Advertisement
০৭ মে ২০২৪

সিরিয়ায় সঙ্কট, জলের অভাবে ধুঁকছে ২০ লক্ষ

ত্রাণের আশা প্রায় শেষ। জলের জোগানটুকুও বন্ধ হয়ে গেল আলেপ্পোয়। বিদ্রোহীদের দখলে থাকা এই শহরের অন্তত ২০ লক্ষ মানুষ পানীয় জলের অভাবে ধুঁকছে বলে আজ জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

লাগাতার বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত আলেপ্পো। শনিবার। ছবি: এপি।

লাগাতার বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত আলেপ্পো। শনিবার। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
আলেপ্পো শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪০
Share: Save:

ত্রাণের আশা প্রায় শেষ। জলের জোগানটুকুও বন্ধ হয়ে গেল আলেপ্পোয়। বিদ্রোহীদের দখলে থাকা এই শহরের অন্তত ২০ লক্ষ মানুষ পানীয় জলের অভাবে ধুঁকছে বলে আজ জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জলবাহিত রোগের সম্ভাবনাও। তাই দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি ছাড়া সিরিয়াকে কোনও ভাবেই বাঁচানো সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলের একটা বড় অংশের।

সূত্রের খবর, মেরামতির কাজ চলছিল শহরের সব চেয়ে বড় পাম্পিং স্টেশন বাব আল-নয়রাবে। বৃহস্পতিবার লাগাতার বোমাবর্ষণে সেটির এখন বেহাল দশা। পাশেই অবশ্য সুলেমান আল-হালাবি পাম্পিং স্টেশন। কিন্তু সরকার-বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করতে সেটিও বন্ধ বলে অভিযোগ।

তা হলে উপায়! স্থানীয়দের দাবি, শিশুরাও আজকাল কুয়োর জলই খাচ্ছে। অথচ সেই জল কোনও ভাবেই নিরাপদ নয়। রোজকার বিস্ফোরণে ক্রমশ দূষণ বাড়ছে সেখানে। কপালে তাই চিন্তার ভাঁজ সিরিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিসেফ কর্তা হালা সিঙ্গারের। তিনি বলেন, ‘‘এই অবস্থায় বিকল পাম্পিং স্টেশনের মেরামতি করতেই হবে। একই সঙ্গে সুলেমান আল-হালাবি পাম্পিং স্টেশনটিও চালু করতে হবে।’’

যদিও আশার আলো সে ভাবে চোখে পড়ছে না। এক সপ্তাহ কোনও ভাবে টিকে থাকার পরে গত সোমবারই ভেস্তে গিয়েছে যুদ্ধবিরতি। আজও আলেপ্পো থেকে সিরীয় এবং রুশ বাহিনীর একাধিক বিমান হামলার খবর মিলেছে। দিনের শুরুতেই প্রাণ গিয়েছে অন্তত ২৫ জনের। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে নেমে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় ‘হোয়াইট হেলমেটস’ কর্মীরাও। লাগাতার হামলার রেশ পড়েছে তাদেরও একাধিক আস্তানায়। সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘গোটা আলেপ্পো পূর্ব প্রদেশের জন্য আমাদের হাতে রয়েছে আর মাত্র দু’টো দমকলের ইঞ্জিন। অ্যাম্বুল্যান্স কিছু রয়েছে বটে, কিন্তু তেল কোথায়!’’ এ দিকে আলোও নেই শহরের বেশির ভাগ রাস্তায়।

গত কালই আলেপ্পো শহরটিকে সম্পূর্ণ ভাবে বিদ্রোহীদের দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে দামাস্কাস। তার জেরেই আজ সকালের এই হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, গত কালও একাধিক হামলায় প্রাণ গিয়েছে পাঁচ শিশু-সহ অন্তত ৪৭ জনের। একটার পর একটা বিস্ফোরণে কেঁপে কেঁপে উঠছে আলেপ্পোর শিশুরা। বড়রা প্রাণপণে তাদের আগলে রাখার চেষ্টা করছেন।

আকাশ জুড়ে যুদ্ধবিমানের দাপাদাপিতে অবশ্য নিজেরাও তেমন ভরসা পাচ্ছেন না।

কূটনৈতিক স্তরে এর সমাধান পেতে রাশিয়া ফের আমেরিকাকেই পাশে চাইছে। রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লেভেরভ গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বলেন, ‘‘সিরিয়াকে বাঁচাতে এই মুহূর্তে আমাদের একজোট হওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ খোলা নেই।’’ তবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় আমেরিকার উপরেই যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার দায় চাপিয়েছেন তিনি। যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ঠিক হয়েছিল, ইসলামিক স্টেট এবং আল-নুসরা জঙ্গিদের দমনে একটি যৌথ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে ওয়াশিংটন ও মস্কো। সিরিয়ার সরকার-বিরোধী গোষ্ঠীদের নির্দিষ্ট কয়েকটি ঘাঁটিতে সামরিক অভিযান বন্ধেও সম্মত হয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু আমেরিকা সেই শর্ত মানেনি বলে অভিযোগ। রাশিয়াকে পাল্টা দোষারোপ করে গিয়েছে ওয়াশিংটনও। গৃহযুদ্ধের পাশাপাশি, এখন এই যুদ্ধেরও শেষ দেখতে চাইছে সিরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lack of drinking water Syria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE