Advertisement
০২ মে ২০২৪

মোদী-শি বৈঠকের আগে কাশ্মীর নিয়ে চিনের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া ভারতের

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং চিনের প্রেসিডেন্টের আলোচনা শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগেই কাশ্মীর নিয়ে কার্যত সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হল দুই দেশের মধ্যে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদী-শি বৈঠকে অবধারিত ভাবেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসবে। —ফাইল চিত্র।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদী-শি বৈঠকে অবধারিত ভাবেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসবে। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

প্রাচীন তামিল জনপদ মমল্লপুরমে পল্লব বংশের মন্দির-স্থাপত্যের নিদর্শন দেখতে পর্যটকদের ভিড় থাকে গোটা বছরই। তবে আগামী শুক্র-শনিবার কার্যত বন্ধ থাকবে এই শহর। কারণ তখন এখানেই নিসর্গ উপভোগ করতে করতে ‘ঘরোয়া আলোচনায়’ বসার কথা নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিংয়ের। আজ বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ১১-১২ অক্টোবর দু’দিনের সফরে ভারতে আসছেন চিনফিং।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং চিনের প্রেসিডেন্টের সেই আলোচনা শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগেই কাশ্মীর নিয়ে কার্যত সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হল দুই দেশের মধ্যে। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এখন বেজিং সফরে। আজ তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পরে চিনফিং বলেন, তিনি কাশ্মীর পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। পাকিস্তানের সমস্ত ‘প্রধান’ বিষয়ে তাদের পাশে আছে চিন। যৌথ বিবৃতিতেও বলা হয়, ‘কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ মেনে।’

চিনফিং এই কথা বলার পরেই তৎপর হয়ে ওঠে সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চিন ভারতের এই অবস্থান ভাল করেই জানে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনও দেশের মাথা গলানোর প্রয়োজন নেই।’’ চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং অবশ্য বলেছেন, ‘‘কাশ্মীর নিয়ে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট এবং সব সময়েই এক। তা হল— ভারত এবং পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে কাশ্মীর-সহ সমস্ত বিষয়ে কথা বলে পারস্পরিক বিশ্বাস দৃঢ় করুক।’’

শি চিনফিংয়ের সঙ্গে ইমরান খান। বুধবার বেজিংয়ে। ছবি: পিটিআই।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদী-শি বৈঠকে অবধারিত ভাবেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসবে। তবে শুধুই কাশ্মীরের ছায়ায় যাতে মমল্লপুরম ঢেকে না-যায়, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা দু’তরফেই থাকবে বলে বিদেশ মন্ত্রকের দাবি। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চিনের উহানে শি-মোদী আলোচনায় ডোকলামের স্নায়ুযুদ্ধ থেকে বেরোনোর প্রয়াস ছিল। এ বার মমল্লপুরম সংলাপে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি চিনা ‘ওবর’ প্রকল্প নিয়ে ভারতের উদ্বেগ, সীমান্ত-জট কাটানো, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের ঘাটতির মতো নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথার পক্ষপাতী দিল্লি।

যদিও আলোচনার ফল নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী নন কেন্দ্রীয় কর্তারা। চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের ঘাটতির দিকটি সাউথ ব্লকের দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা। উহান সংলাপে মোদীর অনুরোধে ভারত থেকে চাল এবং চিনি আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছিল বেজিং। তা-ও ঘাটতি কমেনি। এ বারের আলোচনার পরে এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে চিন কী পদক্ষেপ করে তা দেখার জন্য উদগ্রীব বাণিজ্যমহল। পাশাপাশি ভূ-অর্থনীতিতে চিন-আমেরিকা বাণিজ্য-যুদ্ধের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করবেন দুই নেতা। কথা হবে বাণিজ্যে সংরক্ষণশীল নীতি ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

সূত্রের বক্তব্য, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের প্রসঙ্গটি তুলে নয়াদিল্লির তীব্র আপত্তির কথা জানানো হবে আলোচনায়। সম্প্রতি মোদী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, চিনের মেগা যোগাযোগ প্রকল্প ‘ওবর’-এ ভারতের যোগদানের কোনও সম্ভাবনা নেই। এই প্রল্পের অধীন চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরটি গিয়েছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে, যাতে ভারতের আপত্তি। এই করিডরের জন্য যে পরিমাণ অর্থসাহায্য পাকিস্তানকে করা হচ্ছে, তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ সাউথ ব্লকের। পাকিস্তান কী ভাবে ভারত-বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্য করে, তা নিয়েও চিনফিংকে ফের জানাবেন মোদী।

চিন এবং ভারত একটি বহুপাক্ষিক করিডর তৈরি নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ-চিন-ভারত-মায়নমার (বিসিআইএম) করিডরটির মাধ্যমে চিনের কুনমিংয়ের সঙ্গে অন্য তিন দেশের যোগাযোগ তৈরির কথা। কিন্তু ভারত ‘ওবর’ নিয়ে বিরোধিতা বাড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গেই বিসিআইএম নিয়ে উৎসাহের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে চিনের পক্ষ থেকে। এই প্রকল্প দ্রুত রূপায়িত করার জন্য চিনফিংয়ের উপরে চাপ তৈরি করতে চান মোদী। ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত সুন উইদংয়ের কথায়, ‘‘মতান্তর মেটানোর ছক থেকে এগিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ইতিবাচক শক্তি দেওয়া, যৌথ উন্নয়ন এবং সহযোগিতা বাড়ানোর দিকে আমাদের যেতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE