Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ওলির কথা শুনে ক্ষুব্ধ দিল্লি, শীর্ষ বৈঠকে ছায়া চিনের

ভারতের মাটিতে পা দেওয়ার আগেই পরিশীলিতভাবে নয়াদিল্লিকে আক্রমণ করেছেন ওলি, একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে। জানিয়েছেন, ওবর প্রকল্পে যোগ দিলে ঋণের ফাঁদে পড়ে যাবে নেপাল —এটা একান্তভাবেই ভারতের প্রচার।

অতিথি: নয়াদিল্লিতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি। ছবি: এএফপি।

অতিথি: নয়াদিল্লিতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব সংবাদাদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪২
Share: Save:

পারস্পরিক কড়া বার্তার মাধ্যমে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির তিনদিনের ভারত সফর শুরু হল আজ। মাঝখানে রয়ে গেল বেজিং-এর অদৃশ্য উপস্থিতি।

ভারতের মাটিতে পা দেওয়ার আগেই পরিশীলিতভাবে নয়াদিল্লিকে আক্রমণ করেছেন ওলি, একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে। জানিয়েছেন, ওবর প্রকল্পে যোগ দিলে ঋণের ফাঁদে পড়ে যাবে নেপাল —এটা একান্তভাবেই ভারতের প্রচার। চিন-ভারত সংঘাতের জেরেই ভারত এমন প্রচার করছে, এ কথাও বলতে ছাড়েননি তিনি। ওলি বলেছেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেও তো সমস্যা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান, ভারত সম্পর্কে যে ভাষা ব্যবহার করে, কই, আমরা তো তা করি না!’’

বিষয়টি নিয়ে উষ্মা জমা হয়েছে সাউথ ব্লকে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, তারই জেরে আজ নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে যাননি দিল্লি বিমানবন্দরে, পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে। আর সন্ধ্যায় ওলিকে মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, কাঠমান্ডুর পরিকাঠামো গড়ার কাজে ভারত পাশে থাকতে চায় অবশ্যই। কিন্তু নেপাল বাঁধ নির্মাণের জন্য শুধুমাত্র চিনকেই বরাত দিলে সে দেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে। ওলি-ও সাউথ ব্লককে জানিয়েছেন, খোলা সীমান্তের সুযোগ নিয়ে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত নাক গলালে তা মেনে নেওয়া হবে না।

নেপালের প্রধানমন্ত্রীর চিন-প্রীতি ভারতের পক্ষে আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে ঘরোয়াভাবে জানাচ্ছে বিদেশমন্ত্রকের একটি অংশ। গত নভেম্বরে ১২০০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত একটি চিনা সংস্থাকে দিয়েও দুর্নীতির কারণে পরে তা বাতিল করে দেয় নেপাল। কিন্তু ওলি ঘোষণা করেছেন, প্রকল্পটি ফের সেই চিনা সংস্থাকে দেওয়ার কথাই ভাবছেন তাঁরা। নেপালে উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় ক্রেতা ভারত। বিদেশমন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘কাঠমান্ডু নিশ্চয় আশা করতে পারে না, আমরা চিনা প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ কিনব! চিনকে দিয়ে ওরা বাঁধ বানাতে চাইলে বানাক, চিনারাই সেই বিদ্যুৎ কিনে নেবে।’’

আজ মোদীর সঙ্গে বৈঠকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন প্রকল্পের থেকেও ভারতের সঙ্গে পুরনো চুক্তিগুলির বাস্তবায়নে তিনি বেশি আগ্রহী। ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যঘাটতির প্রসঙ্গও তুলেছেন তিনি। প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ওলি বলেছেন, ‘‘পঞ্চেশ্বর এবং মহাকালী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দু’টি সই হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ২২ বছর কেটে গেল। আমার তখন বয়স ছিল অনেক কম। আমি বুড়ো হয়ে গেলাম কিন্তু এখনও প্রকল্প বাস্তবায়িত হল না! সংস্কৃত শ্লোকে বলা হয়, যদি তুমি কিছু করতে চাও এবং নির্দিষ্ট সময়ে তা না করতে পার, তাহলে সেই কাজের গুরুত্ব থাকে না।’’

ভারতের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই চিনের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ওবর-এ সামিল হয়েছে নেপাল। ভারতে আসার আগে সেই প্রকল্পের প্রশংসাও করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের অন্তর্গত চিন-পাকিস্তান আর্থিক করিডর নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কারণ ওলিকে জানিয়েছেন মোদী। আর চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে ওলির বক্তব্য, ‘‘দু’টি দেশই (ভারত এবং চিন) আমাদের প্রতিবেশী। দু’দেশের কাছ থেকেই আমাদের সাহায্য প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE