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে যে আশ্বাস রুহানি দিয়েছিলেন, বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। যা নিয়ে ভোটের মুখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে ইরানের নবীন প্রজন্ম। ৮ কোটি মানুষের এই দেশে ৬০%-এরই বয়স ৩০-এর নীচে। এদের বড় অংশ মুখর রুহানির সমালোচনায়। দেশের অার্থিক উন্নতি চেয়ে তাঁদের অনেকেই ঝুঁকে রইসির দিকে।

কে এই রইসি? কী বলছেন তিনি?

কট্টর রক্ষণশীলদের মুখ এই রইসি হলেন দেশের শীর্ষ চার ইসলামি বিচারপতির এক জন, ১৯৮৮ সালে যাঁরা কয়েক হাজার রাজনৈতিক বন্দির প্রাণদণ্ডের হুকুম দিয়েছিলেন। ইরানে ১৯৭৯-এর ইসলামি বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে চান ৫৬ বছর বয়সি এই নেতা। এবং তার জন্য কোনও বিদেশি শক্তির উপরে নির্ভর করার কোনও দরকারই নেই বলে তাঁর দাবি। ইরানের সামরিক বাহিনী ও তাদের সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘বাসিজ’ তাঁর পক্ষে। প্রভাবশালী দু’টি মৌলবি গোষ্ঠী ও কট্টরপন্থী মৌলবিদের সমর্থন রয়েছে তাঁর দিকে।

শুধু তা-ই নয়, ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানে যিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী ব্যক্তি, সেই আয়াতোল্লা খামেনেই-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাঁর। শীর্ষ ধর্মীয় নেতা খামেনেই যদি শেষ মুহূর্তেও পরোক্ষে রইসের অনুকূলে কোনও মন্তব্য করেন তবে তাঁর ভাগ্য খুলে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। খামেনেই অবশ্য প্রকাশ্যে কাউকে সমর্থন করার কথা বলেননি। তিনি শুধু সকলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে, দেশের গণতন্ত্র মজবুত হয়। এবং কোনও বিদেশি শক্তি এ দেশে নাক না গলাতে পারে।

অনেকেই মনে করছেন, গত বার বিপুল ভাবে জিতলেও শুক্রবার ভোট কম পড়লে রুহানির বিপদ। কারণ, জিততে হলে ৫০%-এর বেশি ভোট পেতে হবে। কেউই তা না পেলে, সব চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন যে দু’জন, তাঁদের নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে আগামী ২৬ মে। প্রথম দিকে তৃতীয় আর এক জনও ছিলেন এই নির্বাচনী দৌড়ে। তেহরানের মেয়র মহম্মদ বাগের গলিবাফ। গত সোমবার তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন রইসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই লড়াইয়ের শেষ লগ্নের এই প্রাপ্তি রইসের জেতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ভোটে জেতাই শেষ কথা নয়। এর পরে খামেনেই ও ধর্মীয় কট্টরপন্থী নেতাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও পেতে হবে।

ফলে ইরানে মধ্যপন্থা ফের কঠিন পরীক্ষার মুখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iran Iran's presidential election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE