টহলে সেনারা। ছবি: রয়টার্স
সাঁড়াশি আক্রমণ ছিলই। আইএস-কে এ বার ভাতে মারার তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গেল মসুলে।
শহরের উত্তর, দক্ষিণ আর পূর্ব প্রান্ত ইতিমধ্যেই ঘিরে রেখেছে ইরাকের সরকারি সেনা ও কুর্দ পেশমের্গা বাহিনী। এ বার পশ্চিম মসুলের দিক থেকেও জঙ্গিদের কোণঠাসা করতে চাইছে ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া আধা-সামরিক বাহিনী। অস্ত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ জোগাড়ে সিরিয়ার সঙ্গে জঙ্গিদের শেষ ‘সাপ্লাই রুট’ ধ্বংসেও নেমেছে তারা।
ফের তাই নতুন করে যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গেল সিরীয় শহর রাকার সঙ্গে তাল আফর শহরের সংযোগকারী রাস্তায়। ইরাকি সেনা অস্বীকার করলেও, মসুল থেকে ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমের এই তাল আফর শহর এখনও জঙ্গিদের কব্জায়। সূত্রের খবর, রাকা থেকে গত কালও ট্রাক-বোঝাই করে ফল ও অন্যান্য রসদ ঢুকেছে এখানকার জঙ্গি ঘাঁটিতে। কিন্তু সোমবার থেকেই বদলে গিয়েছে রাস্তার চেহারা। স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তা জুড়ে এখন শুধুই জ্বলন্ত ট্রাকের মিছিল। এলাকা দখলের লড়াইয়ে ঠিক এতটাই মরিয়া শিয়া বাহিনী।
বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ আল-আসাদি আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। দেখি ওরা (আইএস) কী ভাবে মাটি কামড়ে পড়ে থাকে!’’ বাহিনীর দাবি, এরই মধ্যে শহরের সেনা-বিমানঘাঁটির দখল নিয়েছে তারা। শহর লাগোয়া অন্তত ১৭টি গ্রাম থেকেও হটানো গিয়েছে জঙ্গিদের।
এ বার? জঙ্গিদের তরফে পাল্টা জবাবের আশঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন স্থানীয়রা। যুদ্ধের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাঁরাই ভুগছেন সব চেয়ে বেশি। প্রাণের মায়ায় ভিটে ছাড়তে চাইছেন হাজারে-হাজারে। কিন্তু আইএস পালাতে দিচ্ছে না। এ দিকে আবার জঙ্গি নিধনের নামে শিয়া বাহিনী তাল আফরের সাধারণ সুন্নি নাগরিকদেরও নিশানা করছে বলে অভিযোগ। যার একটা বড় অংশ আবার জন্মসূত্রে তুরস্কের। সম্প্রতি এ নিয়েই সরব হয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান। বিনা প্ররোচনায় সন্ত্রাস তৈরি হলে শিয়া মিলিশিয়াদের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ইরাক যদিও সেই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হায়দর-আল-আবাদি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোনও এলাকাতেই দীর্ঘদিন এক বাহিনী রাখা হবে না। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন দেখা দিলে, তাল আফরে ইরাকি সেনা নিয়োগ করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
জঙ্গিদের হাত থেকে মসুল পুনর্দখলের অভিযান শুরু হয়েছিল ১৭ অক্টোবর। ইরাকি সেনা ও কুর্দ বাহিনীকে এখনও সমর্থন দিয়ে চলেছে মার্কিন সেনা জোট। অক্টোবরের শেষে আবার যুদ্ধে যোগ দিয়েছে শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী। এই সাঁড়াশি চাপ যে বেশি দিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না বুঝতে পারছে জঙ্গিরা। তাই শেষ কামড় দিতে মরিয়া তারাও। এর আগে রামাদির দখল খুইয়েছে আইএস। সে ভাবে দেখতে গেলে ইরাকে এই মসুলই তাদের শেষ শক্ত ঘাঁটি। দেশ-বিদেশের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন তাই আশঙ্কা করছে, আইএসের পাল্টা জবাবে এ বার লাশে-লাশে ছয়লাপ হবে মসুল, আল তাফর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy