
ছবি: রয়টার্স।
ছ’জন নয়। ইরানের মোট ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞ নিহত হয়েছেন ইজ়রায়েলি হামলায়। সংঘর্ষের আবহে বিবৃতি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে ইজ়রায়েল। দুপুরেই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের যে ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত, তাঁরা হলেন— নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ ফেরেদুন আব্বাসি, আহমেদ রেজ়া জ়োলফাঘরি দোরিয়ানি, পদার্থবিদ্যার বিশেষজ্ঞ মহম্মদ মেহদি তেহরানচি, আমির হাসান ফাখাহি, মনসুর আসগারি, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিশেষজ্ঞ আকবর মোতালেবি জ়াদেহ, মেটেরিয়াল্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিশেষজ্ঞ সইদ বর্জি, রিয়্যাক্টর ফিজ়িক্সের বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলহামিদ মিনৌশেহর এবং মেকানিক্সের বিশেষজ্ঞ বখৌয়েই কাতিরিমি।
ইরানের উপর ইজ়রায়েলি হানার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ৯ দেশের মিলিত মঞ্চ সাংহাই কোঅপারেশেন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও)। এসসিও-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অসামরিক নিশানায় এই ধরনের আক্রমণের ফলে অনেক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের পরিপন্থী। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই হামলা ইরানের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। এসসিও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভারত এবং ইরান উভয়েই রয়েছে। তবে এসসিও-র বিবৃতির থেকে দূরত্ব রেখে পৃথক বিবৃতি প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক এও জানিয়ে দিয়েছে, এসসিও-র বিবৃতি নিয়ে কোনও আলোচনায় ভারত যোগ দেয়নি। ফলে, এ বিষয়ে ভারত পূর্ব-অবস্থানেই অনড় থাকবে। ভারতের বিবৃতিতে ইজ়রায়েলি হানার নিন্দা করে কোনও মন্তব্যও করা হয়নি।
গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি ইজ়রায়েলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিষ্ক্রিয় করল ইরানের সেনা। এমনটাই জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘তেহরান টাইম্স’। শুধু তা-ই নয়, ইরানের সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার পশ্চিম ইরানের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় ইজ়রায়েলি এক পাইলটকে আটক করা হয়েছে। বাকি দু’টি বিমানের পাইলটদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছেন। অন্যজনও ইরানি বাহিনীর হাতে বন্দি বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরানের বিরুদ্ধে আরও জোরালো আঘাত হানার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখল ইজ়রায়েল! ইরান হামলা না থামালে তাদের রাজধানী তেহরান জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন সে দেশের প্রতিরক্ষমন্ত্রী ইজ়রায়েল কাট্জ়। তাঁর বক্তব্য, ইরান যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যেতে থাকে, তবে তেহরানবাসীকে এর ‘মাশুল গুণতে হবে’। ইরানের রাজধানী তেহরানকে জ্বালিয়েপুড়িয়ে খাক করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ইজ়রায়েলি সেনার ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’-এর পাল্টা ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’ চালাচ্ছে ইরানের সামরিকবাহিনী। ইরানের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘তেহরান টাইম্স’-এ দাবি করা হয়েছে, ইজ়রায়েলের ১৫০টি নিশানায় আঘাত হেনেছে ইরানের সামরিক বাহিনী। এরই মধ্যে ইরানি সেনার ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস’ (আইআরজিসি)-এর নতুন কমান্ডার জেনারেল আহমেদ ভাহিদি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যত ক্ষণ প্রয়োজন তত ক্ষণ ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’ জারি থাকবে। ইরানি সংবাদ সংস্থা ‘ফার্স’ও সেনা আধিকারিক সূত্রে একই দাবি করেছে। ইরানি সামরিকবাহিনীর সূত্রে তারা জানিয়েছে, শুক্রবার রাতের ‘সীমিত জবাবে’র মধ্যে এই সংঘর্ষ থেমে থাকবে না। ইরানের হামলা অব্যাহত থাকবে এবং ইরানি বাহিনীর এই জবাব হামলাকারীদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক হবে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে ইজ়রায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শহর তেল আভিভের দক্ষিণে। সেখানকার তিনটি জনপদ দ্য কিরইয়া, রমাত গান এবং রিশন লেজ়িয়নে গিয়ে পড়েছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৯ জন।
এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলি হানায় ইরানে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩২০ জন। শনিবার এই তথ্য জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ইরানের দূত।
আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফার পরমাণু বৈঠক ভেস্তেই গেল। শনিবার তেহরান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল, সংঘাতের আবহে আলোচনায় বসা যায় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনা ‘অর্থহীন’ বলেও দাবি করেছে ইরান। সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্য আমেরিকাকে দায়ী করেছে তারা।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে ইরানের আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা তানসিমের একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। ইরানের ওই সংবাদ সংস্থা সে দেশের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাইকে উদ্ধৃত করেছে। প্রতিবেদনে ইরানের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র বলেছেন, “এক পক্ষ (আমেরিকা) এমন আচরণ করছে যে, আলোচনা অর্থহীন হয়ে পড়েছে। আপনি একই সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে চান, আবার ইজ়রায়েলকে ইরানের ভূখণ্ডে আক্রমণ করার সুযোগ করে দিতে চান। দুটো এক সঙ্গে হতে পারে না।”
শুক্রবার তেহরানে ইজ়রায়েলের হামলার পরেই ইরান আমেরিকার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল। দাবি করেছিল যে, হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইজ়রায়েলকে সমর্থন করছে আমেরিকা। আমেরিকা অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের আবহে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে পরমাণু বৈঠক আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য প্রথমে জানিয়েছিলেন, তিনি আশাবাদী। কিন্তু ইরান ওই বৈঠকে আর যোগ দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। পরে অবশ্য ট্রাম্প ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি হামলা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কূটনীতি এবং আলোচনার জন্য ইরানকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। তেহরানকে আমি ৬০ দিনের চূড়ান্ত সময় দিয়েছিলাম। আজ ৬১তম দিন।’’
তেহরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সে দেশের উত্তর-পশ্চিমে সালমাস সীমান্তে বেশ কয়েকটি ইজ়রায়েলি ড্রোনকে গুলি করে নামিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী।
শনিবার ফের ইজ়রায়েলের উত্তরাংশকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালাল ইরান। ইরানের রাজধানী তেহরান লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলও।
নয়া ক্ষেপনাস্ত্র হানার আশঙ্কায় উত্তর ইজ়রায়েলের বিভিন্ন প্রান্তে শনিবার সকাল থেকেই বেজে উঠছে এয়ার সাইরেন। ইজ়রায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতেও এয়ার সাইরেনের শব্দ শোনা গিয়েছে। স্থানীয়দের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইজ়রায়েল প্রশাসন।
শুক্রবার ইরানের বৃহত্তম পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে শুক্রবারই বিমানহানা চালায় ইজ়রায়েল। সেই হানায় কেন্দ্রটির ভিতরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বের পরমাণু সংক্রান্ত নজরদার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)। শুক্রবার সংস্থাটির ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল গ্রসি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “ইরানের নাতান্জ পরমাণু কেন্দ্রের ভিতরে তেজস্ক্রিয় এবং রাসায়নিক দূষণ ছড়িয়েছে।” তবে কেন্দ্রটির বাইরে এই বিকিরণের কোনও প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন তিনি। এ-ও জানিয়েছেন যে, নির্দিষ্ট নিরাপত্তাবিধি মেনে চললে অভ্যন্তরীণ বিকিরণ বা দূষণও সামাল দেওয়া সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy