Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Israel-USA

প্রতিনিধি দলের আমেরিকা সফরে না ক্ষুব্ধ নেতানিয়াহু-র

গত বছর অক্টোবর মাস থেকে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পরে এই প্রথম গাজ়ায় সংঘর্ষবিরতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে কোনও প্রস্তাব গৃহীত হল।

An image of Benjamin Netanyahu

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ০৫:৩২
Share: Save:

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব গ্রহণকে কেন্দ্র করে ইজ়রায়েল-আমেরিকা দ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে গাজ়ায় অবিলম্বে ‘সংঘর্ষবিরতি’র প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেখানে ভোটদান থেকে বিরত ছিল আমেরিকা। ওই প্রস্তাবে ওয়াশিংটনের প্রতিনিধি ‘ভিটো’ না দেওয়ায় বাইডেন প্রশাসনের উপরে রীতিমতো চটেছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এতটাই যে, তাঁর দেশের এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের আমেরিকা সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

গত বছর অক্টোবর মাস থেকে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পরে এই প্রথম গাজ়ায় সংঘর্ষবিরতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে কোনও প্রস্তাব গৃহীত হল। ঐকমত্যের অভাবে এর আগে গাজ়ায় সংঘর্ষবিরতি নিয়ে কোনও প্রস্তাব গ্রহণই করা যায়নি। গত বছরের একেবারে শেষের দিকে এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হলেও আমেরিকার আপত্তিতেই সেখানে ‘সংঘর্ষবিরতি’ শব্দটি রাখা হয়নি। এত দিন ইজ়রায়েল তাদের হামাস-বিরোধী অভিযানে আমেরিকাকে সর্বোতভাবে পাশে পেয়েছে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বারবার গাজ়ায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে আমেরিকার শীর্ষ সরকারি কর্তাব্যক্তিদের। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বারবার গাজ়ায় সংঘর্ষবিরতির পক্ষে সওয়াল করেছেন। বস্তুত, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজ়ায় আমেরিকান ত্রাণ পৌঁছনোর ক্ষেত্রে ইজ়রায়েলের অনীহা নিয়ে কিছুটা ক্ষুব্ধই ছিল ওয়াশিংটন। যদিও প্রকাশ্যে এ নিয়ে কাউকে বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি।

তবে গত কাল নিরাপত্তা পরিষদে ওই প্রস্তাব গ্রহণের পরেই নেতানিয়াহুর দফতর থেকে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। আমেরিকা কেন সেই ভোটদান থেকে বিরত ছিল, তা নিয়ে স্পষ্টতই ক্ষোভ ঝরে পড়েছে ইজ়রায়েলি সরকারের সেই বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধ শুরুর দিন থেকে নিরাপত্তা পরিষদে আমেরিকা যে অবস্থান নিয়ে এসেছিল, তা থেকে সম্পূর্ণ সরে এসেছে তারা। রাষ্ট্রপুঞ্জে আজ আমেরিকা তাদের নিজেদের নীতিকেই অস্বীকার করল। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্থির করেছেন, এই প্রতিনিধি দল ইজ়রায়েলেই থাকবে’।

ইজ়রায়েলের ওই প্রতিনিধি দলের খুব শীঘ্রই আমেরিকা সফরের কথা ছিল। মূলত গাজ়ার দক্ষিণে রাফা সীমান্ত এলাকায় ইজ়রায়েলের পরবর্তী অভিযান-কৌশল নিয়ে আমেরিকান প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল ওই দলের। গাজ়া ভূখণ্ড থেকে সরতে সরতে রাফায় এখন কয়েক লক্ষ প্যালেস্টাইনি আশ্রয় নিয়েছেন। ইজ়রায়েলের দাবি, ওই আশ্রয়প্রার্থীদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য হামাস জঙ্গিরাও এখন রাফায় চলে গিয়েছে।

নেতানিয়াহু আচমকা এই সফর বাতিল করায় বাইডেন প্রশাসন বিভ্রান্ত বলে হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কার্বি এই সফর বাতিলের পরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, আমেরিকার ইজ়রায়েল নীতি আগের মতোই আছে। তাঁরা তাঁদের নীতি থেকে আদৌ সরে আসেননি। আমেরিকার ভোটদান থেকে বিরত থাকা নিয়ে আমেরিকান বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ব্যাখ্যা, ‘ওই প্রস্তাবের মধ্যে এমন কিছু জিনিস রয়েছে, যেগুলি আগে থেকেই সমর্থন করে এসেছে আমেরিকা। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমরা কোনও ভাবেই আমাদের নীতি থেকে সরে আসিনি। প্রকৃতপক্ষে নিঃশর্তে হামাসের হাতে সব বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পক্ষেও আমরা সওয়াল করেছি’। তবে আমেরিকা মুখে তাদের নীতিতে স্থির থাকার কথা বললেও ওই প্রস্তাবে ‘ভিটো’ না দেওয়াকে ঘুরিয়ে প্যালেস্টাইনি নাগরিকদের পক্ষে সওয়াল বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। ইজ়রায়েলের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী স্লোমো বেন আভি যেমন প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘‘দুই বন্ধু দেশের মধ্যে এই চিড়ের ফল ভুগতে হবে ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE